গণপূর্তের শীর্ষ ৬ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত, মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা!

- ১-Jul-২০১৯ ০৬:২৫ পূর্বাহ্ণ
:: উৎপল দাস ::
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি যে কয়েকটি খাতে বা বিভাগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম গণপূর্ত অধিদপ্তর অন্যতম। সরকার প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এই অধিদপ্তরের দুর্নীতি রোধ করতে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে অভিন্ন সুরে ঘোষণা দিয়েছেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যিনিই হবেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেননা বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করে সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৬ জন শীর্ষ দুনীতিবাজ কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। দুর্নীতির সুনিদিষ্ট তথ্য প্রমাণ, কিভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, কোথায় কোথায় কি কি সম্পদ গড়েছেন, বিদেশে মুদ্রা পাচার, সন্তান পড়ানোর নামে কয়েকদিন পর পর বিদেশ গিয়ে টাকা পাচার, অথবা প্রতিবেশি দেশে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার, যোগ্যতাহীন কোম্পানিকে অধিক কমিশনের আশায় অনৈতিকভাবে কোটি কোটি টাকার কাজ দিয়ে দেয়া এবং সময়মতো সেই কাজ করতে না পারার মতো অভিযোগ রয়েছে এই শীর্ষ ৬ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
গত কয়েকমাস ধরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিয়ে কাজ করা সরকারের নির্ভরযোগ্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা যারা দুর্নীতিবাজদের এই তালিকা তৈরি করেছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে যে ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে তাদের নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকার শীর্ষেই রয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতি. প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা মেট্রো) উৎপল কুমার দে। নিজেকে খুব ভালো মানুষ দাবি করা উৎপল কুমার দে’ সকল অপকর্মের সারথী হিসাবে তার ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা ওমর ফারুক নিজেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন, জাতীয় সংসদ ভবনের নির্বাহী প্রকৌশলী(সিভিল)ফজলুল হক মধু, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ডিভিশন ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত আলী, আজিমপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন এবং সংসদ ভবনের ই/এম স্বর্ণেন্দু শেখর মণ্ডল।
প্রাথমিকভাবে এই ৫ জন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নাম সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তাদের অতীত ও বর্তমান দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে আনা হয়েছে। তাদের নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম দিনে থাকছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা মেট্রো) উৎপল কুমার দে এবং তার ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা ওমর ফারুককে নিয়ে। ধারাবাহিকভাবে বাকি ৪ জনের প্রতিবেদন ভোরের পাতায় প্রকাশ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গণপূর্ত বিভাগের সবচে সুযোগ সন্ধানী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত উৎপল কুমার দে। তার সকল অপকর্মগুলোর একমাত্র সাক্ষী ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা ওমর ফারুক। নিজের মুখে ঘুষ বা কমিশন না চাইলেও ওমর ফারুককে দিয়ে সেই চাওয়াটা ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পটু এই উৎপল কুমার দে। তবে গত কয়েক মাস আগে একজন ঠিকাদারের সঙ্গে কাজ পাইয়ে দিতে মুঠোফোনে নিজেই টাকা চেয়ে নিজের একাউন্ট নম্বর দিয়েছিলেন উৎপল কুমার দে। সুচতুর ঠিকাদার সেই কথাগুলোকে রেকর্ডও করে রেখেছেন। গোয়েন্দারা সেই রেকর্ড শুনে বিস্মিতও হয়েছেন। কিভাবে নিয়ম ভেঙে শুধু ২ শতাংশ কমিশন লাভের আশায় একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কিভাবে কোটি কোটি টাকার দরপত্র নয় ছয় করে নিজেদের টাকা আদায় করে নিচ্ছেন তা নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত লেখা রয়েছে।
এছাড়া কেরানিগঞ্জের কারাগার কেলেংকারিতে ফেঁসে যাওয়া কর্মকর্তা উৎপল কুমার দে নিজেই কৌশলে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনটি সমঝোতার মাধ্যমে আটকে রেখেছেন বলে জানা গেছে। দুর্নীতির তদন্ত ফাইল ধামাচাপা দেয়ার বিষয়ে গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতিবাজদের কোনো ঠাঁই গণপূর্তে হবে না। কেননা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্যই তিনি এখানে বসেছেন।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’র বিরুদ্ধে আরো একটি অভিযোগ নিয়ে গোয়েন্দারা কাজ শুরু করেছেন। তার সন্তান কানাডায় পড়াশুনা করেন। সেখানে তিনি নিয়মিত টাকা পাঠান। অনেক সময় ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াও সুকৌশলে টাকা পাঠাচ্ছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রতিবেশি একটি দেশের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেছেন উৎপল কুমার দে’র ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। তাদের দাবি প্রতিবেশি দেশটিতে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করেন তিনি। এই অভিযোগটিও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করছেন ওমর ফারুক। উৎপল কুমার দে’র সকল অপকর্ম আর দুর্নীতির প্রধান সঙ্গী এই ওমর ফারুক। পবিত্র হ্বজে লোক পাঠানোর নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে ওমরের বিরুদ্ধে। উৎপল কুমারের দুর্নীতির সহযোগী হিসাবে অবৈধভাবে টাকা কামিয়ে নিয়ে ঢাকায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। তবে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে সহকর্মী বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
(চলবে...)