শেখ হাসিনার হাতে ছাত্রলীগের শীর্ষ ৮ নেতার খতিয়ান!

- ২৯-Apr-২০১৯ ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ
উৎপল দাস
অনেক স্বপ্ন নিয়ে বহুল আলোচিত সিন্ডিকেটের বাইরে এসে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাই করেছিলেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার খোদ ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আশার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। তাদের কারণেই অন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ইউনিটের নেতারাও নিজেরদের মতো সাংগঠনিক কাজ করতে পারছেন না। গত ৩১ জুলাই রাতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সনজিত চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১ বছরের জন্য কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া মো. ইব্রাহিম হোসেনকে সভাপতি ও সাইদুর রহমান হৃদয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং মেহেদী হাসানকে সভাপতি ও জোবায়ের আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।
কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই কয়েকধাপে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য কেন্দ্রের শীর্ষ দুই নেতাকে বলা হলেও তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সতর্কও করেছিলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগে তার মনোনীত ৮ নেতার বিষয়ে বিশদ খোঁজ খবর নেয়ার জন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়িত্ব দেন। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেছে। মাঠ পর্যায় থেকে নেতাদের ব্যক্তিগত জীবন, কর্মীদের সঙ্গে ব্যবহার, সাংগঠনিক দক্ষতা, টাকা আয়ের জন্য কি কি পথ বেছে নিচ্ছেন এমনকি তাদের ফোনের কথোপকথন পর্যন্ত রেকর্ড করেছে বিশ্লেষণ ধর্মী একটি প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে।
এই প্রতিবেদন তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ভোরের পাতাকে বিষয়গুলো নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের শীর্ষ ৮ নেতার মধ্যে দুইজনের অবস্থা বেশ ভালো রয়েছে। তারা হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তবে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনকে সবচে বেশি রেটিং পয়েন্ট দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। ৭৭ শতাংশ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সাদ্দাম সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। কর্মীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, তাদের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে সামাজিক, শিক্ষামূলক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি গণমাধ্যমে তার সরব উপস্থিতির কারণেই সাদ্দাম হোসেন সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এরপরই ৬৯ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তিনি একরোখা হয়ে নিজে যে সিদ্ধান্ত নেন; সেটিতে অটল থাকেন। তবে সেটা সংগঠনের স্বার্থে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ব্যাপক কর্মী সংখ্যা থাকায় তিনি নির্ভার হয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তবে তাকে আগামী দিনের রাজনীতিতে আরো সরব হতে হবে বলেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পিছনে ফেলে তালিকার ৩ নম্বরে উঠে এসেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন। ৬১ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করা ইব্রাহিমের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সব সময়ই সাবেক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি তার কাছে উড়ে এসে জুড়ে বসে নেতা হতে চাইলে কেউই পাত্তা পাচ্ছেন না। যারা মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের প্রশ্নে আপোষহীন তাদের নিয়েই রাজনীতি করছেন।
তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তার অর্জিত পয়েন্ট ৬০। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রাজনীতি করেন। তবে তার আশে পাশে যারা তার সঙ্গে চলাফেরা করেন এবং যাদের সঙ্গে বুদ্ধি পরামর্শ করেন তাদের বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ক্লিন ইমেজ ধরে রাখার জন্য শোভনকে আরো বেশি সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে কর্মীবান্ধব হয়ে ছাত্রলীগের নিয়মিত যেসব অনুষ্ঠান হওয়ার কথা সেসব বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা তাকেই নিতে হবে।
রেটিং পয়েন্ট ৫৪ নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান। অনেকটা নির্ভেজাল রাজনীতি করেন তিনি। তবে তাকে আরো বেশি সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
৫১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী। তিনি নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকার পরও ছাত্রলীগের পজিটিভ ইমেজ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে তার আশে পাশেও বিতর্কিত অনেকেই অবস্থান করছেন যাদের কথায় তিনি মাঝে মাঝে প্রভাবিত হন। এ বিষয়টিতে তাকে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
তালিকায় সপ্তম ও অষ্টম স্থানে যথাক্রমে রয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়। তাদের অর্জিত পয়েন্ট যথাক্রমে ৪৮ এবং ৪৮। তাদেরকে আরো সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ প্রতিবেদনে নেতাদের অর্থ আয়ের উৎস এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। ফলে বিষয়গুলো প্রতিবেদককে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাতে অপরাগতা জানিয়েছেন।