সন্ত্রাসী এবং আত্নীয়তার জালে আটকা পড়ার আশঙ্কায় ইবি ছাত্রলীগ!

  • ৯-Jul-২০১৯ ০৩:০২ অপরাহ্ন
Ads

:: উৎপল দাস ::

স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ছিল একসময় জামাত শিবিরের নির্ভয় এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ছাত্রলীগ অনেকটা কোণঠাসা হয়েই রাজনীতি করেছে।  দিনবদলের পরিক্রমায় শিবির- ছাত্রদল কাউকেই আর দেখা যাই না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই গাঢাকা দিয়ে ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ করে মিলেমিশেই চলছে জামায়াত-শিবিরের বসবাস। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই-তিন বছর ধরে ইবি ছাত্রলীগ বেশ ভালো অবস্থানেই ছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং তাদের প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবিরমুক্তও ঘোষণা করা হয়।  আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধু  শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকার কারণে।  কিন্তু বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ছাত্রলীগের এই নাজুক পরিস্থিতির মূল কারণ হচ্ছে,  দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত থাকা। এরই মধ্যে স্থগিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেয়ার গুঞ্জন উঠেছে।  আর এই গুঞ্জন উঠার পর থেকেই চলছে পদপ্রত্যাশীদের লবিং এবং তদবির।  তাদের অনেকেই আবার  আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা, যার বিরুদ্ধে সুন্দরবনে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মতো অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের কুষ্টিয়া অঞ্চলের সেই প্রভাবশালী নেতা ছাড়াও জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের সম্পাদকীয় পদে থাকার পরও  কেন্দ্রীয় নেতার এ পি এস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভিসি,  প্রো ভিসি পর্যন্ত ইবি ছাত্রলীগের শীর্ষ  দুই পদের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে দেন দরবার করছেন নিয়মিত। 


আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতার নাম ভাঙিয়ে তার এপিএস এবং নেতার কথিত ভাগিনা পরিচয় দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রোভিসি ইতিমধ্যেই শোভন-রাব্বানী কাছে বিতর্কিত দুইজনের নাম প্রস্তাব করেছেন বলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদমর্যাদার এক নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন যেন তাদের পছন্দের তালিকায় থাকা দুজনকে নেতা বানানো হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অভিন্ন সুরেই ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেছেন, যাচাই বাছাই চলছে। কিন্তু এমন কাউকেই নেতা বানানো হবে না, যার বিরুদ্ধে সংগঠনের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করার প্রমাণিত অভিযোগ রয়েছে।  তারা দুজনেই বলেছেন, শেখ হাসিনা আমাদের নেতা বানিয়েছেন। আমরা শুধু তার কাছেই দায়বদ্ধ। আওয়ামী লীগের যতই প্রভাবশালী নেতা হোক না কেন, আপার (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো বিতর্কিতকে নেতা বানাবে না। 

এদিকে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার এপিএস এবং কথিত ভাগিনা প্রোভিসির পছন্দের তালিকায়  সব থেকে এগিয়ে আছেন ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত। যার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ভাংচুরের অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৬ সালে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। তৎকালীন সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্র ছাত্রীরা তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন পর্যন্ত করেন। তাছাড়াও পুলিশের কাছ থেকে মদ্যপ আসামী ছিনতাই,ক্যাম্পাসে রমরমা মাদক ব্যবসা করা, টেন্ডারবাজিসহ ক্যাম্পাসে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরসহ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা  বিভিন্ন মানুষের  ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে চাঁদাবাজি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে আরাফাতের বিরুদ্ধে।

ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই বাড়ি থাকার কারণে  আরাফাত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করে চলেছেন অনেক দিন ধরেই। তার আপন চাচা আলী রেজা সিদ্দীকি ওরফে কালু বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন। তিনি দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন।  এখন শীর্ষ সন্ত্রাসী কোথায় আছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই বলছেন, তিনি বাংলাদেশেই রয়েছেন।

এছাড়াও পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতার পক্ষের লোক হিসাবে তালিকায় আছেন মিজানুর রহমান লালন। যার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।  নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এবং তিনি তার আপন ভগ্নীপতিকে প্রভাব খাটিয়ে নিজ বিভাগের শিক্ষক বানিয়েছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।  তাছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে এক প্রবাসীর কয়েক লাখ টাকা আত্নসাতের  অভিযোগ রয়েছে ।মেহেরপুরে বাড়ি হলেও ইবি ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার আশাই  কুষ্টিয়া সদরের ভোটার হয়েছেন। 

এ বিষয়ে বিতর্কিত দুই প্রার্থীর মধ্যে মিজানুর রহমান লালন কয়েকদিন আগেই ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য নয়। তবে নিজ বিভাগে ভগ্নীপতির চাকরি দিতে সহায়তা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো ধরণের প্রভাব খাটাননি বলে দাবি করেন। তবে নিজ এলাকা  মেহেরপুরের নিকট আত্নীয়র কাছ থেকে অর্থ আত্নসাত এবং ভোটার স্থানের পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে তিনি এ প্রতিবেদকে ম্যানেজ করার জন্য ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে ফোন করার চেষ্টা করেছেন। 

অভিযুক্ত আরেক পদপ্রত্যাশী ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে মঙ্গলবার ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। 

Ads
Ads