আজ ঐতিহাসিক রায়ের দিন: হাইকোর্টে যাচ্ছেন ড. কাজী এরতেজা হাসান

- ২১-Aug-২০১৯ ০৪:১৪ অপরাহ্ন
:: সিনিয়র প্রতিবেদক ::
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করার ঐতিহাসিক রায়ের দিন আজ বৃহস্পতিবার। মহামান্য হাইকোর্ট আজ ঐহিহাসিক রায় দিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রিট আবেদনকারী ভোরের পাতা সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প বাণিজ্য ও ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ড. কাজী হাসান।
ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সন্তান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিানর সৈনিক হিসাবে তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই মহামান্য হাইকোর্টে হাজির হচ্ছেন বৃহস্পতিবার। আজকের এই দিনে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে সপরিবারে শাহাদাৎবরণকারী বঙ্গবন্ধু হত্যার যেমন ঐতিহাসিক রায় দেখেছিলেন, ঠিক তেমনিই একটি ঐতিহাসিক রায় পেতে চান যারা জাতির জনকের আদর্শকে হত্যা করতে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি শুধু একবার নন, আমৃতু্য এ লড়াই চালিয়ে যেতে চান।
ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক আদর্শে অনুরণিত থেকে বেঁচে থাকা একজন সত্তা। শৈশব হতে আজ অব্দি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দীপ্ত অভিপ্রায়ে সদা জাগ্রত থাকা একজন সাধারণ মানুষ ও প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। প্রিয় বাংলাদেশের লাল সবুজের রাস্তায় পথিক হয়ে থাকা একজন মুজিব সন্তান, মুজিব সেনা। এমন সব পরিচয়েই নিজেকে বিধৃত করতে স্বস্তিতে থাকি। একই সঙ্গে আমি গর্বিত যে, গণতন্ত্রের মানস কন্যা- মাদার অব হিউম্যানিটি জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ আদর্শের ছায়াতলে নিজেকে সঁপে দিয়ে একজন সাধারণ তুচ্ছ কর্মী হিসাবে সামাজিক- রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মে নিবেদিত আছি।
তিনি আরো বলেন, সত্তর বছরের অধিককাল ধরে এই দেশের শ্রেষ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল হিসাবে আদৃত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এসব নিয়ে তো আপনার কাছে কিছু বলার অর্থবহ দিক প্রকটিত হয় না। আপনার দলটির কেন্দ্রিয় উপ কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। পেশাগত জীবনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংবাদ মাধ্যম হিসাবে অতি আদৃত বা সমাদৃত জাতীয় দৈনিক 'ভোরের পাতা'র সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে নিয়োজিত আছি। দায়িত্ব পালন করছি আরেকটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক দ্য পিপলস টাইমসের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবেও। নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী চরিত্র হিসাবে 'এফবিসিসিআই' এর টানা দুইবারের পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছি। এতদ কিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখার মধ্যেও আমি আমার নিজ জেলা সাতক্ষীরার আঞ্চলিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আদর্শ তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রাণান্ত চেষ্টায় থাকি। সেক্ষেত্রে কোন আপোস নেই। তবে একজন শেখ হাসিনা বিরোধী নানা অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে, রয়েছে দেশের রাজনৈতিক মৌলিক ইস্যুতে ইতিহাস বিকৃতি করার জন্য কুচক্রীদের নানামুখী দুষ্টু কার্যক্রম। অতি অবশ্যই রাজনৈতিক অপউদ্যোগে বিশ্বমানের নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে উৎখাতের নানা ষড়যন্ত্র। সঙ্গত কারণেই দৈনিক ভোরের পাতার মাধ্যমে বিবেক শ্রেণির অনুসন্ধানী সাংস্কৃতিক চরিত্র হয়ে বাংলাদেশ, ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা গোষ্ঠীর নেতিবাচক মিশনকে ভন্ডুল করতে আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকার চেষ্টায় থাকি। একজন নাগরিক হিসাবে সাধারণ চেষ্টায় থেকে সুন্দরের জন্য লড়ে থাকি, রুখে থাকি--- রুখতে হয় বলেই ২০১৮ সালে মহামান্য উচ্চ আদালতে আলোচিত রিট কারী হয়ে পড়ি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর উদ্যোগে প্রকাশিত ( তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর) বই 'বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস' ফলত ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ এই জাতির চিরন্তন কালো রাতে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। যা এক ধরণের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক বিকৃতির অনুষঙ্গ উদ্যোগে পরিকল্পিত চেষ্টা বলে মনে করার সুযোগ আছে। ইতিহাস তুলে ধরার নামে এই গ্রন্থে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার না করে সংস্কৃতি বিরুদ্ধ কৃষ্টির অপ নমুনায় থাকার দৃষ্টান্ত গড়তে দেখা গেছে। শুরু থেকে তাঁরা দাবী করে আসছে যে, বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তেমন কোন স্থিরচিত্র পাওয়া যায় নি বলেই তা দেয়া সম্ভবপর হয়নি। অথচ যা মিথ্যাচারের চূড়ান্ত বক্তব্য কিংবা বিবৃতি বলে অনুমিত হয়। হালে উচ্চ আদালতে তেমন একটি উল্লেখযোগ্য পর্যায়ের বঙ্গবন্ধুর ছবি পেশ করার মাহাত্ম্যে গিয়েছি। এদিকে পুস্তকটিতে পাকিস্তানের সাবেক শাসক- শোষক আইউব খান ও তাঁর মতাদর্শের কুখ্যাত ব্যক্তিসত্তা বাংলাদেশ এর স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী মোনায়েম খানের স্থিরচিত্র প্রদর্শনে প্রকাশিত উদ্যোগকে যথেচ্ছ ব্যবহার না বলে মন্দ তৎপরতা বলাই শ্রেয়। যৌক্তিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে উপেক্ষা, অবমাননা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কটাক্ষ করার এমন উদ্যোগকে ধিক জানিয়ে আমি ড. কাজী এরতেজা হাসান বিশেষ ভুমিকা পালনে ব্রত হই। এই ইস্যুর সুবিচার চেয়ে বিচারপ্রার্থী হিসাবে উচ্চ আদালতে রিট করি। মহামান্য আদালত বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বইটির বাজারজাত বন্ধ করার আদেশে থেকে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রদান করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে খোলা চিঠিতেও ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, ব্যথিত হৃদয়ে আপনাকে অবগত করতে হচ্ছে যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রবল প্রত্যয়ে যখন আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও নেত্রী একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সকলের জন্য ঈর্ষার মানচিত্র হয়ে আমি আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তখন দেশ ও বিদেশের রাজনৈতিক অপশক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কর্মে লিপ্ত রয়েছে। তাঁরা মনে প্রাণে এখনো পর্যন্ত '৭৫ এর মতো প্রতিবিপ্লবের আশায় কুস্বপ্ন লালন করে আসছে বা থাকছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
তেমনই আদলে বসবাস করে দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশিত কথিত গ্রন্থটিকে আসলে কি বলা যায় ? সাম্প্রতিক সময়ে তাঁরা উচ্চ আদালতে যেয়ে বলবার চেষ্টা করছে, আমরা অনেক আগেই বইটির সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। তাহলে আমার বিনীত প্রশ্ন, কেন বাংলাদেশ ব্যাংক গেল বছর যখন রিট করেছিলাম তা আদালতে তুলে ধরেনি। বইটির প্রকাশ তাঁরা বলছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, তাহলে আমার হাতে বইটি সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে কিভাবে এলো ? কেন আমাকে অক্টোবর ২০১৮ সালে রিট করতে হল? আবার বঙ্গবন্ধুর ছবি তাঁরা পায় নাই বলেছে। তাহলে আমরা কেন তেমন স্থিরচিত্রের সন্ধান করতে যেয়ে পেয়ে গেলাম ! এই প্রসঙ্গেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে বলা যায় যে, গেল বছরের ২৩ এপ্রিল ২০১৮ সালে জনৈক নজরুল ইসলাম বশীর বাংলাদেশ ব্যাংক এর গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দেন। তিনি সেই পত্রে গভর্নরকে বলেন, আমার সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নামক গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর আ ন হামিদ উল্লাহর ছবি রয়েছে। জনৈক বশির উল্লেখিত কারণে গভর্নর এর সাক্ষাৎ প্রার্থী হয়ে 'বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস' শীর্ষক বইটির সমৃদ্ধি কামনা করেই কার্যত পত্রটি দেন। তাহলে আমার প্রশ্ন, এই চিঠি ও প্রমাণাদি পাওয়ার পরে ১৯ জুন ২০১৯ সালে কেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবি পক্ষকে দিয়ে তাঁরা বলবার চেষ্টা করছে, " বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের পান্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা ও সম্পাদনা কমিটি গঠিত হবার পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশনার পরপরই কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় ধরা পড়ে। তখন গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউ করবার জন্য একজন ডেপুটি গভর্নর এর নেতৃত্বে কমিটি করা হয়। ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে কাজী এরতেজার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোটের নির্দেশে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধানী কমিটি গঠন করা হয়।কিন্তু রিট কারী গভর্নরের নেয়া অতীতের পদক্ষেপকে গোপন করেছে।"
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করছি, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কুতর্ক এবং মিথ্যে ভাষণে থেকে প্রকারন্তরে নিজেদের দেয়া বক্তব্যে নিজেরাই ফেঁসে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে পরিকল্পিত এমন একটা সুন্দর উদ্যোগের পান্ডুলিেিপ্ত বঙ্গবন্ধুর জায়গা হয় না, ২৩ এপ্রিল একজন বিদগ্ধজন( নজরুল ইসলাম বশির) এর পত্র দেয়া প্রমাণ করে প্রকাশনার পাঁচ মাস পরেও তাঁদের বই বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। আমি যখন অক্টোবর ২০১৮ সালে রিট করি তখন থেকে তাঁরা কেন অমুক উদ্যোগ- তমুক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেনি আদালতে ? প্রিয় নেত্রী, খতিয়ে দেখা উচিত। এক বছরের অধিক সময় নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করে তাঁরা মোনায়েম খানদের আশ্রয় দিয়ে ওই পুস্তক ঘিরে আজ অসংলগ্ন বক্তব্য রাখলে তো হবে না। বিহিত করতে হবে।