কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক

- ১০-Jun-২০১৯ ০২:০১ অপরাহ্ন
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ঘোচাতে বেশ কিছুদিন পর বৈঠক করলেন জাতীয় ঐক্যন্টের শীর্ষ নেতারা। তবে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তারা। সোমবার (১০ জুন) বিকালে উত্তরায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, আজকের বৈঠকে ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন না। তার অবর্তমানে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে নিতে পারিনি। তাই বৈঠকটি আজকের মতো স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আবার বৈঠকে বসা হবে।
কামাল হোসেন ছাড়াও বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও ছিলেন না। তবে তার দলের প্রতিনিধি হিসেবে নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. জাহিদুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের নেতা মমিনুল ইসলাম বৈঠকে ছিলেন।
জানা গেছে, নিজেদের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখা, আগামী দিনে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আল্টিমেটামের বিষয়টির সুরাহা হওয়ার কথা ছিল বৈঠকে। সংসদ সদস্য হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সাতজন শপথ নেওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। ৮ জুন এই আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও আরও দুই দিন সময় দেন কাদের সিদ্দিকী।
বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৈঠক হলেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা ছাড়া কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট।
আ স ম রব বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ড. কামল হোসেনের নেতৃত্ব আগামী সভা করবো। এই আন্দোলনের রূপ হবে বৃহত্তর ঐক্য। ঐক্যফ্রন্টকে আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারবিরোধী যত রাজনৈতিক দল আছে, সেসব দলকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।
উন্নয়ন নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদের হরিলুট চলছে অভিযোগ করে আ স ম রব বলেন, একটা বালিশ তুলতে ১ হাজার টাকা লাগে, এটা কেউ শোনেনি। একটা বালিশের দাম ৬ হাজার টাকা, সারা দুনিয়ায় এমন ইতিহাস নেই।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে জাতির কাছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন করা। এই প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। এটা এখনও আদায় করতে পারিনি। আদায় না করা পর্যন্ত আন্দোলন ও ঐক্য অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে রব বলেন, বিষয়টি নিয়ে আপনাদের প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু এর উত্তর আজকে আমরা দেবো না। আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করার পর আপনাদের মাধ্যমে জনগণের উত্তর দেবো।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে রব বলেন, আপনারা জনগণের অংশ, আমাদের অংশ। আশা করি, পজেটিভ নিউজ করবেন। যা করলে জনগণের ক্ষতি না হয়।
আ স ম রব আরও বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বেআইনিভাবে প্রয়োগ করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে অন্যায়ের বিস্তার করে দিয়েছে। আজকে প্রতিদিন নারী- শিশু নির্যাতন হচ্ছে, কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে না। যারা বিদেশে চাল রফতানি করছে, তাদের ভর্তুকি দিচ্ছে, কৃষকে দিচ্ছে না।
ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রব বলেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। একটি নির্যাতনের বিচার হয়নি। রিপোর্ট পাওয়া যায় না। ফলে ঘুষ, দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। অন্যায় করলে বিচার হবে, এই কথা দেশের মানুষ ভুলে গেছে। অন্যায় করলে তোমার বিচার হবে, এটা বোঝাতে হবে।
ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, কাদের সিদ্দিকী যে চিঠি দিয়েছেন, ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের কাছে এই চিঠি উত্তর কী হবে? যদি সংসদ অবৈধ হয়, তাহলে আপনাদের দলের লোকেরা কেন গেলো?
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে। তার হাসপাতালে বোমা পাওয়া গেছে। তার জীবন হুমকির মুখে। হাজার হাজার কর্মী কারাগারে। তাদের কারাগারে রেখে আমরা ঘুমাতে পারি না।’ খালেদা জিয়াসহ সরকারবিরোধী সব নেতাকর্মীকে কারামুক্ত না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে আমার। আশা করি খুব শিগগিরই আবারও বৈঠকে বসব। ড. কামালের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার পরই আমি আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব। আমি যে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম সে বিষয়ে অটল আছি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ীর কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, দলটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক বীর হাবিবুর রহমান তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।