ছাত্রলীগের বিতর্কিত ১৭ জনের মধ্যে ৪ জন স্বপদে বহাল থাকছেন!

- ১৭-মে-২০১৯ ০১:৫৮ অপরাহ্ন
উৎপল দাস
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত ১১ মে। গত কমিটির শীর্ষ দুই নেতার (সোহাগ-জাকির) বিরোধিতার কারণে অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই বর্তমান কমিটির শীর্ষ দুই নেতাকে (শোভন-রাব্বানী) কমিটি প্রকাশের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনা। ৩০১ সদস্যের কমিটি প্রকাশের পর থেকেই আবারো আলোচনায় আসে ছাত্রলীগ। এবার বিতর্কিতদের জন্য চরম বিভ্রতকর অবস্থায় পড়েন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মধুর ক্যান্টিনে রক্তাক্ত সংঘর্ষও হয়। এরপর ভোরের পাতায় এ সংক্রান্ত কয়েকটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হলে বুধবার তিনি নিজে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানীকে ডেকে কমিটি থেকে বিতর্কিতদের অব্যাহতি দিয়ে যোগ্যদের পদে বসিয়ে কলংকমুক্ত ছাত্রলীগ গড়ার নির্দেশ দেন।
সে অনুযায়ী নীতি ও আদর্শ বিরোধী বিতর্কিত ১৭ জনের নাম প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। বুধবার রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। মূলত বিবাহিত, মাদকাসক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী নানা অভিযোগের ভিত্তিতে এ তালিকা করা হয়। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, আমি অভিযুক্তদের নাম ঘোষণা করছি। এই ১৭ জন হলেন—তানজীল ভুইয়া তানভীর (বয়স), আরেফিন সিদ্দিকি সুজন (মাদক সংশ্লিষ্টতা), সুরঞ্জন ঘোষ( বয়স), আতিকুর রহমান খান (মাদক সংশ্লিষ্টতা), বরকত হোসেন হাওলাদার (শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ), শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ( সংগঠনের নীতি বিরোধী কর্মকাণ্ড), মাহমুদুল হাসান তুষার (মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে চেতনা ধারণের অভিযোগ), আমিনুল ইসলাম বুলবুল (মামলা রয়েছে), আহসান হাবীব (চাকরি) ,সাদিক খান (বিবাহ), তৌফিক হাসান সাগর (পরিবারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ), সোহানী হাসান তিথি (বিবাহ), রুশি চৌধুরী (বিবাহ), মুনমুন নাহার বৈশাখী (বিবাহ) ও আফরিন লাবণী (বিবাহ)।
এদিকে, ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোনো এ্যাকশন নেয়া হয়নি। এরিমধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে প্রথমবারের মতো শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রর্ত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এ অনুষ্ঠানটি করতে গত ২ দিন ব্যস্ত সময় পার করেছেন শোভন-রাব্বানী। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদে বিষয়ে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের মধ্যে চারজন সহ-সভাপিতি পদ পাওয়া নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই চার সহ-সভাপতির নির্দোষ প্রমাণের সকল কাগজপত্র ভোরের পাতার হাতে এসেছে। যেগুলো বিশ্লেষণ করে যৌক্তিকভাবে দেখা গেছে, চার জনই ছাত্রলীগের জন্য আদর্শিক রাজনীতি করেন। এমনকি ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনার আদর্শের প্রশ্নের আপোসহীন। তাই শেখ হাসিনার অনুমতি স্বাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা সহ-সভাপতি পদে বহাল থাকার একটি সুযোগ পেতে পারেন বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ মহলের একটি সূত্র।
যে চারজন নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে এবং আদর্শিক কোনো সমস্যা নেই সেটি প্রমাণ করতে পেরেছেন তারা হচ্ছেন: তানজীল ভুইয়া তানভীর (বয়স), আমিনুল ইসলাম বুলবুল (মামলা) , মাহমুদুল হাসান তুষার (মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে চেতনা ধারণের অভিযোগ) এবং তৌফিক হাসান সাগর (পরিবারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ)।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে সহ সভাপতি তানজীল ভুইয়া তানভীর গঠনতন্ত্রের বয়স অনুযায়ী ২৮ বছর ৩৬৩ দিন বেশি হওয়ার কথা তার বয়স ২৯ ছাড়িয়েছে সম্মেলনের সময়ই। কিন্তু তাকে পদ দেয়ার পিছনে সংগঠনের প্রতি তার আনুগত্য এবং শেখ হাসিনার আদর্শের প্রশ্নের আপোসহীন থাকার বিষয়টি কাজ করেছে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও শোভনের আগে কমিটিতে আসার আগেই তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অনেক ভিত্তিহীন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে, শেখ হাসিনার জন্য জীবন উৎসর্গ করার মানসিকতার কারণেই তিনি টিকে যাবেন বলে মনে করেন ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
আরেক সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সে মামলা থেকে অব্যাহতিও তিনি পেয়েছেন। এরপরও একটি মহল এই ইস্যুটি নিয়ে তাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এসব যৌক্তিকতার তিনিও স্বপদে বহাল থাকবেন বলে জানিয়েছে গণভবনের একটি সূত্র। এছাড়া তাকে বঞ্চিত করেছিল সোহাগ-জাকির। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শেখ হাসিনার সৈনিক হিসাবে তিনিই ছিলেন অগ্রগামী ৮ জনের একজন।
এরপর মাহমুদুল হাসান তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে চেতনা ধারণের। কিন্তু এই তুষার সর্বশেষ কমিটিতে এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ধরণের সকল প্রমাণাদি তিনি ভোরের পাতার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন এবং সত্যের পক্ষে লেখার আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও একজন উপ সম্পাদকের কাছ থেকে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়াও হয়েছে। সেক্ষেত্রে তুষারও স্বপদে বহাল থাকবেন।
সর্বশেষ যাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে চেতনা ধারণের তিনি হচ্ছেন নতুন কমিটির সহ-সভাপতি তৌফিক হাসান সাগর। তার পিতা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এ্যাড. সোহরাব উদ্দিনকে রাজাকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা করেছে একটি মহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ভাইরাল হলে সাগর নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন কয়েকবার। এরপর ভোরের পাতার পক্ষ থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, আসলে বিষয়টি মিথ্যা। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গত নির্বাচনের আগেও করা হয়েছিল। সাগর পদ পাওয়ার পর সেই মহলটিই আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কেননা, একাত্তরের সময় এ্যাড.সোহরাব উদ্দিনের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। এছাড়া যে অভিযোগটি ওই মহলটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে করেছিল তা আদালত খারিজ করে দিয়েছে বহু বছর আগেই। এ সংক্রান্ত সকল তথ্য ও প্রমাণ ভোরের পাতার হাতে রয়েছে। ফলে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করে স্ব-পদে বহাল থাকছেন সাগর। এছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের পরিবারের সবাই ব্যাক্তিগতভাবে সাগরকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হিসাবেই যথেষ্ট স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে থাকেন।
তালিকায় বিতর্কিদের বাকি ১৩ জনের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে ভোরের পাতা। সেই তদন্তে এখনো শক্তিশালী প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু লিখতে রাজি নয় পত্রিকার কর্তৃপক্ষ। তবে সেক্ষেত্রে আগামী রোববারের মধ্যে বাকি ১৩ জন বিশেষ করে দুইজন সুন্দরী নারী সহ-সভাপতি যাদের বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে এবং অনৈতিক কোনো কিছুর বিনিময়ে কিভাবে তারা পদ ভাগিয়ে নিলেন, তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।