শিবির নেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী আতাউল্লাহ খান!

- ৪-Oct-২০১৯ ০৬:০১ অপরাহ্ন
::উৎপল দাস::
আতাউল্লাহ খান ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম আইন (ল’) কলেজ ছাত্র শিবিরের প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হয়েছিলেন। এরপর পুরো পরিবারই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এমনকি তার আপন ভাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী সৈয়দ ফারুক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসাবে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামি। এমন এক পরিবারের সন্তান হয়েও বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। কথা হচ্ছিল কক্সবাজার জেলার মহেশখালী দ্বীপের ঠাকুর তলা গ্রামের মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা মকবুল আহমদের পুত্র মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খানকে নিয়ে। রাজনৈতিক জীবনে পাকিস্তানি আদর্শ ধারণ করা এই আতাউল্লাহ খান কিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরে বাইরে। প্রচণ্ড ভারত বিদ্বেষী হিসাবেও রয়েছে আতাউল্লাহ খানের সুপরিচিতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুযোগ সন্ধানী মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খান নিজের রাজনৈতিক খোলস পাল্টে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৪ সালে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও ২০১৬ সাল হতে মহাসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এছাড়া তিনি আইপিটিভি ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি, বাংলাদেশ সামাজিক সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, ভেজাল, মাদক ও দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় বিজয় মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য সচিব, কোস্টাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের সভাপতি, মার্চ মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অনেক গুলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন। এসব সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে তিনি গোপনে জামায়াত শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলেও অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী। এছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরেও তার গোপন আঁতাত রয়েছে। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় বিজয় মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করে করলেও আতাউল্লাহ খান মনেপ্রাণে পাকিস্তানের আদর্শকেই ধারণ করেন বলেও মনে করেন অনেকে।
অভিযোগ আছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম ও ফারুক একসময় আতাউল্লাহ খানদের গ্রামের বাড়িতে আতিথেয়তা পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা মহেশখালী ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৌলভী মকবুল আহমদ। আতাউল্লাহ খানসহ পাঁচ ভাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তাঁরা একসময় ফ্রিডম পার্টিও করতেন। মৌলভী মকবুল আহমদ ছিলেন মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা। ১৯৭৮ সালে তিনি জামায়াতে যোগ দেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের এ রকম একজন সদস্য কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হলেন, তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘আতাউল্লাহ খান যে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন, সে বিষয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কেউ কিছু জানতেন না।’
আতাউল্লাহ খান ওরফে আতা খান সম্পর্কে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, রাজধানীর লালবাগে একসময় তিনি ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আতাউল্লাহ খানের ভাই শফিক উল্লাহ খান মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে ফ্রিডম পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরের বছর আতাউল্লাহ খান ও তাঁর ভাই শফিক উল্লাহ খানের আমন্ত্রণে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে আসেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম এবং কর্নেল ফারুক।
মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, ১৯৯৩ সালে মহেশখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিবিরের এক সভায় আতাউল্লাহ খান আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ ছাড়া পাঞ্জেরী শিল্পগোষ্ঠীর পরিবেশনায় আতাউল্লাহ খান রচিত একটি নাটিকায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরাঙ্গণাদের নিয়ে কটূক্তি করা হয়।
মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, ‘এত দিন শুনেছি স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আমাদের দলে অনুপ্রবেশ করেছে। আর এখন দেখি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা খোদ বঙ্গবন্ধু কন্যার সফরসঙ্গী হিসেবেই অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের আর বলার কী থাকে!’
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ বলেন, ‘আতাউল্লাহ খান জামায়াত-শিবিরের শিল্পগোষ্ঠী পাঞ্জেরীর কেন্দ্রীয় পরিচালক। তিনি প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই আতাউল্লাহ খান রাতারাতি মুখোশ বদলে গায়ে মুজিব কোর্ট নিয়ে অতীতের কর্মকাণ্ড মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।