শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সোহাগ-জাকির!

- ১৯-মে-২০১৯ ০৬:০৬ পূর্বাহ্ণ
উৎপল দাস
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্রের নাম শেখ হাসিনা। সংগঠনটির সর্বেোচ্চ অভিভাবক হিসাবে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কে নেতা হবেন, না হবেন, কাকে কি করতে হবে; সব সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকেই নিতে হচ্ছে। সর্বশেষ বিতর্কিত ১৭ জনের তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। এখনো পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা আল্টিমেটামের পর সেখান থেকে কাউকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছাড়াও ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ১৭ জনের কারো বিরুদ্ধেই এখনো পর্যন্ত সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনে দপ্তর সেলে অভিযোগ করেননি। ফলে অভিযোগগুলো আমলেও নেয়া হয়নি।
তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসা বিতর্কিত ১৭ জনের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত ১৭ জনের মধ্যে ১২ জন নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি ৫ জন এখনো নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিতে পারেননি। এক্ষেত্রে আজই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে শোভন ও রাব্বানী বিতর্কিত ১৭ জনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সাংবাদিক সম্মেলন করে ব্যাখ্যা করার কথা রয়েছে। যদিও সংবাদ সম্মেলনের সময় এখনো ঠিক হয়নি।
এদিকে, ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর থেকেই পদবঞ্চিতদের পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু হয়। সেদিন সন্ধ্যায়ই মধুর ক্যান্টিন রক্তাক্ত হয়। দুইদিন পর প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও বিদ্রোহী পদবঞ্চিতদের পক্ষ থেকে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রলীগের কাছে কারো সম্পর্কে লিখিতভাবে অভিযোগ করেনি। উল্টো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই যারা গত কমিটি (সোহাগ-জাকির) তে ছিলেন তারা নোংরাভাবে বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাদের ব্যক্তিগতজীবন নিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা শুরু করে। সঠিক জায়গায় অভিযোগ না করে চরিত্রহননও করেছে। এক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বি এম লিপি আক্তার, জারিন দিয়া নামের দুইজন নারী নেত্রী। বিএম লিপি আক্তার লাইভ টকশো তে এসে গোলাম রাব্বানীর পুরোনো অতীত নিয়ে কথা তুলেছেন আর জারিন দিয়া তো রাব্বনী শোভনকে নারীদের প্রতি বিশেষ আসক্তির কথা জানিয়ে দিয়ে সারাদেশে ছাত্রলীগের ইমেজ নষ্ট করেছেন। শুধু মনমত পদ না পেয়ে বিএম লিপি আক্তার যার ব্যাক্তিজীবন সম্পর্কে ছাত্রলীগের প্রায় সবাই জানে, তার বিরুদ্ধে হলের সামনে দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায় থেকে শুরু করে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাক্তিগত অভিযোগগুলো ভোরের পাতার এ প্রতিবেদক জানেন। কিন্তু মানুষের চরিত্র হননের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে ব্যবহার করা হয় না বিধায় এ বিষয়ে কাউকে কিছুই বলেননি। এছাড়া জারিন দিয়া ফেসবুকে শোভন রাব্বানীকে নিয়ে সুন্দরী নারী নেত্রীদের নিয়ে যেভাবে কুৎসা রটিয়েছেন তার সঠিক প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। আইনের ছাত্র হিসাবে শোভন ও রাব্বানী উভয়ই বলেছেন, শুধু বিএম লিপি আর জারিন দিয়া নয়; যারাই ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুণ্ন করে মিথ্যাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমে মামলা করার সুযোগ রয়েছে। আমরা এখনই মামলায় যাচ্ছি না, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে বি এম লিপি আক্তারের ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করাও হতে পারে, অভিযোগ প্রমাণের পর। জারিন দিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানা গেছে। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে শনিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারী পদবঞ্চিত নেতারা মারধরের শিকার হয়েছেন।
বর্তমান নেতৃত্বের সমর্থকরা এই মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হামলায় ছয় নারীনেত্রীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার বিচার দাবি করে এবং কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে দিবাগত রাত ৩টা থেকে পদবঞ্চিতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন।
