ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মেগা প্রকল্পে সক্রিয় তারেক রহমানের হাওয়া ভবন সিন্ডিকেট!

- ২৩-মে-২০১৯ ০৪:০৫ অপরাহ্ন
:: উৎপল দাস ::
লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য হলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আমলে রাষ্ট্রীয় ঝুঁকিপূর্ণ সরঞ্জামাদি (যুদ্ধজাহাজ, মানব বিহীন উড়োজাহাজ, রাডার) ক্রয় বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করছেন মোজহারুল হক ও তার জামাতা বদরুল করিম। এমন অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ভোরের পাতা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা ক্রয় মহা-পরিদপ্তরের তালিকা ভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘মেসাসর্ ফরচুন এন্টারপ্রাইজ’ এবং ‘মেসাসর্ এস্টরন এন্টারপ্রাইজ’ গত কয়েক বছর ধরে অত্যন্ত প্রতাপের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে। মেসাসর্ ফরচুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাহারুল হক এবং তার জামাতা বদরুল করিম যিনি মেসাসর্ এস্টরন এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী। উভয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ঠিকানা- রূপসা টাওয়ার, ৯/বি, ৭ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
এদিকে, মোজহারুল হক এবং বদরুল করিম খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট, বিএনপির সাবেক সদসস্যের মাধ্যমে হাওয়া ভবনের নিয়ন্ত্রক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে ঢাকায় এসে মোজহারুল হক আলী আসগর লবীর পৃষ্ঠপোষকতায় ঠিকাদারি ব্যবসায় নাম লেখান। এরপর তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের সিন্ডিকেটে প্রবেশ করে আনুকূল্য লাভ করেন। এরপর থেকেই এখন পর্যন্ত গোপনে নিজের কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছেন এই ধূর্ত বিএনপির এজেন্ট মোজহারুল হক।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, আলী আসগর লবি, আলী আসগর লবির স্ত্রী খুশনুদ আসগর, মোজাহারুল হক এবং মোজাহারুল হকের স্ত্রী সেলিনা হক এক সাথে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শুরু করেন ১৩ অক্টোবর ১৯৯৭ইং সাল থেকে। যে প্রতিষ্ঠানের নাম “এ.এইচ. ট্রেডিং কোং লি:” (রেজি: নং- সি-৩৪০৬৭, তারিখ- ১৬ অক্টোবর ১৯৯৭)। উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের ২৫% (পচিশ শতাংশ) করে মালিকানা রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোটের দু:শাসনের সময়ে উক্ত কোম্পানী জেট ফুয়েল কেলেঙ্কারীর অন্যতম হোতা যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। উক্ত কেলেঙ্কারির কারণে বাংলাদেশ বিমান এবং বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। আলী আসগর লবি এবং মোহাজারুল হক উভয়ের মধ্যে অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক। এখানে উল্লেখ্য যে, “এ.এইচ. ট্রেডিং কোং লি:” এ এর অর্থ আসগর এবং এইচ এর অর্থ হক। আলী আসগর লবি এবং মোজাহারুল হক উক্ত কোম্পানী ৩১ শে ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখ পর্যন্ত চালিয়ে যান।
উল্লেখ্য যে, ক্যাপ্টেন আজিজ (অব:) যিনি বিএনপি-জামাতের ২০০১ ধেকে ২০০৬ইং সময়ে নৌ-গোয়েন্দা প্রধান হিসাবে কাজ করেন এবং মোজাহারুল হক ক্যাপ্টেন আজিজকে (অব:) তার মেসার্স ফরচুন এন্টারপ্রাইজ এ নিয়োগ দেন।
বর্তমান দেশপ্রেমিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সরকারের আমলে গত ১০ বছরে অত্যন্ত চতুরতার সাথে মোজাহারুল হক এবং তাহার জামাতা বদরুল করিম অনেকগুলো রাষ্ট্রীয় ঝুঁকিপূর্ণ কার্য সম্পাদন করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: নৌ-বাহিনীর জন্য ৪টি উড়োজাহাজ সরবরাহ করেন রুয়াগ জার্মানী থেকে, বিমান বাহিনীর জন্য ১টি রাডার সরবরাহ করেন সেলেক্স ইটালি থেকে, সেনাবাহিনীর জন্য ৩টি সাউন্ড রেঞ্জিং ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করেন সেলেক্স ইটালি থেকে, নৌবাহিনীর জন্য ১টি জাহাজে বহনযোগ্য রাডার সরবরাহ করেন সেলেক্স ইটালি থেকে।
এছাড়াও বর্তমানে নৌ-বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সম্পর্শকাতর সরঞ্জামাদি সরবরাহের কাজে ‘মেসাসর্ ফরচুন এন্টারপ্রাইজ’ এবং ‘মেসাসর্ এস্টরন এন্টারপ্রাইজ’ জড়িত। যেগুলোর মধ্যে যুদ্ধ জাহাজ, মানব বিহীন উড়োজাহাজ, রাডার এবং সি-৪ উল্লেখযোগ্য।
উল্লেখ্য যে, ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামাতের দু:শাসনের সময় আলী আসগর লবি মোজাহারুল হককে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ, রাষ্ট্রীয় ঝুঁকিপূর্ণ সরঞ্জামাদি সরবরাহ, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ সরঞ্জামাদি সরবরাহে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজ পাইয়ে দেন। মোজাহারুল হক মানুষ হিসেবে অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন তার দু:সময়ের ত্রাণ কর্তা এবং ব্যবসায়িক অংশীদার আলী আসগর লবির কাছে। তিনি নিয়মিতভাবে গত ১০ বছরে অর্জিত ব্যবসায়িক লভ্যাংশ আলী আসগর লবিকে বুঝিয়ে দেন। এইজন্য তারা বিভিন্ন সময়ে থাইল্যান্ড, সিংগাপুর এবং লন্ডনে এ দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। লন্ডনে কয়েকবার তারেক রহমানের সঙ্গেও দেখা হয়েছে মোজহারুল হকের এমন অভিযোগও রয়েছে। মূলত তারেক রহমানকে টাকার ভাগ দিতেই সেখানে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন-এমন কথাও জানা গেছে। উল্লেখ্য, আলী আসগর লবি হাওয়া ভবনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিএনপি-জামাতের একজন বড় আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ঠিকাদারদের অনেকে আফসোস করে বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত করেছে। মাদার অব হিউমানিটি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আর্জি থাকবে এই রকম একজন হাওয়া ভবনের সাথে যুক্ত বিতর্কিত ব্যবসায়ী আলী আসগর লবি এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার মোজাহারুল হক তার জামাতা বদরুল করিম সহ কিভাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল সরঞ্জামাদির বাণিজ্যে গত ১০ বছর যুক্ত আছেন বহাল তবিয়তে কিভাবে তা যথাযথ অনুসদ্ধানের ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিবেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই হাওয়া ভবনের এই কালো হাত ভাঙা সম্ভব বলেও মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এবং শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী ঠিকাদাররা।
এসব অভিযোগের মোজহারুল হককে গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে সোয়া তিনটা পর্যন্ত কয়েকবার এ প্রতিবেদক ফোন করলেও প্রথমে ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিকাল সোয়া ৩ টার দিকে ফোন করা হলেও মোজহারুল হকের ব্যক্তিগত এক কর্মকর্তা ফোন ধরেন। মোজাহরুল হকের ব্যক্তিগত গ্রামীণফোন অপারেটরের ফোনে নিউজের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার এখন নামাজ পড়ছেন। কয়েকদিন আগে হার্টে রিং পড়ানো হয়েছে। এখন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। ব্যাক্তিগত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাইলে ফোনের ওপাশ থেকে বলেন, ভোরের পাতার সম্পাদকের নাম কি জানতে চান। বিনয়ের সঙ্গে এ প্রতিবেদক বলেন, ড. কাজী এরতেজা হাসান, যিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম ও শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। তারপর ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, নিউজের বিষয়ে আপনাকে অথবা ভোরের পাতার সম্পাদকে ফোন করে মোজহারুল হকের পক্ষে কোম্পানির অবস্থান ব্যাখা করবেন ক্যাপ্টেন আজিজ (অব:)। সাবেক নৌ-গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান প্রধান ক্যাপ্টেন আজিজ (অব.) ফোন নম্বর চাইলে তা দিতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, ক্যাপ্টেন আজিজ (অব:)ই ফোন ব্যাক করবেন। দুইদিন অপেক্ষা করার পরও বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯ টায় আবারো ফোন করা হলে মোজাহুরুল হকের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।