ইতিবাচক ধারায় ফিরছে ‘শেখ হাসিনার’ ছাত্রলীগ

- ২৩-মে-২০১৯ ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ
:: উৎপল দাস ::
সংগীত ভালোবাসেন না, গুণগুণ করে গান করেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। গুনে ধরা নষ্ট সমাজে নিজের অজান্তেই আমরা যারা মানুষ তারা সবাই গান শুনতে বা গাইতে ভালোবাসি। যে মানুষ গান ভালোবাসে না, সে মানুষ হাসতে হাসতে খুন করতে পারে। এটা চরমতম সত্য কথা। নিজ জেলা নরসিংদীর কৃতি সন্তানদের মধ্যে একজন হচ্ছেন বেশকিছু কালজয়ী গানের স্রষ্টা, ধ্রুপদী সংগীতের শিল্পী ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মাদ চৌধুরী। তার প্রথম এ্যালবামের নাম জীবনানন্দ। সেই এ্যালবামের একটি জনপ্রিয় গান বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী যারা শেখ হাসিনাকে সংগঠনের পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্র মনে করে তাদের কয়েকবার শোনা দরকার বলে মনে করি।
যে গানটি বিশেষ করে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রতিদিন একবার করে শুনতে পারেন। বাণী প্রধান এই গানটি হচ্ছে:
কিছু লোক পিছু কথা বলবেই
অপবাদ হবে অভিযোগ দেবে (২)
তবু ভালবাসার আলো জ্বলবেই।।
মালা যদি গড়তে হয়
ফুল ছিড়ে তবে আনতে হয় (২)
চোখ যত অন্ধ হোক
তবু ভাল লাগার ছবি দেখবেই।।
তীরে যদি পৌছতে হয়
ঢেউ ভেঙ্গে তবে আসতে হয়
প্রেম যত মন্দ হোক
তবু বেচে থাকার সুখে মরবেই।।
গানটির ইউটিউব লিংক হচ্ছে : https://www.youtube.com/watch?v=Bfhs_3h_Wlk
গান নিয়ে এত কথা বলার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমি সংগীত প্রিয় একজন মানুষ। ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর এই গানটি আজকের দিনে ছাত্রলীগের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক তা আমাদের কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
১৯৮৪ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে আজ অবধি, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীকার, স্বাধীনতা এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গৌরবের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা সংগঠনটির নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া এই সংগঠনটিকে নিয়ে নানামূখী বির্তক সাম্প্রতিককালে বরাবরই দেখা গেছে। ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী বিতর্কিত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেই তা নিয়ে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে পরিমাণ আলোচনা সমালোচার ঝড় উঠে তা দেখে সত্যিই চরমভাবে হতাশ করে আমাদের। কারণ ছাত্রলীগের রাজনীতি এখন ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়েছে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় যারা বঞ্চিত হন বা হয়েছেন তারা রক্ত দিয়ে, আন্দোলন সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করতেই পারেন। তবে সেটা হতে হবে ব্যাক্তিগত নোংরামির বাইরে গিয়ে। কিন্তু অতি সম্প্রতি আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পদবঞ্ছিতরা মধুর ক্যান্টিনে রক্তাক্ত হয়েছে তাদেরই সহযোদ্ধাদের হাতে। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়ে, বিতর্কিত ১৭ জন, অধিকাংশ বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে ৯৯ জন বিতর্কিতদের তালিকা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তারা সবাই ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির পদধারী। বিশেষ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরাসরি নির্বাচন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যের আদর্শিক প্রশ্নে কোনো ছাত্রলীগ কর্মী যারা প্রায় ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে এই দুই শীর্ষ নেতাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলেননি, তারাই পদবঞ্ছিত হয়ে ব্যাক্তিগত আক্রমণ করতে শুরু করে। শেখ হাসিনার মনোনীত শোভন-রাব্বানীর নামে যারা মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন তাদেরই মধ্যে দুই জন এমনভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসলেন তা কখনোই ছাত্রলীগের আদর্শিক কর্মী হিসাবে কাম্য হতে পারে না।
