মিল্কভিটা-আড়ং-প্রাণসহ ১৪ কোম্পানির দুধ উৎপাদন-বিক্রি বন্ধের নির্দেশ

- ২৮-Jul-২০১৯ ১২:২৯ অপরাহ্ন
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় মিল্কভিটা-আড়ং-প্রাণসহ ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের উৎপাদন, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতের নির্দেশ অনুসারে বিএসটিআই কর্তৃক লাইসেন্স প্রদানকৃত পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ল্যাবরেটরি, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (সাভার) ল্যাবরেটরির দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর পর্যালোচনা করে রবিবার (২৮ জুলাই) বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
যে ১৪টি কোম্পানির দুধ উৎপাদন বন্ধ করা হলো-
আফতাব মিল্ক অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্ট লিমিটেড (আফতাব মিল্ক), আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড (ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক), আমেরিকান ডেইরি লিমিটেড, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা), বারো আউলিয়া ডেইরি মিল্ক অ্যান্ড ফুডস লিমিটেড (ডেইরি ফ্রেশ), ব্রাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্ট (আড়ং মিল্ক), ডেনিশ ডেইরি ফার্ম লিমিটেড, ইছামতি ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস (পিওরা), ইগলু ডেইরি লিমিটেড (ইগলু), প্রাণ ডেইরি লিমিটেড (প্রাণ মিল্ক), উত্তরবঙ্গ ডেইরি লিমিটেড, শিলাইদহ ডেইরি (আল্ট্রা মিল্ক), পূর্ববাংলা ডেইরি ফুড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এবং তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস।
আদালতে বিএসটিআইর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। এ বিষয়ে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার অনীক আর হক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম শুনানি করেন।
আদেশের পর ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ১৪টি ব্র্যান্ডের দুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও আমাদের কৃষি খাদ্য, মৎস খাদ্য আইনে গবাদি পশু বা যে কোনো পশুর ওপরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কিন্তু তাদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে বিসিএসআইআর ও আণবিক শক্তি কমিশনের ল্যাবের যে রেজাল্ট, সেখানে দুধের মধ্যে হেভি মেটাল, স্পেশালি লেড অর্থাৎ সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আদালত আজকে স্বতপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল ইস্যু করেছেন যে দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, সেগুলোর উৎপাদন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত এবং রাইট টু লাইফের পরিপন্থি হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং স্বতপ্রণোদিত হয়ে এ রুলের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য এই ১৪টি লাইসেন্সধারী কোম্পানির দুধের প্রোডাকশন, বিপণন, বাজারজাতকরণ এবং এর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ ক্রেতারা যেন না খায়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য; তাদেরকে বারিত করা হয়েছে। যেন এগুলো না করে। অর্থাৎ আগামী পাঁচ সপ্তাহ তারা এগুলো উৎপাদন, বিপণন, সেল করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এর সঙ্গে সঙ্গে বিএসটিআইকে বলা হয়েছে তাদের যে মানদণ্ড রয়েছে সেটাকে আপডেট করার ব্যাপারে কী স্টেপ নিয়েছে সেটা জানানোর জন্য।
রুলে ১৪ কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ আগস্ট দিন ধার্য রেখেছেন।
গত ১৪ জুলাই এক আদেশে বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা, তা এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে চারটি ল্যাবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
চারটি ল্যাব হলো- ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগার।
এরপর চার সংস্থার প্রতিবেদন হাতে পায় বিএসটিআই। এগুলো আদালতে জমা দেয় বিএসটিআই।
এছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তৈরি করা (বিসিএসআইআর ও পরমাণু শক্তি কমিশনের ল্যাবে পরীক্ষা করা) ১১ কোম্পানির দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদনও আদালতে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে উপস্থাপন করা হয় ঢাবি অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের প্রতিবেদনও।
গত বছরের ১৬ মে বাণিজ্যিকভাবে পাস্তুরিত দুধ সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা বাংলানিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. তানভীর আহমেদ।
এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর ২১ মে এক আদেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসচিব এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। কিন্তু কোনো শুনানির আগেই সেদিন তিনি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।
১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটিশনের (বিএসটিআই) দেওয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন- গণমাধ্যমে সংস্থাটির আইনজীবীর দেওয়া এমন বক্তব্যে ৯ জুলাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। ওইদিন আদালতের আদেশ ছাড়া দুধ নিয়ে কোনো প্রকার বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কিছু খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। এরপর দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও পাস্তুরিত দুধের ১০ নমুনার সবক’টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে বলে ১৩ জুলাই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, ঢাবির বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তার এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত চারটি ল্যাবে পরীক্ষার নির্দেশ দেন।