বরগুনায় রিফাত হত্যাকারীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছেন নেপথ্য কারিগর দেলোয়ার হোসেন!

  • ২৭-Jun-২০১৯ ০১:০৩ অপরাহ্ন
Ads

:: উৎপল দাস ::

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে যুবক হত্যার কুশীলবদের রক্ষায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের নগ্ন হস্তক্ষেপের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার  ১২ জন আসামির মধ্যে অন্যতম প্রধান আসামি রিফাত ফরাজী এবং রিশান ফরাজী জেলা  পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে এবং প্রধান আসামি নয়ন বন্ড তার নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম প্রধান।     

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বুধবার রাতে দেলোয়ার হোসেনের বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসায়, নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী, আয়েশা সিদ্দিকা  মিন্নি এবং তার পরিবারের লোকজনকে ধরে এনে আসামিদের বিরুদ্ধে  মুখ না খোলার জন্য হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে। 

তারা আরও বলেন,  হত্যা মামলার প্রধান আসামী নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজীসহ অন্যরা  দেলোয়ার হোসেনের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজির পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে  মাদক ব্যবসা, ছাত্রদের ল্যাপটপ, মোবাইল, টাকা পয়সা ইত্যাদি ছিনতাই করাসহ বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত ছিলো।  এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে  দেলোয়ার হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উলটো অপদস্ত  হয়েছেন অভিযোগকারীরা। অভিযোগ রয়েছে দেলোয়ার হোসেনের ছত্রছায়ায় আসামী নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজী  ২০১৭ সালে তরিকুল ইসলাম নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করেছিলো।  

এ প্রসঙ্গে তরিকুল জানান, একদিন সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে রিফাত ফরাজী তাকে কুপিয়ে যখম করার হুমকি দেয়। তখন রিফাত ফরাজীর ভয়ে তিনি দেড় মাস রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে না গিয়ে আধা কিলোমিটার পথ ঘুরে তার বাসায় যাওয়া আসা করতে শুরু করে। কিন্তু হুমকি দেয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে তরিকুল তার বাসায় যাওয়ার পথে রিফাত ফরাজী এবং নয়ন বন্ড দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার মাথায় গুরুতর যখম করে।  এ ঘটনায় তরিকুলের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের  করেন। কিন্তু  দেলোয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে সে মামলার তদন্তও ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছিলেন।  তরিকুল আরও জানান, নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজী এর আগেও বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হলেও, অজ্ঞাত কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বের হয়ে আসতেন।    

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন,  একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ইমরান টিটুকে আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে বারবার জানতে চাইলেও, দেলোয়ার হোসেনের লাঠিয়াল এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে তিনি তা আড়াল করে যান।  তারা বলেন, শুধু ইমরান টিটু নন, দেলোয়ারের ভয়ে বরগুনার কোনো সাংবাদিকই তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে আসামিদের সাথে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রকাশ করেন নি, প্রাণের ভয়ে তারা করবেনও না, তিনি এতটাই ভয়ংকর।     

তারা আরও বলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়, এই মামলায় আসামি গ্রেফতার, তদন্ত কার্যক্রম কিংবা বিচার প্রক্রিয়ার কোনোটাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে না। তাই তারা মামলার বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য দেলোয়ার হোসেনকে তার দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদানের আহবান জানিয়েছেন।            

এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট রহমাতুর নোমান বলেন, আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, অ্যাডভোকেট মোতালেব মিয়ার পরামর্শে, ভায়রাপুত্র রিফাত ফরাজীর একটি অপকর্ম সম্পর্কে  জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনকে ফোন করে অবহিত করি। পরবর্তীতে তিনি সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে  কি পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটা জানতে চাই। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব তখন যা বলেছিলেন, সেটা শুনে আমি গভীরভাবে হতাশ হয়েছিলাম। জনাব দেলোয়ার হোসেন সরাসরি আমাকে বলেন যে, নোমান তুমি যা বলেছ, সেটা সত্যি নয়। রিফাত এমন কোন কাজ করতেই পারে না, ও এমন ছেলেই নয়।  তাছাড়া আমি নিজেও খবর নিয়ে দেখেছি যে, রিফাত কোন অপরাধ করেনি। অথচ, রিফাত ফরাজীর অপরাধের তথ্য প্রমাণ যখন আমরা তার মেয়ের মাধ্যমে তার কাছে পাঠিয়েছিলাম, তিনি বলেছিলেন, এর কঠিন বিচার হবে। 

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে  জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বারবার  বহিষ্কৃত নেতা মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বরগুনা- ১ আসন (সদর-আমতলী-তালতলী) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকার বিকল্প প্রার্থী আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে ব্যবহার করে জেলা আওয়ামী লীগের তিনটি প্রধান কার্যালয় দখলে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিলো। তখন সরেজমিন ঘুরে জানা গিয়েছিলো, ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক বলে বিবেচিত কর্মীরা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতৃবৃন্দরা দেলোয়ারের লাঠিয়াল এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে  কার্যালয়ে ঢুকতে পারছিলেন না। ওইসময়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাপ্ত বিভিন্ন ছবিতে রিফাত শরীফ  হত্যা মামলার প্রধান আসামী নয়ন বন্ড এবং রিফাত ফরাজীকে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দেলোয়ার হোসেন এর পাশে ঘুরতে দেখা গেছে।

Ads
Ads