মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরেই ৬ মাদক ব্যবসায়ী

- ২৬-Sep-২০১৯ ০৪:৩৪ অপরাহ্ন
:: সিনিয়র প্রতিবেদক ::
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-(দুদক)। মাদকের রমরমা ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে উঠা বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এসব অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রতিষ্ঠানটির ছয় জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক। খিলগাঁও সার্কেলের পরিদর্শক সুমনুর রহমান, সিলেট জেলার পরিদর্শক লায়েকুজ্জামান,তেজগাঁও সার্কেলের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম, রমনা সার্কেলের পরিদর্শক শামসুল কবির, সুত্রাপুর সার্কেলের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ও প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম কিবরিয়া। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অভিযুক্তগণ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর র্দীঘদিন যাবত নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ফলে অভিযানে সফলতার হার অনেক কম। কোন অভিযানে যাওয়ার আগেই নিজস্ব সংবাদদাতা দিয়ে খবর পাঠিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় অনুমোদহীণ সকল মাদক দ্রব্য। সম্প্রতি ফুয়াং-ক্লাব তার একটি বাস্তব চিত্র।
পরিদর্শক হেলালউদ্দিন ১৯৯৫ সালে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২০০১ সালে পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক পদে ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চল মিরপুরে যোগদান করনে। পরিদর্শক সুমনুর ২০০২ সালে ঢাকা মহানগর -অঞ্চলে যোগ দান করেন। তাদরে উভয়ের বাড়ি ব্রাক্ষনবাড়িয়া হওয়ায় একসাথে মাদক ব্যাবসায় জড়িয়ে পড়েন বলে দুদকের অভিযোগ সুত্রে জানা যায়।
অভিযোগে উল্লেখিত, সুমন ২০০৫ সালে মোহাম্মদপু সুইপার বস্তির নেত্রী সখিনার সাথে হেরোইন ব্যাবসা করা সময় ঢাকা মেট্রোর উপ-পরিচালকের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু তৎকালীণ বিএনপি নেতাদের চাপে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বান্দরবান বদলী করা হয়। কিছুদিন পরে তিনি আবার বদলী হয়ে ঢাকায় আসেন। হেলাল ও সুমন গুলশানে কর্মরত থাকাকালীণ ইস্টার্ন ডিপ্লোমেটিক ওয়্যার হাউজের ম্যানেজার মান্নার সাথে মিলে বিদেশী মদের অবৈধ ব্যাসা শুরু করেন। হেলাল গুলশানে নেস্ট নামের অস্তিত্ববিহীন একটি বারের ভূয়া কাগজপত্র সৃজন করে বারের লাইসেন্স প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি প্রমান হলে হেলালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। এবং শাস্তিস্বরুপ বরিশাল উপ-অঞ্চলে বদলি করা হয়।
২০১৫ সালের শেষের দিকে হেলাল আবার ঢাকায় বদলি হয়ে আসে। ঢাকায় আসার পর হেলাল ও সুমন মিস ডিক্লারেশন দিয়ে বিদেশী মদ আমদানি করে গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে। নতুন করে এ ব্যবসার সাথে যুক্ত হয় মাদক ব্যবসায়ী গুলশানের মাসুদুর রহমান ও কবির গাজী। সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, যে কোন মামলার যখন বাদী হেলাল হন আইও হিসেবে নিয়োগ পান সুমন। আবার সুমন বাদী হয়ে মামলা করলে আইও হন হেলাল। যেমন, ধানমন্ডি থানার মামলা নং-২১ (০৩) ১৭, বাদী সুমন আইও হেলাল, বাড্ডা থানার ১৩/০৯/১৬ তারিখের মামলায় বাদী হেলাল আইও সুমন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সুমনের রাজধানীর অভিজাত এলাকায় কয়েকটি ফ্লাট ও প্লট রয়েছে। স্ত্রী সন্তানদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। হেলালের বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং-এ ৫ কাঠার একটি প্লট, মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিং-এর ৩ নং রোডে ১৫০০ এবং ১৮০০ বর্গ ফুটের দুটি ফ্লাট রয়েছে। বসুন্ধরা হাউজিং-এর এম ব্লকে ৫ কাঠার একটি প্লট, কারওয়ান বাজারস্থ কাঁদামাটি ডেভলপমেন্ট কোম্পানীতে স্ত্রী মাহমুদা শিকদারের নামে ৫০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। দাউদকান্দিতে স্ত্রীর নামে ইটের ভাটা করার জন্য ৫ একর জমি এবং দেখভাল করার জন্য ১ টি টয়োটা গাড়ি কিনে দিয়েছেন। এসব বিষয়ে হেলাল ও সুমনের সাথে ফোনে বারবার যোগাযোগে চেষ্টা করে পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে অফিসে গিয়েও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। মহা-পরিচালক বাইরে থাকায় সংশ্লিষ্ট কেউ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজী হয়নি।