রোকেয়া কামাল হলের সাবেক সভাপতি, ২৯ বছর পর ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রলীগের প্যানেলের ক্যাফেটেরিয়া ও কমনরুম সম্পাদক, বর্তমান কমিটিতে উপ সম্পাদক হিসাবে ঠাঁই পাওয়া বি এম লিপি আক্তার এবং একই হলের আরেক শিক্ষার্থী যিনি সাবেক কমিটির সদস্য ছিলেন, জামালপুরের মেয়ে জারিন দিয়া শোভন-রাব্বানীকে নিয়ে যেভাবে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তা কোনো ছাত্রলীগ কর্মীর পক্ষে দেয়া কতটা যৌক্তিক ছিল তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডাকসুর ক্যাফেটেরিয়া ও কমনরুম সম্পাদক হওয়ায় এ যাত্রায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে আপদকালীন স্বস্তি পেয়েছেন হয়তো। কিন্তু বিএম লিপি আক্তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে বহিষ্কারাদেশও অপেক্ষা করতে পারে। যেহেতু বিষয়টি এখনো সমাধান হয়নি, তাই বিএম লিপি আক্তারের ভাগ্যে ছাত্রলীগের তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত কোনদিকে যাবে সময়মতো সবাই জানতে পারবেন। কেননা, তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচার হওয়া অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন কোনো ধরণের সঠিক তথ্য প্রমাণ ছাড়া। যদিও যে ভিভিও বা ফোনালাপের বিষয়ে এ অভিযোগে রাব্বানীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেটি কিন্তু ছাত্রলীগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা হওয়ার আগের। বিএম লিপি আক্তারের কাছে বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই, কেন তিনি গত ১ বছর শোভন রাব্বারীকে নিয়ে এসব কথা বলেননি? তাহলে কি তার নিজের মনের ভেতরে ঘাপলা ছিল? শুধু মন মতো পদ না পাওয়ার মনোবেদনা থেকে তিনি বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন? নাকি অন্যকোনো উদ্দেশ্য ছিল? সেটা সময় উত্তর দিয়ে দিবে। কেননা রাজনীতির মাঠে বিএম লিপি আক্তারের চেয়েও সফল অনেক ত্যাগীই এই কমিটিতে পদ পাননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ টি হলের মধ্যে একটি হল রয়েছে, যে হলের ছাত্র্রলীগের সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক নিজের যোগ্যতা, মেধা দিয়েই ছাত্রলীগের পদ পেয়েছেন। এবার তেমন একটি মাত্র হলের শীর্ষ নেতাকে ডাকসুর হল শাখার ভিপি হওয়ার কারণে পদ দেয়া হয়নি কেন্দ্রীয় কমিটিতে। কিন্তু শেখ হাসিনার ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পদ না পেয়েও একটি বাজে কথা কোথাও শোভন-রাব্বানী সম্পর্কে বলেনি। তার স্বপ্ন হচ্ছে রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য পদ প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন আদর্শের। বি এম লিপি আক্তার আপনি ভালো পদ পাননি বলে, অনেক কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু আপনার চেয়ে অধিক কষ্ট পাওয়া হাজারো নেতাকর্মী কিন্তু আপনার মতো টেলিভিশন লাইভে এসে নিজ সংগঠনের শীর্ষ নেতাকে নিয়ে কথা বলেননি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু লেখেননি। কারণ শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোসহীন বঞ্ছিতরা অপেক্ষা করছেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। তিনিই ছাত্রলীগের পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্র। সে হিসাবে ছাত্রলীগের কমিটিতে যে শুদ্ধি অভিযান চলবে, সেটার ফলাফল পাওয়ার জন্য তো আপনাকে অপেক্ষা করতেই হবে। অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়, আর তারাতারি ফলাফল পেতে চাইলে