অভিযুক্তকে নিয়ে দুদক কর্মকর্তার ইফতার, ফরিদপুর জুড়ে চাঞ্চল্য!

- ২৭-মে-২০১৯ ০২:২৯ অপরাহ্ন
:: উৎপল দাস ::
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে ফরিদপুরের দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগ আমলে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য এই অনুসন্ধানে নিয়োজিত দুদকের ফরিদপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ তাদেরই সাথেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এনিয়ে গোটা ফরিদপুরে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য।
দুর্নীতি দমন কমিশনেরই একজন শীর্ষ কর্মকর্তা একে গুরুতর স্খলন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, যার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে, তার সঙ্গে যদি অনুসন্ধান কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে মেলামেশা করেন, তাহলে সেই তদন্ত কোনোভাবেই সুষ্ঠু হবে না।
রবিবার ফরিদপুরের বদরপুরে স্থানীয় একটি ইফতার পার্টিতে বরকত ও রুবেলের সঙ্গে দুদক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে দেখা গেছে। তারা এক সঙ্গেই অনুষ্ঠানস্থলে গিয়েছেন। একসঙ্গে মেতেছেন খোশগল্পে, আড্ডায়। শুধু তাই নয়, সাজ্জাদ হোসেন বরকত দুদক কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। যা দেখে উপস্থিত অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘বরকত ও রুবেলের সঙ্গে দুদক কর্মকর্তার ভাব-বিনিময় দেখে মনে হয়েছে তাদের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব রয়েছে। দুর্নীতি দমনে নিয়োজিত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটির কর্মকর্তারা এতটা সহজলভ্য হলে তাদের অনুসন্ধান বা তদন্ত নিয়ে জনমনে সহজেই প্রশ্ন তৈরি হয়।’
গত ১ মে দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দুদক ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে বরকত ও রুবেলের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পরে ২০ মে আলাদা চিঠিতে বরকত ও রুবেলকে দুদক কার্যালয়ে তলব করেন উপ-পরিচালক। ২২ মে তারা হাজির হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় চেয়ে নেন।
দুদকের রীতি অনুযায়ী, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লে সেই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। একেই বলা হয় অনুসন্ধান। এই পর্যায়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রমাণ পেলে পরে হয় তদন্ত। আর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়লে অনুমোদন দেওয়া হয় মামলার।
যাদের সম্পদের অনুসন্ধান করছেন, তাদের সঙ্গে প্রকাশ্য সখ্য ও একসঙ্গে ইফতার পার্টিতে যোগদানের বিষয়টিকে অন্যায় হিসেবেই দেখছেন দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘এটি সংস্থাটির স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘উপ-পরিচালক (আবুল কালাম আজাদ) যদি এ কাজ করে থাকেন, তাহলে অন্যায় করেছেন। ভুল করেছেন। এটা করা উচিত হয়নি। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে।’
দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মনে করেন, ‘এটি অনৈতিক হয়েছে। তিনি ভুল করেছেন। আসলে বাংলাদেশে অনেক লোকেরই এ ধরনের সেন্স নেই।’
বরকত ও রুবেলের সম্পদের অনুসন্ধানের তদারকি কর্মকর্তা ও দুদকের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। কেন সে এমনটা করলো আমি খোঁজ নিচ্ছি।’
তবে উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদের দাবি, প্রকাশ্যে তিনি কী করলে না করলেন তাতে তার অনুসন্ধানে কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, ‘ওই ইফতার পার্টিতে আর সবার মতো আমিও নিমন্ত্রিত ছিলাম, তাই গিয়েছি। আমি ওখানে কার সাথে কথা বললাম, এটা মুখ্য নয়, আমি আসলে আমার কাজ ঠিকঠাক করছি কি-না এটাই মুখ্য।’
একসঙ্গে গাড়িতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়িতে গিয়েছি। তাদের গাড়িতে যাইনি।’