স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম ভেঙে রমরমা অনৈতিক চিকিৎসা ব্যবসা করছে শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ

- ৩০-Aug-২০১৯ ০৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
::উৎপল দাস::
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসাবে খ্যাত গুলশান ২ নম্বরে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট বেসরকারি শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বিএনপি-জামায়াত আমলে গড়ে উঠা এই হাসপাতালটি শুরু থেকেই অনৈতিক ব্যবসা শুরু করে আজ অবধি রমরমাভাবে সেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের মালিক মো. শাহাবুদ্দিন পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে একজন অনুপ্রবেশকারী হিসাবে নিজেকে এখন আওয়ামী লীগার পরিচয় কিনেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তেমনভাবে চিকিৎসা সেবায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে না পারলেও রমরমা অবৈধ ভর্তি বাণিজ্য করে গেছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে এ ব্যবসা থেকে বেরিয়ে এসে নতুনভাবে অভিনব চিকিৎসা প্রতারণা শুরু করেছে শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে হাসপাতালটির গর্ভনিং বডির সদস্য সুচতুর ফয়সাল আল ইসলামের পরিকল্পনায় এ ব্যবসা চলছে।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেমিনারের নাম করে প্রায় প্রতি মাসেই বিদেশি কয়েকজন চিকিৎসককে নিজের হাসপাতালে এনে তাদের দিয়ে বাংলাদেশি রোগিদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। মূলত ৩ থেকে ৭ দিন ব্যাপী সেমিনারের নামে বিদেশি চিকিৎসকদের এনে সেমিনার না করিয়ে রোগীদের কাছ থেকে গলাকাটা ফিস নিয়ে আরো অনেকগুলো টেস্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন।
মূলত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিদেশি চিকিৎসকের মাধ্যমে রোগিদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য যে অনুমতি লাগে, সেটার ধার ধারেনি শাহবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অনেকটা গোপনেই তারা প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে ফিস আদায় করছে।
সর্বশেষ ভারত থেকে কয়েকজন চিকিৎসক সেমিনারের নামে হাসাপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু দিনের বেলায় নামে মাত্র সেমিনার করিয়ে সারাদিনই (বান্ধত্ব্য) মোচনসহ নানা রোগের চিকিৎসার নামে রমরমা ব্যবসা। নিজেদের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বান্ধত্ব্য রোগে (নিঃসন্তান) ভুক্তভোগীদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে যে, বিদেশ থেকে এই রোগের ভালো চিকিৎসক আনা হয়েছে। ফোন করে রোগীদের বলা হচ্ছে, টাকা ৫ হাজার লাগলেও এই চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বাংলাদেশি ডাক্তারদের দিয়ে এ রোগের ভালো কোনো চিকিৎসা সম্ভব নয়; তাই রোগিদের জন্য ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনেছেন। একজন ভুক্তভোগী রোগী এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও যেভাবে কথা বলেছেন এমনকি যেসব পরীক্ষা দিয়েছিলেন তারচেয়ে আলাদা কোনো চিকিৎসা শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে পাননি। এমনকি তাকে স্বামীসহ ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে, অনুমতি না নিয়ে সেমিনারের নামে আনা বিদেশি চিকিৎসকদের দিয়ে রোগী দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিষয়টি মোটেও কাম্য নয়। সেমিনার করতে আসলে তারা শুধু সেমিনারই করতে পারেন। কিন্তু চিকিৎসা দেয়ার জন্য আলাদা অনুমতি নিতে হয়। বিষয়টি তদন্ত করে শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে এ বিষয়ে ফোন করা হলে তিন মিনিটের বেশি সময় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তালবাহানা করে দুইজন অফিস স্টাফ শেষ পর্যন্ত বলেন, আমাদের অফিসে এসে কথা বলতে হবে। চেয়ারম্যান স্যারের (মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন) ফোন নম্বর দেয়া নিষেধ এবং তিনি সাংবাদিকের সাথে সরাসরি নিজের অফিসে বসে কথা বলেন বলে জানিয়ে ফোন রেখে দেন।