আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে প্রশ্রয় দিইনি: ছাত্রলীগ

- ৯-Oct-২০১৯ ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে প্রশ্রয় দিইনি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।
বুধবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।
আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে প্রশ্রয় দিইনি। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ইতিহাসে তা নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা আবরার ফাহাদ হত্যার নিন্দা জানিয়েছি। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আজ কালোব্যাজ ধারণ করেছি।
তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ন্যক্কারজনক ঘটনায় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এতে মুহূর্তেই ছাত্রসমাজসহ সবার হৃদয়ে তা প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে। আবরারের বাবা-মায়ের মুখে সবাই নিজের বাবা-মায়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান। আবরারের ছোট ভাইয়ের অসহনীয় চাহনিতে সবাই নিজেদের অন্তর্জালা অনুভব করেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, হত্যাকাণ্ডটির সঙ্গে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় দ্রুততার ভিত্তিতে নানামুখী সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- হত্যকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে ও হত্যাকারীদের সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ওঠে বিচারের দাবি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক শোকপ্রকাশ ও নিন্দা জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার ভেতর প্রতিবেদন জমাদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার আগেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এতে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ কখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। উৎসাহও দেয় না। সংগঠনের পরিচয় ও পদবি ব্যবহার করে কতিপয় ব্যক্তির অতিউৎসাহী হয়ে সংঘটিত কোনো কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগ অতীতের মতো বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতেও প্রশ্রয় দেবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে-ই করুক, তার কোনো নিস্তার এই বাংলাদেশে হবে না। কাজেই অতিউৎসাহী হয়ে কেউ যাতে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এখন পলাতকদের দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছেন আল নাহিয়ান জয়।
জয় আরও বলেন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার পরও ছাত্রলীগ তার সাংগঠনিক অবস্থান পরিষ্কার করার পরও কিছু কুচক্রী মহল ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, বিভিন্নভাবে ধর্মীয় উন্মক্ততা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করছেন। দেশবিরোধী চুক্তির ধোয়া তুলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডে হল প্রশাসনের গাফিলতি ছিল। বুয়েটসহ যেকোন ক্যাম্পাসে এটা সাংগঠনিক সমস্যা নয়, গুটিকতক ব্যক্তির সমস্যা।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ইউনিটের সাংগাঠনিক নেতারা, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সংগঠনে অনুপ্রবেশকারীদের যাচাই-বাছাই শুরু করেছি। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, আবরার হত্যাকাণ্ড পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় প্রদানের পরও এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সাংগঠনিক অবস্থান পরিষ্কার করার পরেও কিছু কুচক্রী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, বিভিন্নভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা, দেশবিরোধী চুক্তির ধোঁয়া তুলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি ও কটুক্তিমূলক বক্তব্য প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে কতিপয় নামসর্বস্ব, কর্মী ও কর্মসূচী বিহীন, ব্যানার নির্ভর ছাত্র সংগঠন ও সেসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে, ধারাবাহিক উস্কানির মাধ্যমে যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, বিগত ১১ বছরে সেশনজটবিহীন নির্বিঘ্ন শিক্ষা পরিবেশ বিনষ্টের যে ষড়যন্ত্র রচনা করছে তা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনমতেই মেনে নিতে পারে না। দেশের ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে এসব হীন কর্মকাণ্ড সর্বাত্মকভাবে মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
গেস্টরুম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, গেস্টরুম ভালো সংস্কৃতি। এখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনেক নিয়ম-কানুন শেখানো হয়। ছাত্রলীগ এটাকে পজিটিভ হিসেবেই দেখছে। গেস্টরুমে নেগেটিভ কিছু অত্যন্ত কম হয়। ভালো কিছু শেখানো হয়।
এসময় আবরার হত্যার ঘটনার জন্য লজ্জা ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।