এবার গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফও বহিষ্কার হচ্ছেন!

- ৪-Sep-২০১৯ ১২:০৫ অপরাহ্ন
::উৎপল দাস::
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দেশের ইতিহাস এহিত্য ও সংগ্রামের গৌরব নিয়ে ছুটে চলা এই সংগঠনটিকে বিতর্কমুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরাসরি পছন্দের মাধ্যমে মনোনীত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ছাত্রলীগকে কলংকমুক্ত করে শেখ হাসিনার ইতিবাচক ধারার ছাত্রলীগ উপহার দিতে। সেখানে বুধবার উত্তরবঙ্গের জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত জেলা হিসাবে পরিচিত গাইবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসিফ সরকার এককভাবে সংগঠনের নূন্যতম নিয়ম না মেনেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন দিয়েছেন। কোনো জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হলে কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতার স্বাক্ষর লাগবেই-এমন নিয়মও মানেন নি গাইাবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি। সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি হয়ে শেখ হাসিনা মনোনীত কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে বুঁড়ো আঙুল দেখিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে তিনি যে দৃষ্টতা দেখিয়েছেন, সে বিষয়ে তদন্ত করে বহিষ্কার করা হবে বলে জানা গেছে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার পক্ষ থেকেই।
তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, অনেকগুলো জেলা কমিটি কেন্দ্রে জমা রয়েছে। বিবাহিত, ব্যবসায়ী, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তানদের বাদ দিয়ে সকল জেলা ইউনিটকেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গাইবান্ধা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে বন্যাজনিত কারণ ছাড়াও বিতর্কিতদের নিয়ে যে কমিটি প্রস্তাব উঠেছিল তা কেন্দ্রের দপ্তর সেলে জমাই পরেনি। এরপরও কিভাবে জেলা সভাপতি আসিফ সরকার কমিটি দিয়েছে, সে বিষয়ে সাংগঠনিক তদন্ত করা হবে। এমনকি নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সদ্য বহিস্কৃত সভাপতির উদাহরণ টেনেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন , ছাত্রলীগ একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন। এখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। কিন্তু নরসিংদীতে জেলা সভাপতি এককভাবে একটি কলেজের কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল। ঘটনা তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ার সাথে সাথেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এমনটা গাইাবন্ধার আসিফ সরকারের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ সরকার তার নিজের স্বাক্ষরে যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছেন সেখানে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মো. রবিউল ইসলাম রাকিবও বিবাহিত ও তার সন্তানও রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া অবৈধ এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে সুচতুর আসিফ সরকার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জোর করে অবৈধ কমিটিতে সুপারিশের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। এমনকি যারা করতে রাজি হয়নি, তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়েছেন বলে স্বাক্ষর করা এক নেতা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসিফ ভাই আমাকে জোর করিয়ে স্বাক্ষর করিয়েছেন। আমি স্বাক্ষর না করলে ভবিষ্যতে ক্ষতি করবেন এবং রাজনীতি শেষ করে দিবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। ছোট নেতা হওয়ার কারণে বাধ্য হয়েই এই অবৈধ কমিটিতে স্বাক্ষর করেছি।
এদিকে, গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন মামুন বলেন, আমি নিজেও সব সময় ছাত্রলীগের জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে চেয়েছি। কিন্তু কোনো বিবাহিত, মাদকাসক্ত, বয়সোর্ত্তীণ এবং বিএনপি জামায়াত পরিবারের কোনো সদস্যদের ঠাঁই দিতে চাইনি। এ বিষয়টা ছাত্রলীগের ভালোর জন্যই কেন্দ্রের শীর্ষ দুই নেতাকে বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য মহলের ইশারায় আমাকে কোনো কিছু না জানিয়েই গোপনে চাপ সৃষ্টি করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে মো. আসিফ সরকার যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অগঠনতান্ত্রিক। এই অবৈধ কমিটিতে যারা ঠাঁই পেয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই চরমভাবে বিতর্কিত। জেলা সভাপতি ইচ্ছেকৃতভাবেই ছাত্রলীগের সম্মান নষ্ট করার মিশনে নেমেছেন। কেন্দ্রের কাছে এসব তথ্য আমরা যারা আদর্শিক ছাত্রলীগ করি তারা লিখিতভাবে জানাতে প্রস্তুত হচ্ছি। আশা করছি তদন্ত পূর্বক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ সরকারকে এ বিষয়ে জানতে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি তার সঙ্গে নিউজ বিষয়ে কথা বলার জন্য ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি তার প্রতিউত্তর করেননি।
তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলছেন, আসিফ সরকার কোনোভাবেই এমনভাবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেন না। তার দেখাদেখি সারােদেশের জেলা কমিটির শীর্ষ নেতারা শোভন ও রাব্বানীর কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে দিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে সারাদেশেই ছাত্রলীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই অবৈধ কমিটি প্রদানকারীর বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আসিফ সকরার আগামী দিনে বহিষ্কার হচ্ছেন এমনটাই ধারণা করছেন অনেকে।
এদিকে, ভোরের পাতায় সংবাদ প্রকাশের টনক নড়ে গাইবান্ধা জেলার ছাত্রলীগের মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি আসিফ সরকারের। তিনি বুধবার সন্ধ্যা ৭ টা ৪ মিনিটে এ প্রতিবেদককে কলব্যাক করে ৫ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে কথা নানা বিষয়ে। একটি জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি নিয়েছেন কিনা বা তাদের সাথে কমপক্ষে কথা বলেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ সরকার বলেন, গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগ আমি চালাই। এখানে সাধারণ সম্পাদক মামুনের স্বদিচ্ছা না থাকার কারণে বারবার কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারি নাই। সাধারণ সম্পাদকের ওপর বারবার দোষ চাপিয়ে গঠনতন্ত্র না মেনে কিভাবে এই বিতর্কিত কমিটি দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আমতা আমতা করে তিনি বলেন, আমার মন চেয়েছে তাই আমি কমিটি দিয়ে দিয়েছি। এখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানানোর কিছু নেই। সংগঠনের নিয়ম না মেনে আমি আমার নিয়মেই ছাত্রলীগ চালাবো। এমন মন্তব্যও করে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দৃষ্টতা দেখিয়েছেন বহিষ্কার হওয়ার পথে থাকা আসিফ সরকার।
আগামী পর্বে: গাইবন্ধা ছাত্রলীগ সভাপতি আসিফের অপকর্মের গডফাদার/ গডমাদার কে?