অশুভ সিন্ডিকেটের কবলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ষড়যন্ত্র চলছে

  • ৯-Jul-২০১৯ ০১:৫২ অপরাহ্ন
Ads

:: উৎপল দাস ::

বৃহত্তর উত্তরবঙ্গেরে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১২ অক্টোবর ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু পর থেকেই একটি অশুভ সিন্ডিকেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের আখের গুছাতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে। এ ষড়যন্ত্র এখনো চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে অশুভ একটি সিন্ডিকেট এখনো চলমান রয়েছে। সিন্ডিকেটটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নানাভাবে চাপে রাখারও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে অশুভ সিন্ডিকেটের মূল হোতা সাবেক ভিসি অধ্যাপক নূর-উন-নবী এবং বর্তমানে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজী মাজহারুল আনোয়ার নাম ভোরের পাতার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।  তাদের এই অশুভ সিন্ডিকেট মিলে নিজেদের স্বার্থের ভাগ ঠিক মতো বুঝে নিতে না পেরে বর্তমান ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিময়, দুর্নীতি আর অশুভ সিন্ডিকেটের অপৎপরতা নিয়ে ভোরের পাতার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব। 

বেগম বিশ্ববদ্যিালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিশ্ববদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করার পর দীর্ষদিন পর তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে অশুভ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তবে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথাম ভিসি ড. এম. লুত্‌ফর রাহমান নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দিন শিক্ষার্থীদের নৃত্য পরিবেশন করেন। সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই বর্তমান ভিসি কলিমউল্লাহ এমনটা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষর্থী। এছাড়া রংপুর অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত সত্য হচ্ছে রঙ্গ রসে ভরপুর, এর নাস রংপুর। এ ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই তিনি নেচেছেন বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই, যারা তাদের প্রতিষ্ঠানটিকে আরো বেশি গতিশীল ও আধুনিক করতে চান। 

এদিকে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে  নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ৪র্থ উপাচার্য হিসাবে মাহমান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং দেশের সবচে সুশৃঙ্খল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালস (বিউপি)’র সাবেক প্রোভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তাকে নিয়োগ দেয়ার আগে সাবেক ভিসি অধ্যাপক নূর-উন-নবীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রমাণের পর অসম্মানজনক বিদায়ের পর ২৬ দিন উপাচার্য পদটিই শূণ্য ছিল। এমন ঝাঞ্চা-বিক্ষুদ্ধ এক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। 

উল্লেখ্য, সাবেক ভিসি অধ্যাপক নূর-উন-নবীর বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণের পর তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এমনকি অধ্যাপক নূর-উন-নবীকে তার শয়নকক্ষে আটক রেখে লাঞ্ছিতও  করা হয়েছিল। এছাড়া দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই তিনি মেয়াদ শেষ করার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এ সরিয়ে দেয়ার কারণেই বর্তমানে তিনি আবার দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে আঁতাত করে অশুভ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অপমানের বদলা হিসাবে তিনি এখন বর্তমান ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির সভাপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করে যাওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। 

এদিকে, সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের একজন হিসাবে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালকও করা হয়েছিল। কিন্তু এ দায়িত্বপালনে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ
 হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির ভিত্তিতে  নিয়ম মেনে দরপত্র আহ্বান করে ক্যাফটেরিয়ার দায়িত্ববার বুঝিয়ে দেয়া হয় একটি কোম্পানিকে। ২ বছর ধরে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক হিসাবে দায়িত্বপালন করার সময় তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও শুধু গাজী মাজহারুল আনোয়ারের অনিচ্ছার কারণে ক্যাফেটেরিয়াটি চালু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ভিসি কলিমউল্লাহ শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুবিধার জন্য ১০ বছরের অভিজ্ঞতাস্পন্ন একটি বেসরকারি কোম্পানিকে কাজটি বুজিয়ে দেন নিয়ম মেনেই। ফলে ভিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে এখন তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন তিনি। 


অশুভ সিন্ডিকেটের মূল হোতা সাবেক ভিসি অধ্যাপক নূর-উন-নবীকে সন্ধ্যা ৭ টা ১৪ মিনিটে ভোরের পাতা অফিস থেকে ফোন করা হলে তার ব্যবহৃত গ্রামীণ ফোন অপারেটরের নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।  তবে বর্তমানে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজী মাজহারুল আনোয়ার টেলিফোনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি কোনো ষড়যন্ত্র করছি না। দুই বছরে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালকের দায়িত্বে থাকার পরও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে নিজেই অব্যাহতি নিয়েছি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। 

এদিকে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের কাজই ষড়যন্ত্র করা। ষড়যন্ত্র করে ভালো কাজ কখনো থামিয়ে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতির বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। এ কারণে যারা দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি করে আসছিলেন তারা সমস্যায় পরেছেন। কিন্তু নীতির প্রশ্নে আমি আপোসহীনভাবেই কাজ করে যাবে। যত বাধাই আসুক না কেন, আধুনিক  ও মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি আমরা সফল হবো। 

উল্লেখ্য, রংপুর বিভাগের একমাত্র পুর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরুর পর ২০০৯ সালে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মরণে নাম পরিবর্তিত হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। রংপুর বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষায় এই বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান রাখছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৭০০০ শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে।

Ads
Ads