খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল

- ১১-Jun-২০১৯ ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না ঋণখেলাপিদের। সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিদেশি সব খাতের ব্যাংক থেকেই তাদের নেওয়া ঋণের খেলাপি হওয়ার পরিমাণ তীব্রগতিতে বাড়ছে। তবে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতেই খেলাপি ঋণের আধিক্য বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এর ফলে প্রথমবারের মতো অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১০ জানুয়ারি সব ব্যাংক মালিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছিলেন, ‘আজ থেকে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না।’ আর জানুয়ারি-মার্চ এ তিন মাসেই খেলাপি ঋণ এত বাড়ল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা (প্রায় ১৭ হাজার কোটি)। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
এটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য। এর বাইরে ঋণ অবলোপন, বারবার ঋণ পুনঃ তফসিল এবং ঋণ পুনর্গঠনের হিসাব মেলালে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মে দেয়া ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠন করা ঋণ আবার খেলাপি হচ্ছে। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় যাচাই-বাছাই ছাড়াই যেসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে, তা আদায় হচ্ছে না। এ ছাড়া বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনর্গঠন করা খেলাপিগুলো নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে না। এসব কারণে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, খেলাপিদের যদি যথাযথ শাস্তির আওতায় নিয়ে না আসা যায় তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। খেলাপি ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে সময়োচিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতের ঋণ বিতরণ ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশই খেলাপি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ শেষে সরকারি খাতের ৬ ব্যাংকের এক লাখ ৬৭ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা ঋণের ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা খেলাপি। গড়ে ব্যাংকগুলোর ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে।
বেসরকারি খাতের দেশীয় ৪০টি ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ সাত লাখ পাঁচ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা খেলাপি। যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ।
ব্যাংক-সংশিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ আদান-প্রদান করছেন। যে উদ্দেশ্যে এসব ঋণ নেয়া হচ্ছে, তার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। ঋণের অর্থ পাচারও হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। ফলে খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা প্রকাশ পাচ্ছে।
বিদেশি নয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মার্চ শেষে হয়েছে দুই হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর ৬ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণখেলাপি। এসব ব্যাংক ঋণ দিয়েছিল ৩৬ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ ঋণই খেলাপি। এসব ব্যাংক ঋণ দিয়েছিল ২৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা।