গোলাম রাব্বানীর নির্দেশে বিতর্কিত সেই তোরণ অপসারণ করেছে শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ

  • ১৭-Aug-২০১৯ ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
Ads

:: উৎপল দাস ::

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও নাম ব্যবহার করে গোপালগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন এবং জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবিতে লাগানো কথিত কাউয়া লীগের বিতর্কিত তোরণটি অপসারণ করেছে জেলা ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ‌্যালয় কলেজের নেতাকর্মীরা। 

শনিবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির কমিটি সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনুর নির্দেশে বিতর্কিত এই তোরণটি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এর আগে ভোরের পাতার এ প্রতিবেদক সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানী থেকে থেকে শুরু করে সাবেক নেতা আনোয়ার হোসেন আনু ও গোপালগঞ্জের ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাসের  দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

এর পরই শুরু হয় ঝটিকা এ্যাকশন। সেই এ্যাকশনের নেতৃত্বে ছিলেন গোপালগঞ্জ  জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির হোসেন তাজ এবং বঙ্গবন্ধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি দীন ইসলাম। তাদের নেতৃত্বে মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করার স্লোগান নিয়ে বিতর্কিত তোরণটি অপসারণ করা হয়। 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‌‌'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটিকে বাঙালি-বাংলাদেশিদের জাতীয় সংগীত হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। তাহলে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর কেন গোপালগঞ্জের গুটি কয়েক মানুষ এটি পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে দোষীদের শাস্তির দাবিও করেন গোলাম রাব্বানী। 

মানবিক ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত গোলাম রাব্বানী আরো, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর তারই ঘনিষ্ঠ সহযোগী খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা নিয়েছিল। বিশ্বাসঘাতক মোশতাকের কিছু প্রেতাত্না যে বঙ্গবন্ধুর নিজ এলাকাতেও রয়েছে এই তোরণই তার প্রমাণ। নিজের আদর্শিক জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিতর্কিত এই তোরণটি অপসারণ করানো হয়েছে। এ জন্য বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ শাখা ও গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি। 

উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরের পর ভোরের পাতার এ প্রতিবেদক বিতর্কিত তোরণের ছবিটি পাওয়ার পর ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিল। স্ট্যাটাসটি হচ্ছে: জাতির মহান নায়ক, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বিশ্ববন্ধু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে প্রথমে লন্ডন গেলেন ৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে। এরপর তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার ভিআইপি ফ্লাইটে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বোমা হামলার খবর পেয়ে এবং ব্রিটিশ সরকারের নৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য ব্রিটিশ রয়েল এয়ারফোর্সের একটি বিশেষ বিমানে দিল্লী হয়ে ঢাকায় ফিরেছিলেন। লন্ডন থেকে দিল্লী ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু বিমানের মধ্যেই কয়েক হাজার ফুট উচুতেই তার পাশের সিটে বসা ভারতীয় প্রভাবশালী কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জিকে বলেছিলেন, ‘ব্যানার্জি, তুমি কি গান গাইতে পারো? উত্তরে ব্যানার্জি বলেছিলেন, গানের ‘গ’ জানি না।’ তখন আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু গুনগুন করে নয়, উচ্চস্বরে কয়েকটি পিছনের সিটে বসা ড. কামাল হোসেনকে ডেকে বলেন, ‘এই কামাল উঠে দাঁড়া তো। আমি গান গাইবো।’ শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জিও নেতার পাশের সিট থেকে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর বঙ্গবন্ধু গাইলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ এ গানটি গাইতে গাইতে কাঁদছিলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধার জাতির জনক।

আজ স্বাধীন বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জাতির জনকের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের কাউয়া লীগের কেউ যখন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ এই জাতীয় সংগীতকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নয় বলে দাবি করে পরিবর্তনের দাবি তুলে রাস্তার ওপর তোরণ লাগিয়ে দেয়। তখন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জন্মস্থান রায়পুরার ছেলে হিসাবে শুধু লজ্জিত হই না, ক্ষোভে, ক্রোধে বিদ্রোহ করতে ইচ্ছে করছে। এই তোরণ পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। গোপালগঞ্জের মানুষরা কিভাবে এই তোরণে আগুন দিচ্ছে না, এটাই আমার মাথায় আসছে না। আপনারা না পারলে বলেন, আমি উৎপল দাস গিয়ে সেই তোরণে আগুন দিবো। জ্বালিয়ে দেবো এইসব কাউয়া লীগের নেতাদের।

Ads
Ads