মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা

  • ২৭-Sep-২০১৯ ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
Ads

সুস্মিতা দাস

বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। আর এই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির পিতা। স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্রের চার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে। বাংলাদেশের মূল সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রের এই চার মূলনীতিকে আমরা বলি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ট ও দূরদর্শী পদক্ষেপে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর এই সফলতা ও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশি-বিদেশি অপশক্তি ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারী খুনিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। এরপর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে পদদলিত করে বাংলাদেশ উল্টো পথে পাকিস্তানি ভাবধারার দিকে ধাবিত হয়। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ব্রাসেলসে ছিলেন। সে কারণে তারা দুইবোন বেঁচে যান। কিন্তু দেশে ফিরতে পারেন নি। ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট তারা নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। এরপর ১৯৮১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত নির্বাসিত জীবন-যাপন করতে হয়েছে। দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে জাতির আশা-আকাঙ্খা ও দলের ঐক্যের প্রতীকরূপে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে বরণ করে নেয়। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরতে শুরু করে। পিতার আদর্শই ছিল তাঁর আদর্শ। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘আদর্শের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দৈন্য নেই। কারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছে তাই আমাদের দিক নির্দেশক। সেই পথ ধরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ- বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মকান্ডকে সফল করে তুলব।’ তাঁর নেতৃত্বে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন ক্রমেই জেল-জুলুম, হত্যা-সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে। অবশেষে অপ্রতিরোধ্য গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সেগুলো তিনি জনগণের কাছে তুলে ধরেন। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সাথে শেখ হাসিনা সংহতি প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। শেখ হাসিনার দৃঢ় সমর্থন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করে তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় থাকলেও শেখ হাসিনার পথ মসৃণ ছিল না। জ্বালাও-পোড়াও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, বাঁধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামোতগত উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। একারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোলমডেল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে মুক্তিযুদ্ধের ধারা ও চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের তিনি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
১.বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানোর জন্য খন্দকার মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে, এরপর জেনারেল জিয়া সেটাকে আইনে পরিণত করে। এই অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করা। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত কারো বিরুদ্ধে দেশের কোন আদালতে অভিযোগ পেশ করা যাবে না। এমনকি খুনিদের নানাভাবে পুরষ্কৃতও করেছে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জারীকৃত কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করে। বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন আবাসিক একান্ত সহকারী এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বাদী হয়ে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ এর ঘটনাবলী উল্লেখপূর্বক ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নানা বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার পাঁচ খুনির মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আরও সাত আত্মস্বীকৃত খুনি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার জন্য সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
২.শেখ হাসিনা সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের স্থান এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী যে স্থানে আত্মসমর্পণ করেছিল সে স্থানে শিখা চিরন্তন, স্মৃতি জাদুঘর ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি রক্ষার্থে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের গণকবর, সম্মুখযুদ্ধের স্থানগুলোতে স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি জাতিকে দান করে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও ইতিহাসকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করেন। খুলনায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর নির্মাণের জন্য জমি ও আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। 
৩.মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান প্রদানের জন্য শেখ হাসিনা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর সময়েই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীভাতা ১০ হাজার টাকা করা হয় এবং ১০ হাজার টাকা করে বছরে দুটি উৎসব ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই করে ১ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে ২ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে শেখ হাসিনা সরকার। ফলে বীরাঙ্গনারাও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। কোন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে দাফনের রীতি শেখ হাসিনা চালু করেছেন। চাকুরীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা সিনিয়রিটি পেয়েছেন। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের  চাকুরীরক্ষেত্রে কোটার সুযোগ করে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বার্ধক্যকালীন ভরণ-পোষণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং ৬০ ও তদূর্ধ্ব বয়সের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত নাগরিক হিসেবে রেল, বাস ও লঞ্চে বিনামূল্যে চলাচলের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।  
৪.১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশী নাগরিক সমর্থন জানিয়ে নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন সেসব বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে স্মরণ করার এবং তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন পর্বে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ত্রাণকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, সামরিক কর্মকর্তা, সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ মুক্তিযুদ্ধে যারা অবদান রেখেছেন তাদেরকেই এই সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।  
৫.শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অবদান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি এক অধ্যাদেশ জারি করে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী দালালদের বিচারের জন্য সারাদেশে ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সরকার ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট ১৯৭৩ সংসদে পাস করে। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দালাল আইনে ৩৭,৪৭১ জনকে গ্রেফতার এবং অনেককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিও প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর এক আদেশে দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে যারা খুন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে অংশ নিয়েছিল তাদের ছাড়া অন্যদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সরকার দালাল আইন বাতিল করে সকল যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়। শহীদদের রক্তাক্ত বাংলাদেশে বুক ফুলিয়ে চলতে শুরু করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার যুক্ত হয়েছিল, যা ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সাল থেকে আরম্ভ হয়েছে এবং এখনো চলমান রয়েছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও গোষ্ঠীর চাপ সত্ত্বেও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে রায় কার্যকর করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে এটি বড় সাফল্য।
৬.মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ধর্মের নামে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে সারাদেশে হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু ’৭৫ এর পর জেনারেল জিয়া সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ফলে জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহ আবার তাদের তৎপরতা শুরু করে। রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাজাকার, আলবদর, আলশামস। শেখ হাসিনা সরকার ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন হারিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণও জামায়াতকে বর্জন করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিকাশ ঘটিয়েছিল জামায়াত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানো। কিন্তু শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হয়েছে।
৭.শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অবদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংস্কৃতি সর্বত্র চালু করা। ’৭৫ পরবর্তী সময় থেকে বিগত জামায়াত-বিএনপির আমলে পাঠ্যবই থেকে শুরু করে দলিলপত্রে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা তাঁর আমলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ফিরিয়ে আনেন। তাঁর সময়েই স্নাতক পর্যায়ে ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ স্টাডিজ, বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ নামে নতুন নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের সময়েই।
৮.’৭৫ পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই শব্দগুলো ছিল প্রায় অনুচ্চারিত। শিক্ষা ও গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দীর্ঘ ২১ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুপস্থিত ছিল। শেখ হাসিনা গণমাধ্যমগুলোকে মুক্তিযুদ্ধের ভাবধারায় ফিরিয়ে এনেছেন। বর্তমান সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জনসম্মুখে তুলে ধরতে গণমাধ্যমগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। 
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চার মূলনীতি ফিরিয়ে এনেছেন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে জাগ্রত করেছেন। দেশ থেকে মৌলবাদ, জাঙ্গিবাদের মূল উৎপাটনে বলিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলেও শেখ হাসিনা সরকারের সময় দেশের সকল সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। আওয়ামীল লীগ তার ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমঅধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শোষণহীন, বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তাবায়নে নিরবিচ্ছিন্ন ও আপোষহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে সকল প্রতিকূলতা, মৃত্যুশঙ্কা উপেক্ষা করে তিনি এখন বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর দেশপ্রেম, সততা, যোগ্যতা দিয়ে চূড়ান্ত লড়াই করে যাচ্ছেন।  ৎ

লেখক: সুস্মিতা দাস, শিক্ষক, বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 
 

Ads
Ads