অন্যের প্ররোচনায় ভুল নিবেন। আর রাজনীতিতে একটি ভুল সিদ্ধান্তই আপনাকে পিছিয়ে নিতে পারে অনেকদূর। এমন ইতিহাস আপনি একটু রাজনৈতিক সচেতন হলেই আশেপাশেই খুঁজে পাবেন। আর একটি কথা, যারা ছাত্রলীগ থেকে সাবেক হওয়ার পরও ছাত্রলীগকে নিয়ে পরে রয়েছেন তারা আজ আওয়ামী লীগের কোথাও নেই। কিন্তু তাদের সমসাময়িক অনেকেই আজ ভালো অবস্থানে রয়েছেন মূল দলে। ছাত্রলীগই একমাত্র সংগঠন যেখান থেকে আপনি সাবেক হয়ে মরহুম হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। অন্য সংগঠনগুলো মরহুম হওয়ার পর সাবেক হওয়া যায়। এটাও চরম বাস্তবতা।
এবার আসি জারিন দিয়ার কথায়। জামালপুরের মেয়েটি এখন রাজধানীর একটি অভিজাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচে গর্হিত অভিযোগটি তুলেছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সুন্দরী নারীদের প্রতি শোভন-রাব্বানীর দূর্বলতার কথা এমন নোংরাভাবে কেউ উপস্থাপন করতে পারে, তা আমাদের কারো কল্পনাতেও ছিল না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ডাকসু নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের পক্ষে আক্রান্ত পরিশ্রম করা মেয়েটি কিভাবে, কার পরামর্শে এমন ভুল করলেন, পদ না পেয়ে; তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জারিনের সঙ্গে শুধু একজন নয়; কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার সুসম্পর্ক বা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে বলেও খোদ ছাত্রলীগেরই কেউ কেউ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কখনোই জারিনের এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। তবে কেন পদ না পেয়ে, যে শোভনকে তিনি নেতা মানতেন সেই, তার বিরুদ্ধে কথা বললেন? এটা কি কোনো ক্ষোভ থেকে এসেছিল? নাকি কারো কথায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি? এসব প্রশ্নের উত্তরও খুব দ্রুত বেরিয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগে শেখ হাসিনা মনোনীত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন রাব্বানী নিজে উদ্যোগী হয়ে ভেতরের খবর জেনেছে। তারপরেই সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর আগে শোভন নিজে ফোন করে জারিন দিয়াকে নোংরা, কূরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাসটি কেন দিয়েছিলেন তার ব্যাখ্যা বা আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু জারিন দিয়া সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। কারণ তিনি অন্যের কথায় প্ররোচিত হয়ে আবেগী মেয়েটি অনেক কথাই বলেছিল।
অভিমানী জারিন দিয়া তার সেই ভুলের শাস্তি হিসাবে সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন্। এরপর জারিন বিষপান করে আত্নহত্যার চেষ্টা করেন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বুধবার সন্ধ্যায় তাকে রাজধানীর একটি অভিজাত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সারাদিন চরমতম ব্যস্ততার পর শোভন-রাব্বানী দুজন মিলে একসঙ্গে বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার পর রাজধানীর অভিজাত সেই হাসপাতালে অভিমানী জারিন দিয়াকে দেখতে যান। বিকালে জারিন দিয়ার মায়ের আহাজারি আর কান্নার কথা শুনে ছাত্রলীগ প্রেমী একজন মানুষ যিনি কিনা শেখ হাসিনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, তিনি যখন জানালেন তখনই আবেগী জারিনের পক্ষে এত ভুল করার পরও একটু লিখতে ইচ্ছে হলো। যে রাতে জারিন বিষ খেয়েছিল, সেই রাতেই ফেসবুকে লিখেছিলাম, অভিমানী জারিন দিয়ার পাশে থাকুক ঐক্যবদ্ধ ছাত্রলীগ। এখনো বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী জারিন দিয়ার পাশেই আছে শেখ হাসিনার মনোনীত সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা। তারা নেত্রীর অনুসারী হিসাবে জারিন দিয়াকে হয়তো বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ক্ষমা করে