নেত্রকোনায় শিশুর কাটা মাথা কাণ্ডে যে রহস্য জানাল পুলিশ

  • ১৯-Jul-২০১৯ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ
Ads

:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::

প্রকাশ্য দিবালোকে নেত্রকোনার কাটলী এলাকায় একটি নির্মাণাধী ভবনের তৃতীয় তলার পূর্ব পাশের টয়লেটে শিশু সজিবকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রবিন মিয়া। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে ওই ভবন থেকে তার মাথা বিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন নেত্রকোনার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী।

তিনি বলেন, গণপিটুনীতে নিহত যুবকের নাম রবিন মিয়া (৩০)। তিনি শহরের পূর্ব কাটলি এলাকার এখলাছুর রহমানের ছেলে। গলা কেটে হত্যার শিকার শিশু সজীব একই এলাকার রিকশাচালক রইস উদ্দিনের ছেলে। তারা ওই এলাকায় হিরা মিয়ার ভাড়া বাসায় থাকতো। রিকশাচালক রইস উদ্দিন ছিলেন রবিনের প্রতিবেশী। তাদের মধ্যে বেশ সুসম্পর্কই ছিল। রবিন পেশায় রিক্সা চালক এবং মাদকাসক্ত।

শিশু সজিবের হত্যাকারী রবিন নেত্রকোণার নিউটাউন অনন্ত পুকুরপাড়ে তারেক মিয়ার বাসার গেটের সামনে গেলে স্থানীয় লোকজন তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে ধরে ফেলে এবং গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে রবিন ঘটনাস্থলে নিহত হয়।

সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকারীর লাশ উদ্ধার করে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। বেলা সাড়ে তিনটায় কাটলীর নির্মানাধীন ভবনের তৃতীয় তলার পূর্ব পাশের টয়লেটে একটি মাথা বিহীন দেহ পাওয়া যায় যা শিশু সজিবের বলে তার পিতামাতা শনাক্ত করে।

কেন এ হত্যাকাণ্ড জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন: ধারণা করা হচ্ছে মনের পুরনো কোন জেদ বা বিকৃত মানসিকতা থেকেই সজিবের সাথে নির্মম ও বর্বরোচিত এ ঘটনা ঘটেছে। শিশু সজিবের গলা কাটার বিষয়টি শুধুই একটি হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ঘটনাটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব অথবা পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা হতে পারে।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ছেলে ধরা বা পদ্মা সেতু গুজবের কোন সম্পর্ক নেই জানিয়ে জয়দেব চৌধুরী বলেন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তদন্তাধীন বিষয়ে মনগড়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালানো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপরাধ। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলে ধরা ও পদ্মা সেতুর গুজবের সাথে মিশিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে যা নিতান্তই বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য। ঘটনাটি পদ্মা সেতুর গুজবের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই। পদ্মা সেতু ও ছেলে ধরা সংক্রান্ত গুজবে কান না দেয়ার জন্য নেত্রকোণাসহ দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।

তিনি বলেন, রবিন ছিল ঐ শিশুরই প্রতিবেশী এবং এলাকার চিহ্নিত মাদকাসক্ত যুবক। যদি গণপিটুনি দিয়ে রবিনকে না মেরে ফেলা হত তবে প্রকৃত ঘটনা পুলিশের মাধ্যমে অথবা সরাসরি তার মুখ থেকে দেশবাসী দ্রুত সময়েই শুনতে পারত। আইন কারো হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই। অপরিচিতি হলেই সন্দেহ করে কাউকে মারপিট করা যাবে না। এ ধরণের ভুল সিদ্ধান্তে নিজেও অপরাধী হয়ে যেতে পারেন। এতে যে কাউকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। এলাকা, পাড়া বা মহল্লায় অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আগে তার সাথে কথা বলুন এবং তার পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হন। তারপর কোথাও কোন সমস্যা মনে হলে পুলিশকে সংবাদ দিন।

জয়দেব চৌধুরী বলেন, পুলিশ উভয় লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে নেত্রকোণা মডেল থানায় দুটি পৃথক হত্যা মামলা করা হয়েছে।

Ads
Ads