জেলহত্যা দিবসের সভায় শেখ হাসিনা : খুনীদের মদদদাতাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না

  • ৩-Nov-২০১৯ ০১:০৯ অপরাহ্ন
Ads

:: নিজস্ব প্রতিবেদক ::

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা ওই রাজাকার, খুনী, আলবদর, আলশামস এবং খুনীদের মদদদাতাদের স্থান বাংলার মাটিতে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন হবে না। বাংলাদেশের মানুষকে সেইভাবে চিন্তা করতে হবে। দেশ যেন আবার খুনীদের রাজত্ব না হয়।

বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ড, জেলহত্যাকাণ্ডের বিচার যেমন হয়েছে তেমনি আগামীকে জেলহত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি। রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 

১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাতের আঁধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীচক্র নির্মমভাবে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে হত্যা করে। যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে জাতির জন্য বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। আলোচনাসভায় অন্যান্যদের মধ্যে মধ্যে আওয়ামী লীগে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বক্তব্য রাখেন। লেখক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেয় না জানিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা বারবার সরকারে এসেছি বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করতে পেরেছি, তাদের ফাসির রায় কার্যকর করতে পেরেছি। জাতির পিতার হত্যার বিচার করে কার্যকর করেছি। ৩রা নভেম্বর হত্যার বিচার করেছি। রায় কার্যকর করেছি। এখনো যে কয়টা খুনী এখানে সেখানে পালিয়ে আছে তাদেরও আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। 

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও খূনীদের বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে। কিন্তু এদের যারা দোসর; হয়তো আমরা আজকে তাদের বিচার করে যেতে পারলাম না। কোনো না কোনো দিন এদের বিচার হবেই। কারণ, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। হয়তো এমন একদিন আসবে এই ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়বে। তাদের এই রহস্য উদঘাটন অবশ্যই হবে। কেউ না কেউ এটা করবেই। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলেছিল ২১ বছর পর আবার ফিরে এসেছে। আবার সময় আসবে। 

জেলহত্যা দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের ঘটনা শুধু একটা পরিবারের ঘটনাই বলা হতো। কিন্তু ৩রা নভেম্বরের পর থেকে মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল এটা ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক এবং স্বাধীনতবিরোধীদের কাজ। কারণ তারা প্রতিশোধ নিয়েছিল। বাংলাদেশ কেন স্বাধীন হলো? তার প্রতিশোধ। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যেন বাংলাদেশ টিকতে না পারে সেজন্য এই হত্যাকা-।   

জেলহত্যার বিচারের সময়কটা কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে আমরা এদের বিচার করি। ২০০১ এ সেই বিচারের রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই খায়রুজ্জামানসহ এই ধরণের খুনীদের আবার পুনরায় সেই ফরেন সার্ভিসে চাকরি দেয়। এমনকি বিদেশি দূতাবাসেও তাদের কাউকে দিয়ে যায়। মামলার রায় হবে ওই সময় চাকরি শুধু না, সাথে সাথে প্রমোশনও দেয়। এক খুনী বিদেশে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর তাকে প্রমোশন দিয়ে তার অবসর ভাতা সবকিছু দিয়ে দেয় তারা। মৃত ব্যাক্তিকেও খালেদা জিয়া প্রমোশন দিয়ে গেছে; খুনী পাশাকে। এই জাতীয় অন্যায় অবিচার তারা করে গেছে। 

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা দল তার চেয়ারপারসন এতিমের অর্থ আত্মসাতে জেলে। আবার ভারপ্রাপ্ত যাকে করলো, বাংলাদেশে এতো নেতা থাকতে বিএনপির নেতার এতোই অভাব হয়ে গেল যে, একজন নেতা পেল না আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামী এবং যে পলাতক; তাকে বানালো ভারপ্রাপ্ত। বিএনপির নেতৃত্বের এতো অভাব। আমি জানি না, যারা বিএনপি করে তাদের কোনো মেরুদ- আছে কী না, আত্মমর্যাদা আছে কী না সেটাই আমার সন্দেহ। 

বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মন্ত্রী করা হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের। যাদের নির্দেশে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময় মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ আর স্বাধীন নেই। আমি একসময় সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি, মানুষের কাছে গিয়েছি, তখন তাদের কাছে শুনেছি কিভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল তাদেরকে। আমি জানি না এদেশের মানুষ এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু ভুলে যায় কেনো? 

টানা তিন মেয়াদের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৯ আমরা এই দীর্ঘ সময়টা সরকার গঠন করেছি বলে মানুষের উন্নতি হচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনাটা আবার ফিরে এসেছে। আজকে আর সেই অবস্থা দেশে নেই। একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। সেই সন্মানটা বাংলাদেশ আজকে পেয়েছে। এই সন্মানটা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। 

দেশের চলমান শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশেল মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে, সুন্দরভাবে জীবন যাপন করবেন এটাই আমাদের চাওয়া।

Ads
Ads