ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ভুয়া সাংবাদিক-মেজরের প্রতরণার ভয়ংকর ফাঁদ

- ২৯-Jul-২০১৯ ০১:৪৮ অপরাহ্ন
::উৎপল দাস::
সরকারের অধিদপ্তরগুলোর মধ্যে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। জনস্বার্থের কথা ভেবে সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরটিকে ঢেলে সাজিয়েছে। তুলনামূলকভাবে দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিয়েই ওষুধ প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু প্রায় ৩ বছর আগে মতিঝিল থেকে মহাখালীতে অফিস স্থানান্তরের পর থেকেই এস এম বদরুল আলম নামের একজন ভুয়া সাংবাদিক ও মেজর পরিচয়দানকারীর ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ শুরু করে। দীর্ঘ এই সময়ে বদরুলের সঙ্গে পত্রিকার হকার হিসাবে থাকা আমিরুল ইসলাম বাদশাও নিজেকে এখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওষুধ প্রশাসনে ভয়ংকর চাঁদাবাজির চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে লিখিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সব শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে নিজেরাই ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন বানিয়ে এনে দুর্নীতির খবর ফাঁস করে দেয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে বাদশা-বদরুল সিন্ডিকেট। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তিগত বানোয়াট কেলেংকারির মিথ্যা গল্পের কথা বলে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। নিউজের ভয় দেখানোর পাশাপাশি বদরুল-বাদশা মিলে যেসব পত্রিকা এখন আর বাজারে নেই সেইগুলোর নাম একেক সময় একটা ব্যবহার করছে। ফলে নিচের সারির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজের সম্মানের ভয়ে তাদেরকে নিয়মিত চাঁদাও দিয়ে আসছে। কিন্তু এখন তারা দুইজন যখন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকতার কাছে একইভাবে চাঁদা আদায় করতে গিয়েছিল, তখনই তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। চাঁদা না পেয়ে আরো ভয়ংকর হুমকি দিয়ে আসে বাদশা ও বদরুল।
তবে নিজেকে শুধু সাংবাদিক পরিচয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বাদশা। তিনি নিজেকে ভুয়া সেনাবাহিনীর মেজরও পরিচয় দেন কারো কারো কাছে। এমনকি ওয়ান ইলেভেনের সময় ভুয়া মেজর পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে ধরা খান। সে সময় তাকে যশোরের অভয়নগর থানায় উত্তম মাধ্যম দিয়ে সোপর্দ করা হয় এবং কারাগারে থাকতেও হয়েছে। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে গাজীপুরে চলে আসেন এই বদরুল। সেখানে পরিচয় পত্রিকার হকার বাদশার সাথে। এরপর বাদশা ও বদরুল মিলে ঘরে তোলে চাঁদাবাজির এক সিন্ডিকেট। তাদের প্রথম ও শেষ টার্গেট হচ্ছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সেখানে কারো বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি পেলেই তারা নিউজ করবে বলে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে নিতো।
উল্লেখ্য, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ভুয়া মেজর ও সাংবাদিক বদরুল নিজেকে একেক সময় একেক পত্রিকার বা টেলিশভনের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তার সাথে থাকা সঙ্গী বাদশাও নিজেকে মাঝে মাঝে মেজর পরিচয় দেন। এমনকি বাদশা মাঝে মধ্যে কর্মকর্তাদের তুলে নিয়ে দেখে দিবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া যে জাতীয় দৈনিকের ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করেন তার সম্পাদকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, আমিনুর রহমান বাদশা নামের আমাদের কোনো স্টাফ প্রতিবেদক নেই। এমনকি বদরুল ইসলাম নিজেকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা দাবি করলেও এর কোনো সতত্যা পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ভুয়া সাংবাদিক ও মেজর পরিচয়দানকারী দুইজনের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছে। যেকোনো মুহুর্তে বদরুল ও বাদশাকে উত্তম মাধ্যম দেয়া হতে পারে। এর আগে প্রকৃত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, এই ধরণের সাংবাদিক নামধারীদের কারণেই প্রকৃত সাংবাদিক সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। তাই এদের প্রকৃত পরিচয় উন্মোচন করলে সবারই লাভ হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা ২৮ মিনিটে বদরুলকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে বাদশার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তিনি বলেন, যে জাতীয় দৈনিক পত্রিকারটির নাম তিনি ব্যবহার করেন, সেখানে তিনি আগে একসময় কাজ করতেন বলে স্বীকার করেছেন। বর্তমানে কোথায় কাজ করেন এমন প্রশ্নের জবাবে এমন আরেকটি পত্রিকার নাম বলেন, যে পত্রিকাটি গত কয়েক বছর ধরেই নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে চাঁদাবাজির বিষয়টি সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি। এরপর প্রতিবেদক ফোন রেখে তিনি আরো কয়েকবার ফোন ব্যাক করে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। এরপর সন্ধ্যা ৭ টা ৩৬ মিনিটে ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফোন করেন। এরপর ৭ টা ৪০ এর দিকে এস এম বদরুল আলমও উত্তেজিত হয়ে ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে হুমকির স্বরে কথা বলেন।