তারেক রহমানের গোপন মিশন বাস্তবায়নে আ.লীগের এমপি জগলুল হায়দার!

- ১৬-Jun-২০১৯ ০৩:৫২ অপরাহ্ন
:: উৎপল দাস ::
মোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে সবচে আলোচিত, সমালোচিত এমপির তালিকা করতে গেলে সবার আগে যে নামটি আপনার চোখে ভেসে উঠবে তিনি হচ্ছেন সাতক্ষীরা ৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার। নানা ধরণের আঁতলামি করে দৃষ্টি আকর্ষণের বৃথা চেষ্টা করা জগলুল হায়দারের কর্মকাণ্ডে তার সহকর্মী অনেক এমপিকেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। একজন এমপি হিসাবে মাটি ও মানুষের সঙ্গে কাজ করা মানে তার সঙ্গে রাস্তায় নেমে কোদাল দিয়ে নিয়মিত মাটি কাটা নয়। কারণ মাটি কাটার জন্য শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের কাজে বারবার ভাগ বসিয়ে, আইন প্রণেতা হিসাবে নিজের প্রকৃত কাজটিই ভুলে গেছেন এমপি জগলুল।
এমনকি লোক দেখানো কম্বল বিতরণ, নিজ আসনের মানুষের খবর না রেখে, ত্রাণের টাকা লুটপাট করে, নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগে তার পরিবার ও আত্নীয় স্বজনের সম্পৃক্ততা, গরিবের বাড়িতে বাজার করে নিয়ে গিয়ে সেটি ভিডিও করে ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য এমপিদের কাছে হাস্যরসের কৌতুক অভিনেতা গোপাল ভাঁড়ের নতুন সংস্করণ হিসাবে ইতিমধ্যেই নিজেকের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এছাড়া একজন এমপি হয়েও তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সামনে ফ্লোরে বসে নিজের ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সি বা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার অবমাননা করেছেন বলেও মনে করেন একাধিক এমপি। যদিও ছাত্রলীগের সেই শীর্ষ নেতাকে খুশি করতে না পারায় শ্যামনগর উপজেলা কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়ন করতে পারেননি, একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার নাম ভাঙিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করলেও গোপনে নিজের আপন ছোট ভাইকে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ এবং তারেক রহমানের গোপন মিশন বাস্তবায়ন করছেন বলে জানা গেছে। তারেক রহমানের নির্দেশেই গত ১০ বছর ধরে সাতক্ষীরা শ্যামনগর -কালীগঞ্জ (একাংশ) এলাকায় সংখ্যালুঘ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন জগলুল হায়দার এবং তার পরিবারের সদস্যরা। ভয়ংকর আঁতেল এমপি জগলুল হায়দারের নানা দুর্নীতি, অপকর্ম এবং গোপন মিশন নিয়ে ভোরের পাতার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে ২য় পর্ব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি এস এম জগলুল হায়দারের আপন ছোট ভাই ব্যারিস্টার ইমরুল হায়দার। বর্তমানে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির কমিটিতে সহ-সভাপতির পদে ছিলেন। এছাড়া লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে মিনি পাকিস্তান খ্যাত সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যোগ্য লোকের অভাবে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার মনোনয়ন কৌশলে বাগিয়ে নেন, সুন্দরবনে বাঘ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত আসামি এস এম জগলুল হায়দার। এছাড়া জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে আসা জগলুল হায়দারকে সুন্দরবনের জলদস্যুদের নেতা হিসাবেই চিনেন এলাকাবাসী। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করলেও ছাত্র জীবনে কোনোদিন ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না সংখ্যালঘু নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত এই বিতর্কিত এমপি।
এ বিষয়ে সরকারের মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম.মোজাম্মেল হক ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেন, একাত্তরের যুদ্ধের সময় যে মানুষগুলো বাংলাদেশ ছেড়ে যায়নি। তারা এখন আওয়ামী লীগের আমলে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে। এটা সরকারের জন্য খুবই বিব্রতকর এবং দুঃখজনক। আর অভিযোগ সরাসরি যদি আওয়ামী লীগের একজন এমপি (জগলুল হায়দার)’র বিরুদ্ধে হয়; তখন তা খুবই দুঃখজনক। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তিরও ব্যবস্থা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন আ.ক.ম.মোজাম্মেল হক।
