দুর্নীতি-নারী কেলেংকারীর দায়ে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প পরিচালক মাহবুবকে

- ১৩-Oct-২০১৯ ০১:০৯ অপরাহ্ন
::উৎপল দাস::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্নীয় পরিচয় দিয়ে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মাহবুব আলম সীমাহীন দুর্নীতিতে লিপ্ত। এই দুনীর্তিবাজ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়ার সব ধরণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এ প্রকল্পটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, ঘুষ, কমিশন বাণিজ্য এবং প্রকল্প পরিচালক মাহবুব, তার গাড়িচালক ও দেহরক্ষীর একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে প্রকল্পটি এখন ধ্বংসের পথে। এমনকি প্রতারণা ও নারী কেলেংকারির একাধিক অভিযোগও রয়েছে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প পরিচালকের দুনীর্তি আর কেলেংকারি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
‘শেখ হাসিনার অবদান, গৃহহীনদের বাসস্থান’ এ স্লোগানকে সামনে রেখেই ২০১৬ সালের মার্চে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্ব যাত্রা শুরু করে। ৯৪১ কোটি ৮১ লাখ টাকার এ প্রকল্পের পরিচালক হিসাবে ইতিমধ্যেই মাহবুব আলম শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালক মাহবুব আলম গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্টন করেন। সেখানে প্রতিটন থেকে ৩ হাজার টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। সারাদেশে তিনটি পাবর্ত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মাহবুব আলম নিজের পছন্দের লোকদের কাজ দিতে স্থানীয় জেলাপ্রশাসক থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ধমকের সুরে কথা বলেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্নীয় পরিচয় দিয়ে মাহবুব আলম আমাকে বেশ কয়েকবার ধমক দিয়েছেন। তার পছন্দের লোককে কাজ না দেয়ায় তিনি আমাকে পাবর্ত্য অঞ্চলে বদলি করারও কথা বলেন।
এদিকে, গুচ্ছগ্রাম প্রকল-২ এর আওতাধীন একটি কাজ দেয়ার কথা বলে বরিউল হাসান রিপনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা আগেই নিয়েছিলেন প্রকল্পটি পরিচালক মাহবুব আলম। ১ বছরেরও বেশি সময় টাকা নিয়ে কাজ না দেয়ায় রিপন টাকা ফেরত চাইলে উল্টো হুমকি দিয়েছেন মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী পরিবারের লোক, বেশি বাড়াবাড়ি করলে জেলে ঢুকিয়ে দিবো।’ এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-২ এর পরিচালক যুগ্ম সচিব মাহবুব আলমের দুর্নীতির মূল দোসর হচ্ছেন তার গাড়ি চালক মিদুল এবং দেহরক্ষী বজলুর রহমান। তাদের মধ্যে গাড়িচালক মিদুলকে সবাই ছায়া প্রকল্প পরিচালক হিসাবেই জানে। মিদুলের মাধ্যমেই মাহবুব আলমের সরাসরি ঘুষ গ্রহণে ছবিও ভোরের পাতার হাতে এসেছে। এমনকি অফিসেই নারী নিয়ে রঙ্গলীলায় মেতে থাকেন মাহবুব আলম।
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসাবে মাহবুব আলম প্রধানমন্ত্রী পরিবারের কোনো আত্নীয় নন বলে ইতিমধ্যেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুড়বাড়ীর এলাকার লোক হওয়াতে তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্নীয় পরিচয় দিয়ে সব জায়গাতে প্রভাব বিস্তার করার অপচেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে গণভবনের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তাদের সন্তানরা ছাড়া কাউকেই প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে মানতে নারাজ। এরপরও কেউ যদি তার পরিবারের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে টেলিফোনে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। ভূমি মন্ত্রণালয়েও কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা থাকতে পারবে না। ইতিমধ্যেই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প পরিচালক মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। তাকে ওই প্রকল্প থেকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মাহবুব আলমকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি মন্তব্য জানতে চেয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি প্রতিউত্তর করেননি।