সকাল ৮টা পর্যন্ত সেখানে অনশন চলছিল। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ করলেও পদবঞ্চিতরা তাতে সাড়া দেননি।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, “আমি এ ব্যাপারে যা বলার আজকে পরে বলব।” হামলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “হামলাকারীদের বিচার করা হবে।”
গত ১৩ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর থেকে অভিযোগ, আপত্তি, বিক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। ওই দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে পদপ্রাপ্ত নেতাদের সমর্থকদের হাতে বঞ্চিতরা মারধরের শিকার হন। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, কমিটিতে অনেক অযোগ্য ও বিতর্কিতদের রাখা হয়েছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষ সংবাদ সম্মেলনও করে। সর্বশেষ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। যদিও তা কার্যকর করা হয়নি।
এর মধ্যেই শনিবার রাত ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ভেতরে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলতে যায় পদবঞ্চিত নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে শোভন-রাব্বানীর সমর্থকরাও অবস্থান করছিলেন। সেখানে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এরপরই পদবঞ্চিতরা ভিসি চত্বরে মানববন্ধন করেন। পরে তাঁরা টিএসসির সামনে রাজু ভাস্কর্যে এসে অনশন শুরু করেন। বৃষ্টির মধ্যেও তারা অনশনে ছিলেন।
এদিকে, ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নিয়ে নিয়ে কলকাঠি নাড়ছেন সংগঠনের সদ্য সাবেক হওয়া সভাপতি এম সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তাদের অনুসারীই পদ পাননি। এ কারণে শেখ হাসিনার মনোনীত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান না নিলেও সোহাগ-জাকির তাদের নিজস্ব কর্মী কয়েকজনকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি পদবঞ্চিতদের প্রতিনিধি দলের এক নেত্রীকে ১১ টা ৫৫ মিনিটে ফোন করেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। রাত সাড়ে ১০ টা থেকে তাদের জন্য টিএসসির মাঠে অপেক্ষায় থাকা শোভনকে ওই নারী নেত্রী যিনি উপ সম্পাদক পদ পেয়েছেন এবং ডাকসুর নেতা হওয়ার পরও জানান, আমরা এখন পরিবাগে আছি। সেখান থেকে আসছি। উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ দুই নেতার বাসা পরীবাগে পাশাপাশিই।
ভোরের পাতাকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএম লিপি আক্তারের নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দলটি সাড়ে ১২ টার দিকে টিএসসির মাঠে প্রবেশ করে। এসময় বিএম লিপি আক্তারের আক্রমণাত্নক মনোভাব নিয়ে প্রবেশ করার ফুটেজ পাওয়া গেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনিই ছাত্রলীগের একমাত্র নারী নেত্রী, যাকে কিছুই দেয়া হয়নি। সবচে বেশি ত্যাগী নেত্রীই তিনি। অনেকটা ক্যাডার বাহিনীর মতো মাঠে প্রবেশ করার পর সেখানে দীর্ঘক্ষণ শোভন রাব্বানীর সঙ্গে বিতর্কিতদের বিষয়ে আলোচনা হয়। তখন বিএম লিপি আক্তারের নেতৃত্বে যাওয়া প্রতিনিধি দলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তোমরা কেন লিখিত অভিযোগ দায়ের করো নাই? তখন কেউ কেউ শোভন রাব্বানীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন বিতকির্ত কমিটি করেছেন, আপনারাই বিতর্কিত; তাই কোনো অভিযোগ নেইনি। একপর্যায়ে বিতর্কিতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কেন এসব নোংরামি করা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিদ্রোহীরা উত্তেজিত হয়ে পরে। তখন শোভন রাব্বানী নয়, শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নানা বাজে মন্তব্য করে। একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাজে কথা বললে, শোভন রাব্বানীর নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে কিছুটা উত্তম মাধ্যম দেয় বিদ্রোহীদের। তখন শোভন ও রাব্বানী বিদ্রোহীদের বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই করেন তাদের নিজস্ব নেতাকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নেতাকর্মীরা তাদের আবেগের জায়গা শেখ হাসিনা, যিনি ছাত্রলীগের পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্র বলে বিশ্বাস করেন, সেখানে কোনো আপস না করে উত্তম মাধ্যম দিয়ে দেন।
কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগদিন পর্যন্ত সোহাগ জাকিরকে শোভন ও রাব্বানী বিশেষ অনুরোধ করলেও তারা নিজেদের করা ২৮১ সদস্যের কমিটি অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। তখন ভোরের পাতায় একটি সংবাদ প্রকাশের পরই শোভন রাব্বানীকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোভন রাব্বানীর করা ৩০১ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দিয়ে দেন। এরপর থেকেই শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেন সোহাগ-জাকির।