এদিকে, বাংলাদেশের মিনি পাকিস্তান খ্যাত সাতক্ষীরা বিশেষ করে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের করে এ দেশে থেকে বিতরণের গোপন মিশন নিয়ে বহু আগেই কাজ শুরু করেন এস এম জগলুল হায়দার ও তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার ইমরুল হায়দার। ২০১০ সালের পর থেকেই সাতক্ষীরাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার এই মিশনটি নিয়ে কাজ শুরু করে জগলুল হায়দার ও ইমরুল হায়দার। বিএনপির নেতা হিসাবে পরবর্তী নিয়মিত লন্ডনে যাতায়ত শুরু করেন ইমরুল হায়দার। সেখান থেকে গোপন মিশন নিয়ে দেশে ফিরে তার ভাই আওয়ামী লীগের এমপি বানিয়ে তারেক রহমানের মিশন বাস্তবায়নে নেমেছেন। সেই ধারাটি এখনো অব্যাহত রয়েছে। শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতন নয়, টাকার বিনিময়ে জামায়াত-বিএনপির নেতাদের বা তাদের পরিবারের লোকজনকে চাকরি দিচ্ছেন এই জগলুল হায়দার এমপির ‘টাকার বিনিময়ে চাকরি’ সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মূল সদস্য জগলুল হায়দারের স্ত্রী, পুত্রসহ নিকট আত্নীয় স্বজন। এমনকি জগলুল হায়দারের ঘনিষ্ঠ আত্নীয় যিনি তার সকল অবৈধ আয়ের খবর জানেন, তিনিই ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শুধু চাকরি বাণিজ্য নয়, সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য প্রতিটি ট্রলার থেকে এমপি জগলুল হায়দারের লোকজন মাঝিদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করেন। সেই টাকা দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদের সময় ব্যবহার করা তো দূরে থাক, বিদেশেও পাচার করেন। ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করা এমপি জগলুলের অবৈধ অর্থের ক্যাশিয়ার নিজেই জানিয়েছেন, এমপি সাহেবের প্রচুর টাকা। মাঝে মাঝে বিদেশে টাকা পাঠাতে হয়। সেটা বড় অংকের টাকা।
একাধিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেছেন, জগলুল হায়দার ও তার পরিবার কখনোই আওয়ামী লীগের লোক ছিল না। তারা সুযোগ বুঝে সরকারের সুসময়ে মধু খেতে এসেছে। কারণ তার আপন ভাই নিজেই তারেক রহমানের লোক। এটা এলাকার সবাই জানে। কিন্তু সুন্দরবনের দস্যু হিসাবে শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো ভয় পায়। আতংক সৃষ্টি করে জগলুল হায়দারের পুরো পরিবারই নির্যাতন জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে।
তারেক রহমানের গোপান মিশন ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের রূপ রেখা নিয়ে এমপি জগলুল হায়দার ও তার পরিবারের লোকজন জড়িত রয়েছেন এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা তো জানতামই না জগলুল হায়দার এতটা খারাপ লোক। অভিযোগগুলো সত্যি হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা তারেক রহমানের গোপন মিশন বাস্তবায়ন করা লোক আর যাই হোক, শেখ হাসিনার কর্মী হতে পারে না। এমন ষড়যন্ত্রকারী এমপিকে দেশবাসীর সামনে নিয়ে আসার জন্য ভোরের পাতাকে ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের এই নেতা। তিনি আরো বলেন, জগলুল হায়দারের বিরুদ্ধে শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ হলেই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করা হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় জগলুল হায়দারকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে শনিবার সন্ধ্যায় ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে টেলিফোনালাপের সময় আঁতেল এমপি হিসাবে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনার যা ইচ্ছে লিখে দেন। আপনি আমার সম্মানহানি করছেন। আমি আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ একজন সংসদ সদস্য কিভাবে উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা যিনি একজন সংসদ সদস্যও তিনি বলেন, জগলুল হায়দারের রাজনৈতিক পরিপক্কতার অভাব রয়েছে। এটা প্রমাণ করেছেন তিনি আঁতলামি করেই। তার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হচ্ছে। মানুষজন এমপি জগলুলকে নিয়ে হাসাহাসি করে। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গেই যদি ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেন না, তাহলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কি ধরণের অশোভন ব্যবহার করেন তা বুঝতে পারা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে তারেক রহমানের মিশন বাস্তবায়নে জগলুল হায়দারের সম্পৃক্ততা প্রমাণ পাওয়া গেলেই তার বিরুদ্ধে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেটির জন্য শুধু অপেক্ষা করেন।
চলবে...