ডেঙ্গু আতঙ্ক কাটছেই না!

  • ৩-Aug-২০১৯ ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
Ads
  • # ধরেবেঁধে মশা মারা হস্যকর, নতুন ওষুধ পরীক্ষার ধরনে খুশি নন মানুষ
  • # আক্রান্তের সংখ্যা রাজধানীতে কমলেও ঢাকার বাইরে রোগী বেড়েছে।
     

:: জি এম রফিক ::

ছোট ছোট তিনটি বক্স। তা আবার সাদা মশারি দিয়ে মোড়া। ফুট তিনেক দূর থেকে দেওয়া হচ্ছে ধোঁয়া। জানা গেল, ওটা ধোঁয়া নয়, মশা মারতে নতুন করে আনা ওষুধের স্যাম্পল। মশা মারতে কতটুকু সক্ষম সেটাই পরীক্ষা করা হচ্ছে। মশারি দিয়ে তিনটি খাঁচা তৈরি করে প্রতিটিতে ৫০টি মশা রাখাও হয়েছে। ‘বায়ার করপোরেশন’ কোম্পানির এই মশার ওষুধের ৩০ মিনিট পরীক্ষা শেষে সর্বোচ্চ ২৬ শতাংশ মশা মারা গেছে বলে জানানো হয়। ডেল্টামেথরিন ও ট্আিরও মলিকিউলের মিশ্রণে এই ওষুধ তৈরি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মূল ফটকের সামনে শুক্রবার সকালে এভাবেই মশা নিধনে নতুন ওষুধের পরীক্ষা চালানো হয়।

কিন্তু নতুন এই ওষুধ কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও ভারত থেকে আসা গবেষক দলের সদস্য শুভ দে বলেছেন, ‘বায়ার করপোরেশনের ওষুধ মশক নিধনে কার্যকর।’ এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, মশার ওষুধ বৃষ্টির মধ্যে ছিটানো যাবে না। এ ছাড়াও ১৫ কিলোমিটার বেগে যখন বাতাস প্রবাহিত হয় তখনো মশার ওষুধ ছিটানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এদিকে সারা দেশে বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন ‘আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে।’ তবে ডেঙ্গু আক্রান্তের মোট সংখ্যা বাড়লেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে গত দুদিন ধরে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী বেড়েছে।

মশা নিধনে আনা নতুন ওষুধের পরীক্ষা-নীরিক্ষার ধরনে আশাবাদী হতে পারছেন না রাজধানীবাসী। রামপুরা, বনশ্রী, উত্তরা, আজিমপুর, শ্যামলী ও মিরপুরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। মিরপুরের মাহমুদুল হাসান বলেন, মশারীর মধ্যে মশা রেখে কাছ থেকে মশা নিধনের ওষুধ দিয়েও ২৬ শতাংশ মশা মারা গিয়েছে বলে জেনেছি। যদিও ২৪ ঘণ্টা পর ফলাফল আরও ফলপ্রসু হবে। কিন্তু আসলেই কি তা ফলপ্রসু? যখন বিভিন্ন স্থানে এই ফগ সেপ্র করা হবে, তখন তো আর মশা বন্দি অবস্থায় থাকবে না। তাই না?’

বাড্ডা এলাকায় বসবাসকারী মিথিলা মাহমুদা বলেন, ‘নতুন ওষুধ আনার বিষয়ে যে মেয়রদ্বয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এটাকে পজেটিভ দেখছি। তবে ধরেবেঁধে মশা মেরে এমন পরীক্ষা একটু হাস্যকরই। তারপরও বিশেষজ্ঞরা নিশ্চয় ভালো বলতে পারবেন, পরীক্ষার ধরণ কী হওয়া উচিত।’

আজিমপুরের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এমন পরীক্ষায় প্রথম আঁধ ঘণ্টায় যদি ৭০ শতাংশ মশা মারা গেছে এমনটা প্রমাণিত হলে আমরা স্বস্তিতে থাকতাম। বুঝতেই পারছেন, ডেঙ্গু নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি। নতুন ওষুধ আসছে এতেই খুবই খুশি। কিন্তু পরীক্ষার ধরনে তেমন আশা পাচ্ছি না। পরে না আবার আগের ওষুধের মতোই অবস্থা হয়। 

এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের পাতাকে জানান, পরীক্ষার এমন ধরনে বা তাৎক্ষণিক ফলাফলে তিনি নিজেও সন্তুষ্ট নন। তবে নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মশারির মধ্যে পরীক্ষার পর এই ওষুধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইইডিসিআর ল্যাবে পরীক্ষাধীন রয়েছে। সন্তোষজনক ফলাফল পেলে খুব দ্রুতই ওষুধ বাংলাদেশে আনা হবে। তারপর তা মশা নিধনের কাজে ব্যবহার করা হবে।’

এদিকে, সারা দেশেই নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলছে। তারা রক্ত পরীক্ষার পর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে আবার আতঙ্গগ্রস্ত হয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে আসছেন। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার অভাবে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে গত শুক্রবার রাতে নাদিরা বেগম নামে এক গৃহিনী মারা গিয়েছেন। তার মেয়ে খাদিজা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ নিয়ে মাদারীপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন চারজন। 

তবে ডেঙ্গু আক্রান্তের মোট সংখ্যা বাড়লেও রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে গত দুদিন ধরে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী বেড়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৯৬৯ জন রাজধানীতে। তার আগে গত শুক্রবার ৯৯৬ জন এবং বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ১৫০ জন। শুক্রবার ৬৯১ জন ভর্তির হয়েছিল দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৬৮০ জন। সব মিলিয়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৯০৫ জন। গতকাল শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল চার হাজার ১৯০, গত বৃহস্পতিবার ছিল তিন হাজার ৪৬৪ জন। ঢাকার বাইরে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে দুই হাজার ৩৮১ জন, চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন দুই হাজার ৫২৪ জন। আর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে বিভিন্ন সূত্রে মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৯৮ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৬৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী। এছাড়া ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪২, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৬৪, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২২৬, বারডেম হাসপাতালে ৭২, বিএসএমএমইউতে ১৪৩, পুলিশ হাসপাতালে ২০১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩১৯, বিজিবি হাসপাতালে ৩৩, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩৫৮ এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বমোট চার হাজার ৪৭৭ জন ভর্তি আছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৭৮৩ জন। বাকি এক হাজার ৬৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগী ১২৯ এবং চিকিৎসাধীন ৪৩২ জন, খুলনা বিভাগে নতুন ৬৩ এবং চিকিৎসাধীন ৪০৯ জন, রংপুর বিভাগে নতুন ৫৪ জন এবং ভর্তি ২১৩ জন, রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগী ৬৯ জন, চিকিৎসাধীন ৩২৫, বরিশাল বিভাগে নতুন ৬৭ জন এবং চিকিৎসাধীন ১৯৭ জন, সিলেট বিভাগে নতুন শনাক্ত ৩১ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি ১০০ জন এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে নতুন রোগী ৫২ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ২৭৭ জন।

Ads
Ads