তারেক রহমানের গোপন এজেন্ট নাফিজ এখন আ.লীগ মন্ত্রীর রাজনীতির নিয়ন্ত্রক!

  • ২৮-Jul-২০১৯ ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ
Ads

::উৎপল দাস::

বিদেশে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন, এটা এদেশের মানুষ দৃঢ়চিত্তেই বিশ্বাস করে। কিন্তু বিদেশে বসেও তার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। সময়ে অসময়ে তিনি ফোন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশে নানা সামাজিক আন্দোলনে সংহিসতার ইন্ধন যুগিয়েছেন। ষড়যন্ত্র করাটাই যার একমাত্র পেশায় পরিণত হয়েছে, সেই তারেক রহমান আওয়ামী লীগের মধ্যে নিজের গোপন  কিছু এজেন্ট প্রবেশ করিয়েছেন খুবই সুকৌশলে। তারেক রহমানের এই গোপন এজেন্টরা আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশ করে আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এমনই কয়েকজন তারেক রহমানের গোপন এজেন্ট যারা সরকারের মন্ত্রীদের আশেপাশে থেকে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছেন, তাদের প্রকৃত রাজনৈতিক আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভোরের পাতার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব:

দীর্ঘ ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ভোরের পাতার এ প্রতিবেদক ষড়যন্ত্রকারী তারেক রহমানের গোপন এজেন্টকে খুঁজে বের করেছে। এমনকি তার অতীতের সঙ্গে বর্তমানেও আওয়ামী লীগকে কিভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান চালিয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী, বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীর আশে পাশে থেকে মো. মনিরুজ্জামান নাফিজ ওরফে নাফিজ শিকদার আওয়ামী লীগের যথেষ্ট ক্ষতি করছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান নাফিজ ওরফে নাফিজ শিকদার। পারিবারিকভাবে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পর তিনিও সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পরেন। এমকি বাসাইল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসাবেও কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়। তারপর বিএনপির মেরুদণ্ডহীন রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুকৌশলে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীর সান্নিধ্যে চলে আসেন এই নাফিজ শিকদার। নাফিজের এইসব বিএনপির পরিচয় সবাই জানতো না বলেই, নিজেকে তিনি জাহির করতেন আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসাবে। এমনকি কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙাতে শুরু করতেন। 

কিন্তু মনে মনে মো. মনিরুজ্জামান নাফিজ বিএনপির আদর্শকে বিশেষ করে তারেক রহমানের গোপন সংস্পর্শে চলে আসেন। নজরুল ইসলাম খান একসময় বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হওয়ার পরও তার সঙ্গে নিয়মিত গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। সুচতুর নাফিজ মোবাইলে যোগাযোগ না করলেও তাদের লোকজন মারফত পুরোনো কৌশলে নির্বাচনের সময় কিভাবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা যায়, সে বিষয়ে তারেক রহমানের নির্দেশ পালনও করেন এই নাফিজ। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে প্রকৃতপক্ষে নৌকার পক্ষে জালভোট দিতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন এবং পুলিশ ও সাধারণ জনগণ তাকে গণপিটুনি দিয়েছিল। নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের ওই নির্বাচনের আগের রাতেই এমন কাণ্ড করে পুলিশের হাতে ধরা খাওয়াতে বিএনপি কথা বলার সুযোগ পাবে, এটাই ছিল নাফিজের মিশন। সেই মিশনে তিনি গণধোলাই খাওয়ার পরও পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে কোনো রকমে ছাড়া পেয়ে যান। 

এরপরও এই নাফিজ গোলাম দস্তগীরের আস্থা কিভাবে অর্জন করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তখন কান্নাকাটি করে এই নাফিজ সহজ সরল আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতাকে বুঝিয়ে ফেলেন যে, নৌকার জন্য ভোট কাটতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে তিনি আওয়ামী লীগের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করতেই গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। 

এরপর রূপগঞ্জ উপজেলা ও তারাবো পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটিতে মাদক ব্যবসায়ী, বয়সোর্ত্তীণদের দিয়ে কমিটি করিয়েছেন শেখ হাসিানর ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই। এমনকি রূপগঞ্জ ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনেও এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর হয়ে হস্তক্ষেপ করে নগ্নভাবে। বিএনপি-জামায়াতের আদর্শের বিতর্কিতদের দিয়েই তিনি সংগঠন ভারী করার মিশনে নেমেছেন। কেননা, ছাত্রলীগের উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা তাকে নিয়মিত মাশোরায়া দেন বলেই কেনো অনুষ্ঠানে গেলে নিজেরা চেয়ার ছেড়ে দিয়ে নাফিজকে বসতে দেন। এছাড়া তারেক রহমানের গোপন এজেন্ট এই নাফিজ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রক হওয়ায় তার মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও নিয়মিত রূপগঞ্জে হয়ে থাকে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে। 

এদিকে, নাফিজের মতো একজন কুলাঙ্গার, নষ্ট চরিত্রের  ষড়যন্ত্রকারীর হাত থেকে রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের ওপর থেকে তার নজরদারি বন্ধ করতে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তারা আরো বলেছেন, মন্ত্রী চাইলে তার ব্যক্তিগত কাজে নাফিজকে ব্যবহার করতেই পারেন। কিন্তু আদর্শিক রাজনীতি নষ্ট করার জন্য এমন একজনকে খুব বেশিদিন সুযোগ দেয়া হবে না। তাহলে দল এবং মন্ত্রীর নিজেরই অস্তিত্ব নিয়ে টান দিবে। কেননা গোলাম দস্তগীর গাজীর উজ্জলতর রাজনৈতিক জীবনে নাফিজই এখন একমাত্র কলংকিত অধ্যায়। এই অধ্যায়কে বিদায় না করতে পারলে সবার জন্যই অমঙ্গল হবে। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত নাফিজ ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকে মুঠোফোনে বলেন, বিএনপিকে তিনি ভালোবাসতেন কিন্তু কখনো সক্রিয় রাজনীতি করতেন না। এরপর প্রতিবেদক বাসাইল ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কিভাবে ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন করলে আমতা আমতা করতে থাকেন। প্রশ্নটির উত্তর সরাসরি না দিয়ে তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম খান এবং তারেক রহমানকে তিনি চিনেন না। কিন্তু এ প্রতিবেদকের কাছে নজরুল খানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া রূপগঞ্জের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো রাজনীতি করি না। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে ২৫ বছর ধরে চাকরি করছি। কিন্তু মন্ত্রীর কথায় মাঝে মধ্যে কিছু করতেই হয়। 

আগামী পর্বে: নাফিজের অবৈধ সম্পদ ও নারী কেলেংকারির ফিরিস্তি

Ads
Ads