দিবেন, কিন্তু শেখ হাসিনার মতো মনে রেখে দিবেন। কারণ শেখ হাসিনা ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলে মাফ করে দেন, তবে তা মনে রেখে দেন। হয়তো এই বিষপানের ঘটনার পর জারিন দিয়া সুস্থ হয়ে ফিরে এসে পদ না পাওয়ার বঞ্চনা ভুলে আবারো রাজপথে সক্রিয় হবে একজন কর্মী হিসাবে। অবশ্য তার আগে তাকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য লিখিতভাবে শোভন রাব্বানীর কাছে অনুমতি চাইতে হবে। তারপর বিবেচনা করে তারা হয়তো সিদ্ধান্ত জানাবেন। এমনও হতে পারে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া অভিমানী জারিন দিয়া ছাত্রলীগের ভবিষ্যত রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও হতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে তাকে যে আরো সংযত, সহনশীল এবং মার্জিত হতে হবে সেকথা আমি কেন ছাত্রলীগের প্রকৃত শুভাকাঙ্খীরা এটাই প্রত্যাশা করবে।
ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী ফ্যাশন সচেতন হতেই পারেন। কেননা ফ্যাশন সচেতন হওয়া, আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক আশাক পরিধান করা অন্যায় কিছু না। তবে সেটা যেন দৃষ্টিকটু না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা আমাদের সমাজের মানুষরা এখনো উদার হতে পারে না। এ দেশে শিক্ষক ছাত্রকে দেখে মাঝেমধ্যে ভয় পান, কারণ স্বার্থে আঘাত লাগলে তারা শিক্ষাগুরুর গায়েও হাত তুলতে দ্বিধা করে না। কিন্তু সভ্য দেশগুলোতে শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কগুলো হয় বন্ধুত্বপূর্ণ। সেখানে একাডেমিক সম্পর্কের বাইরে কোনো পার্টিতে তাদের দেখা হলে নিজেরা এমনভাবে নিজেদের উপস্থাপন করে যেন তারা একে অপরের বন্ধু। ফলে পশ্চিমা আধুনিক সভ্য সেই দেশগুলোতে কোনো ছাত্র শিক্ষকের গায়ে হাতও তুলে না, আবার পড়াশুনোর ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো ধরণের ঘাটতি থাকে না।
যাই হোক, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফ্যাশন নিয়ে কথা বলছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় ৪ নেতার মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানকের পরামর্শে গতকাল বুধবার সারাদিন সারাদেশে কৃষকদের ধান কেটে দেয়ার মহতি কাজটি করেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ দলবল নিয়ে ধান কেটেছেন। সেখানে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া রাব্বানীর একটি ছবি নিয়ে ব্যাপক ট্রল করতে দেখা গেছে। যারা পদ পাননি, অথবা রাব্বানীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদবাণিজ্য করার মিথ্যা অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন তারাই এমনটা বেশি করছেন। তবে রাব্বানীর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ কেউই লিখিত আকারে প্রমাণসহ তার শেখ হাসিনা বা শোভনের কাছে জমা দেননি। কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই ফেণীর একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাব্বানীর বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের পদবাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। অভিযোগকারী লিখিত আকারে এ অভিযোগ গণমাধ্যমের কাছে করলেও ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক এবং পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্রের নাম যেখানে শেখ হাসিনা, তার কাছে অভিযোগ না করে গণমাধ্যমের কাছে কেন পাঠিয়েছিলেন? তারপর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোলাম রাব্বানী ওই অভিযোগকারী ব্যাক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, আমি টাকা নিয়েছি; তা প্রমাণ করতে না পারলে আমি মামলা করবো...তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। তবে রাব্বানী ছাত্রলীগের অগ্রজ হিসাবে তাকে শেষবারের মতো এসব নোংরামি, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য না বলার জন্য অনুরোধ করেছেন।
রাব্বানীর যে ছবিটি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে সেটা হচ্ছে আবহমানকালের একজন কৃষকের ছবি। আমার আপনার পূর্বপুরুষদের প্রতিচ্ছবি অনেকদিন ফিরে এসেছে। আপনারা যারা ফেসবুকে রাজনীতি করেই পোস্ট পদবী পেতে চেয়েছিলেন, তারাই আজ রাব্বানীর এই ছবি নিয়ে সমালোচনায় মুখর হচ্ছেন। নিজেরা কিছু করতে পারছেন না, আলোচনায় থাকতে পারছেন না; তাই হিংসায় রাব্বানীকে সমালোচিত করার মধ্যে এক চরম সুখ অনুভূতি নিয়ে আরো লিখছেন। তাতে করে শেখ হাসিনা মনোনীত গোলাম রাব্বানীর আসলে কিছুই আসে যায় না। কারণ ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর সেই গানটি...পিছু লোক কিছু কথা বলবেই... এই গানটা যারা সময়ে অসময়ে কিছু প্রমাণিত হওয়ার আগেই ট্রল করার অভ্যাসে পরিণত করেছেন তারা শুনতে পারেন। সত্যি বলছি ভারো লাগবে আপনাদের। বাণী প্রধান গানটি বুঝত পারলে আপনারা নিজের সমালোচনা করতে পারবেন। একবার বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আপনাদের কি কোনো ব্যাক্তিগত জীবন নেই। আপনার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষ ট্রল করলে কেমন লাগবে? হ্যাঁ, কাজ করলে সমালোচনা থাকবেই তবে সেটা হোক গঠনমূলক সমালোচনা। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই বিষয়টাই নিশ্চিত করতে চান।
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ব্যাক্তিগতভাবেই চিনি যখন তারা নেতা হননি। দুজনই অসম্ভব মেধাবি ও আইনের ছাত্র। অনুজপ্রতীম দুই শীর্ষ নেতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দেখে আমি সম্প্রতি মুগ্ধ হয়েছি। গোলাম রাব্বানীকে অনেকেই অনেক প্রশ্ন তোলেন, মানবতার ফেরিওয়ালার স্থলে অন্য ফেরিওয়ালা বলে ট্রল করেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, ২ সপ্তাহ আগে পিতা হারানো ৪ মাসের একটি শিশুকে কিভাবে আদর করতে হয়? দেবদূত হিসাবে পৃথিবীতে আসা ঝিনাইদাহের এই ফুটফুটে ছেলেটির অসহায় মায়ের পাশে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য কয়েকজন প্রভাবশালীকে ফোন করে চেষ্টা করা...শুধু এই দেবদূতের কথাই বললাম। এই ভালো কাজের কথাগুলো গোপনেই থেকে যাবে। এগুলো নিয়ে প্রশংসা করলে তো সমলোচনাকারীদের পেটের ভাত হজম হওয়ার কথা নয়। কারণ কাউকে পছন্দ আপনি নাই করতে পারেন। কিন্তু তার ভালো কাজের জন্য অবশ্যই প্রাপ্য সম্মানটুকু দেন। কেননা সম্মান দিলে আপনিই ভবিষ্যতে সম্মানিত হবেন। এটা প্রকৃতির নিয়ম। সারাদিনে এমনভাবে ২৫ টি কাজ শোভন- রাব্বানীকে করতে হয়। কয়টা আমাদের গণমাধ্যমে আসে? ভালো কাজ করার মানসিকতা থাকাটাই যথেষ্ট। তবুও তো কিছু করার চেষ্টা হচ্ছে। থাকুক না সমালোচনা, সমালোচনাকে জয় করে একদিন নিজের অবস্থানে সে ব্যাক্তি পৌঁছাবেই যদি তার মেধা, যোগ্যতা থাকে।
এখন আসি, ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটিতে ১৭ জনের বিষয়ে। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই অনেকে নিজেদের নাকি নির্দোষ প্রমাণ করেছেন। কয়েকজন করতে পারেননি। এমন একটি আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের কথা হচ্ছে, নেত্রীর পক্ষ থেকে যে ১৭ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে সবার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব লোক দিয়েই খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তারপর তিনিই তালিকা দেখে কাদের নির্দোষ বলে স্বপদে বহাল রাখবেন, অথবা কাদের বাদ দিবেন তার শুধু নেত্রীই সিদ্ধান্ত দিবেন। তবে সেটি আগামী সপ্তাহের যেকোনো সময় হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকি যে ৯৯ জনের একটি তালিকা প্রথমে পদবঞ্ছিত এবং পরবর্তীতে বিদ্রোহী হওয়ার উপাধি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে, সেখানে অধিকাংশ অভিযোগগুলোই ভিত্তিহীন ভুয়া এবং মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। একজন