গণভবনেই ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার চূড়ান্ত রূপরেখা দিবেন শেখ হাসিনা!

- ৩১-Aug-২০১৯ ০৮:১৪ পূর্বাহ্ণ
::উৎপল দাস::
ছাত্রলীগই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একমাত্র ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনটি নিয়েই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নানা ভাবনা সব সময় দেখা গেছে। অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের বিষয়ে এতটা দরদ দেখাতে হয় না আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে। তবে সিন্ডিকেটের কালো থাবা থেকে ভাঙতে গিয়ে নতুন সিন্ডিকেটের কবলে পরে আবারো বিতর্কিত হয়েছে জাতির জনকের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে বিবাহিত, মাদক ব্যবসায়ী, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য, শিবিরকর্মী থেকে শুরু করে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িতরা কোনো না কোনোভাবে ঠাঁই পেয়েছেন। তাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে শুরু করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ও টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এরই মাঝে আমরণ অনশন করেছে বিদ্রোহীরা।
এরপর ছাত্রলীগ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা (জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, বি এম মোজাম্মেল ও বাহাউদ্দিন নাছিম) ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংকট সুষ্ঠুভাবে মিটাতে ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সোনালী দুঃসময়ের সভাপতি ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপে বিদ্রোহীরা তাদের আন্দোলন থেকে ফিরে আসে। কিন্তু আজ শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক ও পরিপূর্ণ গঠনতন্ত্র শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুষ্ঠানে বিতর্কিতরা কিভাবে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিদ্রোহী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
গণভবনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ নেতার ওপর বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে তালবাহানা করায় যথেষ্ট বিরক্ত। আজ শোকের অনুষ্ঠান শেষে শেখ হাসিনার একান্ত আস্থাভাজন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন এবং শেখ হাসিনার আদর্শের প্রশ্নে আপোসহীন মানবিক ছাত্রনেতা গোলাম রাব্বানীকে আলাদাভাবে ডেকে বিষয়টি সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতা ভিত্তিক সমাধানের রূপরেখা দিয়ে দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্র আরো জানিয়েছে, ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল সেখান থেকে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে চরম বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে বিদ্রোহীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাই করে এমনকি এর বাইরেও যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে শূণ্যপদে আসতে পারে তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই দেয়া। এমনটাই চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা।
এদিকে ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও চান বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজের ছাত্রলীগ নিয়ে পথ চলতে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অযাযিত হস্তক্ষেপে অনেক সময় তা হয়ে উঠে না। তাই সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করতেই তারা প্রস্তুত। ফলে আজকের শোক দিবসের আলোচনা শেষে এমন নির্দেশনা আসলে তা তড়িৎগতিতেই বাস্তবায়ন হবে বলে বিশ্বাস করে ছাত্রলীগের একটি অংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ১৯ জন বিতর্কিতদের মধ্যে ২ জন ইতিমধ্যে নিজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। সহ সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং উপ সম্পাদক রুশি চৌধুরীর পদ দুটি শূণ্য করার পাশাপাশি আরো কমপক্ষে ১০ জনের মতো বিতর্কিত যাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে অভিযোগ প্রমাণ মিলেছে। তাদেরও একই সঙ্গে পদ শূণ্য করে সেখানে যোগ্যদের পদায়ন করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই তালিকায় কমপক্ষে ৫ জন সহ-সভাপতি, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩ জন উপ সম্পাদক এবং ২ থেকে ৩ জন সহ-সম্পাদক পদ হারানোর তালিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।