বজ্রপাতে সারাদেশে ১৪ জনের প্রাণহানি

- ১৩-Jul-২০১৯ ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
সারাদেশে বজ্রপাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ বজ্রপাত হয়। এর মধ্যে পাবনার বেড়ায় চারজন, চুয়াডাঙ্গায় তিনজন, ময়মনসিংহ ও সুনামগগঞ্জে দুজন এবং কুমিল্লা, নেত্রকোনা ও মাগুরায় একজন করে নিহত হয়েছেন।
পাবনা: পাবনার বেড়ায় বজ্রপাতে বাবা, ছেলেসহ চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাচুরিয়া গ্রামে দুপুর সোয়া ২ টার সময় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাচুরিয়ার মোতালেব সরদার (৫৫), তার ছেলে মো. ফরিদ সরদার (২২), মো. শরিফ সরদার (১৮) ও একই গ্রামের মৃত ছকির উদ্দিনের ছেলে রহম আলী (৫৫) পাচুরিয়া ফুটবল খেলার মাঠের পাশের একটি ডোবাতে পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছিলেন ও ধোয়ার কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টি শুরু হয় ও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। পরে আশপাশের শ্রমিকরা তাদের পানির মধ্য থেকে উদ্ধার করে।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খড়ত গ্রামে কলা কেটে ট্রাকে বোঝাই করার সময় বজ্রপাতের ঘটনায় মেহেরপুরের তিন কৃষি শ্রমিক নিহত হয়েছে।
শনিবার বিকাল ৫টার দিকে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-মেহেরপুর সদর উপজেলার কলাইডাঙ্গা গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে হুদা মিয়া (৩২), বরকত আলীর ছেলে হামিদুল হক (৩৫) ও মকবুল হোসেনের ছেলে আলামিন হোসেন (৩৫)।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় হুদা, হামিদুল ও আলামিন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খড়ত গ্রামে কলা কেটে ট্রাকে বোঝাই করছিলেন। এসময় বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতের ঘটনায় তিন জন আহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ফুলপুরে বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন উপজেলার পয়ারী ইউনিয়নের কৃষক জামাল উদ্দিন (৪০) ও বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের খামার ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া। আজ দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, শনিবার দুপুরে উপজেলা পয়ারী গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন বাড়ির পাশে জমিতে ধানের চারা রোপন করতে যাওয়ার পথে আকস্মিক তার ওপর বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফুলপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেছে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। নিহত জামাল উদ্দিন ৪ সন্তানের জনক।
এদিকে পৃথক ঘটনায় আজ দুপুর বারোটায় উপজেলার বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে খামার ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া তার পালিত হাঁসগুলোকে বিলে নিয়ে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে আবারও ব্রজপাতে একই সঙ্গে বাবা ও ছেলে প্রাণ হারিয়েছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাহিরপুর উপজেলার কানামইয়া হাওরে মাছ ধারর সময় নৌকায় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই বাবা হারিদুল মিয়া (৪২) ও পুত্র তারা মিয়া (১২) মারা যান। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এর আগে গত ১০ জুলাই জামালগঞ্জ উপজেলায় স্কুল থেকে প্রিয় সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হেলিপ্যাড মাঠে বজ্রাঘাতে মারা যান বাবা সাবিতুল ও পুত্র অন্তর।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকটিলা গ্রামের মৎস্যজীবী হারিদুল তার পুত্র তারা মিয়াকে নিয়ে বাড়ির সামনের কানামইয়া হাওরে চাঁই (বাঁশ দিয়ে বানানো মাছ ধরার বিশেষ ডুবন্ত যন্ত্র) দিয়ে মাছ ধরতে যান। সাড়ে ১০টার সময় বজ্রাঘাতে নৌকা থেকে পড়ে যান বাবা ও ছেলে। দুজনই ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাড়ি থেকে নিহতের স্ত্রী ও মা নৌকার ওপরে স্বামী ও পুত্রকে না দেখে চিৎকার শুরু করেন। প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খুঁজে পিতা ও পুত্রের লাশ উদ্ধার করেছেন।
কুমিল্লা: কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি চলাকালে ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত রিকশা) চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন চালক আবু কাউসার (৩০)। শুক্রবার রাতে উপজেলার নাগাইশ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কাউসার ওই গ্রামের মৃত আবদু মিয়ার পুত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর প্রবাসে চাকরি শেষে ৩/৪ মাস পূর্বে দেশে ফেরেন কাউসার। এরপর সে একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক কিনে নাগাইশ-বড়দুশিয়া-শশীদল সড়কে যাত্রী পরিবহন করতেন। প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই দিনভর ইজিবাইক চালিয়ে রাতে বাড়ি ফেরেন তিনি। পরে বৃষ্টির মধ্যে ভেজা শরীর নিয়ে পার্শ্ববর্তী ঘরে ইজিবাইকটি চার্জ দিতে গেলে বিদ্যুতের তারে শরীর জড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কাউসার। কিছুক্ষণ পর বাড়ির লোকজন দেখতে পেয়ে দ্রুত গিয়ে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কাউসার।
মাগুরা: মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ধোয়াইল গ্রামে আজ শনিবার বিকালে মাজেদ মণ্ডল (৪৫) নামে এক ব্যক্তি বজ্র্রপাতে নিহত হয়েছেন। তিনি ওই গ্রামের দরবেশ মণ্ডলের ছেলে।
এলাকাবাসী জানায়, বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে মাজেদ মণ্ডল বাড়ির পাশে পাট ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হঠাৎ আঘাত হানলে তিনি গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় গ্রামের পাশে পতিত জায়গায় গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য যাওয়ার পথে বজ্রপাতে এনামুল হক (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে।
আজ শনিবার সকালে কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত এনামুল হক সন্যাসীপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
শনিবার দুপুরে রংছাতি ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক বজ্রপাতে ওই যুবক নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হন এনামুল। তবে বজ্রপাতে এনামুলের সাথে থাকা গরুটির কোনো ক্ষতি হয়নি বলেও জানান তিনি।
পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এনামুলকে মৃত ঘোষণা করেন।