জিকে শামীমের লোপাটের অংশীদার গণপূর্তের আশরাফ এখন প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌঁড়ে!

- ২৯-Sep-২০১৯ ০৯:২৩ পূর্বাহ্ণ
::উৎপল দাস::
টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেই চলেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে গিয়েছেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী দুই নেতাকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ ভূইয়াকে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় সম্পাদক ও জি কে শামীমকে গেপ্তার করা হয়েছে। টেন্ডার কিং খ্যাত জি কে শামীমের বিষয়ে ভোরের পাতার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। সরকারের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরটিকে গিলে ফেলেছিলেন এই জি কে শামীম। তার মাধ্যমেই সব ধরণের বড় অংকের দরপত্র/ টেন্ডার বাণিজ্য চলতো। বিএনপি জামায়াতের অনুসারী হিসাবে জিকে শামীমের সঙ্গে মিলেমিশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন কমপক্ষে সাতশ কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। রাজাকার শিরোমনি গোলাম আজমের ভাগিনা রফিকুল ইসলামের আমলেই সবচে বেশি লুটপাট হয়েছে। বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরো ২ জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীদের সাথেও বিতর্কিত ব্যবসায়ী জিকে শামীমের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রংপুর) আশরাফুল আলম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটানের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে'র সঙ্গে জিকে শামীমের কমিশন বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। ভোরের পাতায় উৎপল কুমার দে’র বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওসডি করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশকারীদের দুর্নীতি নিয়ে ভোরের পাতার অনুসন্ধানী ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জি কে শামীমের হস্তক্ষেপ ছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরে বৃহৎ কোনো প্রকল্প অনুমোদনই হতো না গত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে বিশেষ গোপনীয় সখ্যতার কারণে এক চেটিয়া ব্যবসা করে টেন্ডার মাফিয়া বনে যান জি কে শামীম। তবে আগামী দিনে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ ও বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট হিসাবে কাজ করা রংপুরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই গণপূর্ত অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত শাহাদাত হোসেনের চেয়ারে বসার দৌঁড়ে কয়েকজন থাকলেও রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম ইতিমধ্যেই কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা বাজেট করে সরকারের বিভিন্ন মহলে দেন দরবার করতে শুরু করেছেন বলে একাধিক সূত্র ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছেন। বর্তমান গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের মাধ্যমে এ টাকা লেনদেন করার অফারও করেছেন আশরাফুল। যদিও সৎ মন্ত্রী হিসাবে রেজাউল করিম দুর্নীতিবাজ কোনো কর্মকর্তাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসাবেন না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যেই গণপূর্তে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। ফলে গণপূর্তের মহাগুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মেট্রো ও ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’কে সরিয়ে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, উৎপল কুমার দে’র দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পর সেই পদে আসীন হওয়ার জন্যও কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে একই চ্যানেলে দৌঁড়াতে শুরু করেছেন রংপুরের আশরাফুল আলম।
উল্লেখ্য, ঘুষ,দুর্নীতি,অনিয়ম ও জামাত-বিএনপি সমর্থিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতি. প্রধান প্রকৌশলী (রংপুর) আশরাফুল আলমের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি। তার কর্মস্থল রংপুর হলেও তিনি পরবর্তী প্রধান প্রকৌশল হওয়ার নেশায় বেশীরভাগ সময়ই ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিকট ধর্ণা দিচ্ছেন। গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের কাছেও বেশ কয়েকবার ধর্ণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। তবে গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, গণপূর্ত বিভাগে কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা থাকতে পারবে না। কিন্তু এই হুশিঁয়ারির পরও আশরাফ তাতে কর্ণপাত করেননি। ফলে আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি যখন ঢাকায় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্ত স্বাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে তা হয়ে উঠেনি।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামী কুমিল্লা -৩’র বিএনপি জামাতের সাবেক এমপি কায়কোবাদ যিনি ওই মামালার যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী তার কোম্পানি শাহ কনস্ট্রকশনের সাথে আঁতাত করে আশরাফুল আলম কাজ করছেন চক্ষু হাসপাতালে। আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে আরো ঘোরতর অভিযোগ রয়েছে, ৩০০ জন ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ দেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। যাদের বেশীরভাগ জামাত- বিএনপির লোকজন হিসাবে পরিচিত। সাবেক স্পিকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এসব জানার পর সংসদ থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে সংসদের নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ থেকে এই আশরাফুল আলমকে সরিয়ে দেন।
অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রংপুর জোন, মোহাম্মদ আশরাফুল আলম রাষ্ট্রীয় পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুতর দুর্নীতির মাধ্যমে কৌশলে বিএনপি জামায়াতের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি শেরে-এ- বাংলা নগর ডিভিশন-১ এ নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালীন (১২-০২-০৮/০৬-০৮-০৯)( সংসদ ভবনে) ৩০০ জন ভাউচার ভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগে একেকজনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে নেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালটি মন্ত্রনালয়ের ০২-১২-২০১৭ ইং তারিখে জারিকৃত প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা নবনির্মীত ভবনে হাসপাতালের একাডেমি ও সেবা চালু করা হলেও নির্মীত ভবনের কাজের ত্রুটি পায় কর্তৃপক্ষ।২৫-১১-২০১৭ তারিখে একনেকের সভায় গঠিত তদন্তে এসব ত্রুটির প্রতিবেদনে দাখিল করা হয়। ২৬-১১-২০১৭ তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতার কারনে আশরাফুল আলমকে কোন শাস্তি দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়ের IMED’র সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলাও হয় আশরাফুলের বিরুদ্ধে। যার স্বারক নং-দুদক/বিঃ অনুঃ তদন্ত-১/১৫০-২০১২/১৮৯৬৪, তারিখ ০৩/০৭/২০১৩। মামালায় অভিযুক্ত আশরাফুল আলম অনুসন্ধানী কর্মকর্তার সাথে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি ধামাচাপা দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রংপুর) আশরাফুল আলমের বুধবার সন্ধ্যা ৮ টার পর থেকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও তিনি ফোন ব্যাক করেননি।
এদিকে, গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী অথবা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ঢাকা মেট্রো/ ঢাকা জোনের পদে জন্য ৫০ কোটি টাকা কিভাবে খরচ করবেন আশরাফুল আলম? তার এই টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরেরই অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী।
আগামী পর্বে: গণপূর্তে জি কে শামীমের ক্যাশিয়ার ইএম ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের দুর্নীতির আদিঅন্ত!
ere ...