উপ সম্পাদককে নিয়ে বিয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যাক্তি জানেই না, তার বউ কোথায়? তবে এটাও সত্যি কয়েকজন বিবাহিত এবং বহু বিবাহ অথবা প্রভাবশালী কারো সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারণে পদ পেয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন। একটি ইউনিটের দুইজন সুন্দরী নারী নেত্রীর সহ-সভাপতির পদ ভাগিয়ে নেয়া নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। তারা ১৭ জনের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীর মতো, সবচে আলোচিত বিতর্কিত হয়েছেন। এটাও বা কম কিসের? ছাত্রলীগের মতো এত বড় সংগঠনে আপনারা এই ১৭ জন সত্যিই ভাগ্যবান কারণ আপনাদের নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটা হোক নেতিবাচক প্রচারণায় এসে। কিন্তু আপনাদের নাম কিন্তু এখন সবাই জানে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেই আপনারদের প্রমাণ করতে হবে, আপনারা দোষী না নির্দোষ। বিতর্কিত একজন সুন্দরী নারী সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ৪ টি বিয়ে করার। এটা উঠতেই পারে। মানুষের ব্যাক্তিগত জীবনে অনেক উত্থান পতনের পর যুদ্ধ করে টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি ছাত্রলীগের জন্য, বিশেষ করে ছাত্রলীগের পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্র মানে শেখ হাসিনার প্রশ্নে কতটা আপোসহীন সেটাই মূখ্য বলে বিবেচিত হবে।
পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সদ্য সাবেক কমিটির শীর্ষ দুই নেতা সাইফুর রহমান সোহাগ এবং এস এম জাকির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে সকল বিভেদ ভুলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেন করবেন। তখনই ঐক্যবদ্ধ ‘আপার’ ছাত্রলীগ দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। যেখানে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক একটি নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য শেখ হাসিনার অনুমতি চাইবেন। যদি প্রধানমন্ত্রী সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করার অনুমতি দেন, তবে সেটা হবে শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের অন্যতম সেরা অর্জন। তারজন্য আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকি...কেননা নানা সমালোচনার পরও এগিয়ে যাচ্ছে শোভন-রাব্বানী মানে শেখ হাসিনার মনোনীত ছাত্রলীগ। এটা হয়তো অনেকের ভালো লাগছে না, তাই হিংসে হচ্ছে। রাজনীতিতে হিংসে বা প্রতি হিংসার কোনো ঠাঁই নেই। এর জলন্ত প্রমাণ বিএনপি-জামায়াত শিবির। দলগুলো শুধু আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার প্রতিহিংসায় মেতেছিল বলেই তাদের করুণ পরিণতি নিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। রাজনীতিতে প্রতিহিংসা নয়, সমঝোতা এবং ষড়যন্ত্র-ই প্রকৃত বিষয়। সময় মতো সমঝোতা এবং ষড়যন্ত্র করতে পারলে সেটা শিল্প আকারে বিকশিত হবেই। তবে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা যারা সফল হয়েছেন, তারা ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করেই সফল হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে তারই মনোনীত ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন পারবেন না ছাত্রলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে? আমরা খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পিছু লোকের কথা না শুনে শোভন-রাব্বানী এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরো এগিয়ে যাবে.. এই প্রত্যাশায়....ছাত্রলীগের সোনালী অর্জনগুলো নিয়ে নয়, বর্তমান ছাত্রলীগের কিছু অর্জন নিয়ে কথা বলবে, কোনো মা যেন তার মেয়েকে ছাত্রলীগ করাতে ভয় না পান এমন কিছুর আশায় রইলাম। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ।
লেখক: সিনিয়র প্রতিবেদক, দৈনিক ভোরের পাতা