বহিষ্কার হচ্ছেন নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বাবু!

- ২২-Jul-২০১৯ ০২:৪৯ অপরাহ্ন
:: সিনিয়র প্রতিবেদক ::
নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসহাক খলিল বাবুকে সংগঠন বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা এবং শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্টের দায়ে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। কেননা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা এবং তাকে অনৈতিক উপায়ে চাপে রাখতে বিবাহিত বাবু এখন আর শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের আদর্শের সৈনিক হিসাবে কাজ করছেন না বলেও কেন্দ্রীয় শীর্ষ দুই নেতার কাছে সাংগঠনিক প্রতিবেদন এসেছে। এই প্রতিবেদনের আলোকে ইসহাক খলিল বাবুকে প্রথমে নিজের অপকর্মের দায় স্বীকার করে ছাত্রলীগের নরসিংদী জেলা সভাপতির পদ নিজেই যেন অব্যাহতি নেন, সেই সুযোগটি দেয়া হবে। যদি তিনি সম্মান নিয়ে ছাত্রলীগ থেকে বিদায় না নেন, তখন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসাবে বহিষ্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগেও নিজস্ব অপরিপক্ক অভিমান থেকে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের বিতর্কিত সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু নিজের ফেসবুক ওয়ালে জানুয়ারি ৩, ২০১৯ বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর এক পদত্যাগ পত্র প্রদান করেছিলেন। একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ছাত্রলীগকে বারবার বিতর্কিত করা এই ইসহাক খান বাবুকে নিয়ে নরসিংদীতে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছিল তখন। নিজেই অব্যাহতিপত্র জমা দেয়ার পর এই বাবু আবার নিজেকে ছাত্রলীগের জেলা ইউনিটের সভাপতি হিসাবে কিভাবে কাজ করেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ব্যাক্তিত্বহীন এই বাবু যিনি নিজে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেন না, এমনকি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে সাথে নিয়েও চলতে পারেন না; তার প্রতি ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের বিশ্বাস ও আস্থা তলানিতে পৌঁছে গেছে।
জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করতে পারার কারণে অনেক বঞ্চিত নেতাকর্মীরা ইসহাক খান বাবুর ওপর চরম বিরক্ত এবং বিক্ষুব্ধ। যেকোনো মুহুর্তে ইসহাক খান বাবুকে বহিষ্কারের পর তাকে দেখে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন কেউ কেউ। এদিকে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভোরের পাতাকে বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি। নিজেই বাবু দুই ধরণের স্বাক্ষর দিয়ে থাকেন। এরপর মিথ্যাচারের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করেন। এসব শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ মানবে না। কারণ শোভন-রাব্বানী শুধুমাত্র শেখ হাসিনার কাছে দায়বদ্ধ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসিংদী জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার মাইম্যান হিসাবে তার স্বার্থ চরিতার্থ করার মিশনে কাজ করছেন এই বাবু। এসব কখনোই মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে তাকে বহিষ্কার করা হবে সংগঠন বিরোধী একক স্বাক্ষরে কমিটি বাণিজ্য করা এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার দায়ে।
উল্লেখ্য, নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন সম্বিলিতভাবে স্বাক্ষর করে প্রকাশ করেন ১৪ জুলাই। কমিটি প্রকাশের পরপরই জেলা যুবলীগের সেই নেতার অদৃশ্য ইশারায় বাবু নিজের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি নিজেই সেখানে স্বাক্ষর করেছিলেন বলে বাবুর ঘনিষ্ঠজনরাই জানিয়েছে। তারা আরো বলেছেন, বাবু আসলে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে নয়; যুবলীগের সেই নেতার পকেট ম্যান হিসাবে কথা বলেন এবং কাজ করেন। বাবুর এমন কাজের কারণে স্থানীয় এমপির কাছেও ছাত্রলীগের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। বাবুর গ্রুপের কমপক্ষে ৭ জন নেতাকর্মী বলেছেন, তার মতো অর্থব লোককে দিয়ে ছাত্রলীগ চালানোর কোনো দরকার নেই। কেননা তিনি ব্যাক্তিস্বার্থে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছেন। এর প্রতিকার চেয়ে কেন্দ্রের নেতাদের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইসহাক খান বাবুর ঘনিষ্ঠজনরা।
এদিকে, নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের বৈধ কমিটিকে বিতর্কিত করতে একক স্বাক্ষরে ইসহাক খান বাবু যুবলীগের সেই নেতার কথায় নতুন করে কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। সংগঠন বিরোধী এমন কাজ করার কারণেই তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বহিষ্কার করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তিনি ভোরের পাতাকে বলেন, শেখ হাসিনার ছাত্রলীগে এমন মানসিক ভারসাম্যহীন লোক জেলা কমিটির সভাপতি থাকতে পারে না। একক স্বাক্ষরে কেন তিনি কমিটি ঘোষণা করবেন, তার সুষ্ঠু ব্যাখা না দিতে পারলে তাকে শুধু বহিষ্কার নয়, ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসবে।