সংসদেও চাপের মুখে শীর্ষ সন্ত্রাসী জগলুল এমপি

- ২৬-Jun-২০১৯ ০১:৫৭ অপরাহ্ন
:: উৎপল দাস ::
একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশন চলছে। চলতি অধিবেশনে অন্যান্য এমপি মন্ত্রীরা সরব থাকলেও এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার চাপের মুখে রয়েছেন। ভোরের পাতায় এমপি জললুল হায়দারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই তার কাছে এসব বিষয় নিয়ে জানতে চেয়েছেন সংসদের একাধিক এমপি। সংসদে উপস্থিত কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দেন এস এম জগলুল হায়দার। সেখানে কয়েকজন এমপি জগলুল হায়দারের কাছ থেকে সরাসরি নারী নির্যাতন বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন, তারেক রহমানের সঙ্গে তার আপন ছোট ভাইয়ের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তখন মাথা নিচু করে সংসদে দাঁড়িয়ে থাকেন বিতর্কিত এই সংসদ সদস্য। কোনো জবাব দিতে না পারায় একজন সিনিয়র মন্ত্রী তাকে বলেছেন, ‘জগলুল, তোমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, এগুলো তদন্ত শুরু হয়েছে। সময় মতো বুঝতে পারবে। কারণ শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতিবাজ , জলদস্যু, রাজনীতিতে ডিগবাজি খাওয়া, জামায়াত বিএনপির পৃষ্ঠপোষক কেউ পার পাবে না।’
এমপি এস এম জগলুল হায়দারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে ষষ্ঠ পর্ব।
সংসদ সূত্র আরো জানিয়েছে, এমপি জগলুল হায়দারের ওপর তিন মাস আগে থেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগ্য লোক না থাকায় সাতক্ষীরা ৪ আসনে দ্বিতীয় বার সুকৌশলে নৌকার মনোনয়ন বাগিয়ে দেন একসময় সুন্দরবনের বাঘ হত্যা ও চোরাচালানের অন্যতম মূল হোতা জগলুল হায়দার। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নিজেও যখন সাতক্ষীরা ৪ আসনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন, তখনই মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এমপি জগলুল হায়দারের।
এরপর এরশাদকে ম্যানেজ করতে শ্যামনগরের এক চক্রবর্তী পরিবারের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা আদায় করেন। এ টাকা দেয়ার কথা নিজেই স্বীকার করেছেন শক্তি চক্রবর্তী নামের জগলুল হায়দারের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর। যদিও শক্তি চক্রবর্তীর সঙ্গে এমপি জগলুলের এখন সম্পর্ক খুবই বাজে। টাকা ফেরত চাওয়ার কারণেই এমপি জগলুল হায়দারের নিজের ছেলে রাজীব হায়দার শক্তি চক্রবর্তীর ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। এখনো শক্তি চক্রবর্তীর ছেলে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এবারের সংসদে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের কারণে সংসদ যথেষ্ট প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু সরকার দলীয় এমপি জগলুল হায়দার দল এবং নিজের ভাবমূর্তিতে বিতর্কিত করার কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক এমপি ভোরের পাতাকে বলেন, জগলুল হায়দার আমাদের সহকর্মী সেই পরিচয় দিতেও এখন লজ্জা করে। কেননা নিজের শত অপরাধগুলো গোপন রাখতেই তিনি লোক দেখানো মানবতার কাজ করে যাচ্ছে। তবে তিনি যে কোনো এলাকায় ডাব অথব তরমুজ কিনে গরিব শ্রমিকদের খাওয়ানোর জন্য নিজের পকেট থেকে একটি টাকাও খরচ করেনি। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে তরমুজের টাকা নিয়ে সেই টাকায় তিনি মানবিকতা দেখিয়েছেন। এসব বাদ দিয়ে নিজের এলাকার উন্নয়ন এবং আইন প্রণেতা হিসাবে কাজ করার জন্য জগলুল হায়দারের ওপর নির্দেশাও আসছে।
জগলুল হায়দার এই সংসদের একমাত্র আলোচিত বা সমালোচিত সংসদ যার বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপন করা, নিজের আপন ভাইদের জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ করার সুযোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নাসশকতা মামলায় জামায়াত বিএনপির লোকজনকেও পৃষ্ঠপোষকতা
করেন এমপি জগলুল হায়দার। তবে নিজের নামে কোনো মামলা নেই দাবি করা জগলুল হায়দারের বিরুদ্ধে পুলিশের গায়ে হাত তোলা, সীমান্ত রক্ষী (বাহিনী বিজিবি)সঙ্গে মারামারিও অভিযোগও রয়েছে। মামলাও রয়েছে।
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে জামায়াতের প্রার্থী মওলানা ফারুক হোসেনকে ১ নং ভরুলিয়া ইয়নিয়নের জয়ী করে নিয়ে আসেন এমপি জগলুল হায়দার। তার নিকট আত্নীয় ও ছোটবেলার বন্ধু হওয়ার কারণে আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করতেও কুণ্ঠিত হননি বিতর্কিত এমপি জগলুল হায়দার। এছাড়া ৭ নং মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নেও বিএনপির প্রার্থী কাসেম মোড়লের পক্ষে গোপনে কাজ করেছেন জগলুল হায়দার। সবচে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, গত বছরের শেষ দিকে বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগের ৩৫ জন এমপির যে তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দেয়া হয়েছিল সেখানে খুলনা অঞ্চল থেকে ৫ জন এমপির মধ্যে জগলুল হায়দার শীর্ষে ছিলেন। নানা সময় গায়েবি মামলাতে নিজ দলের নেতাকর্মীদের জেলে পাঠিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। শুধু ব্যাক্তিস্বার্থে তিনি পুলিশ প্রশাসনকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতেন।
উল্লেখ্য,জগলুল হায়দারে সামনে ভবিষ্যত অন্ধকারে। কেননা যেখানে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসনার সুদৃষ্টি ভোরের পাতায় জগলুল হায়দারের মুখোশ উন্মোচণের পর। তিনি নিজেও এসএম জগলুল হায়দারের বিরুদ্ধে বিস্তারিত প্রতিবেদনগুলো খতিতে দেখতে একজন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামীল লীগকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকেই জগলুল হায়দারকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বা গড ফাদার বলে উল্লেখ করেছে খোদ স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব আফরোজা পারবিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জাননো হয়। যেখানে জগলুর গডফাদার, শ্যাম নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জলদস্যু হিসাবে চিহ্নিত করা হরেছে খোদ স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়।
এসব অভিযোগ নিয়ে এস এম জগলুল হায়দারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।