কৃষিজমি বাঁচাতে হবে, ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

  • ৬-Nov-২০১৯ ০৭:০৫ অপরাহ্ন
Ads

কৃষকের সরকারি সহায়তার টাকা নিয়ে যেন অনিয়ম না হয়

বাংলাদেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ, এ অবদান কৃষকের

শিল্পায়নের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লট দেওয়া হবে

:: নিজস্ব প্রতিবেদক ::

কৃষক ও কৃষি বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও শিল্পায়ন নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কৃষিজমি বাঁচাতে হবে। ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে হবে। তাই কৃষিজমি নষ্ট করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এটার অর্থ হলো যেন কৃষিজমি নষ্ট না হয়। যারা ইন্ডাস্ট্রি করতে চায়, তাদের ওইসব অঞ্চলে প্লট দেওয়া হবে। এছাড়া সব ধরনের সার্ভিস দেওয়া হবে। তারা সেখানে শিল্প গড়ে তুলবে। কারণ আমার কৃষিজমি বাঁচাতে হবে।’

বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের দশম সম্মেলন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের একখন্ড জমিও অনাবাদি থাকবে না। এ সময় কৃষক লীগে নেতাকর্মীদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হয়ে অন্তত তিনটি করে গাছ লাগানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া বাংলাদেশ কৃষক লীগের দশম সম্মেলন হচ্ছে প্রায় সোয়া সাত বছর পর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা। এবারের কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিল এবং ৯ হাজার ডেলিগেট।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আমরা উন্নত হব, শিল্পায়ন করব। তবে কৃষকদের বা কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কাজেই আমরা উন্নয়নে কৃষকদের সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষকরাই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখে। কৃষক ফসল ফলায়, আমরা খেয়ে বেঁচে থাকি। একটি সমাজ ও দেশের জন্য কৃষক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে কৃষক ফসল ফলাত, কিন্তু তার পেটে খাবার ছিল না। তাদের পরনে কাপড় ছিল না। কৃষকের অধিকার সংরক্ষণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষক যেন তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রায় ৩ কোটি কৃষক সরকারি সহায়তা পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন, ‘কৃষকের টাকা নিয়ে যেন অনিয়ম না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ই-কৃষি চালু হয়েছে। কৃষকরা যেকোনো সমস্যার সমাধানে ‘১৬১২৩’ নম্বরে কল করে জানতে পারে। আমাদের কৃষকরাও এখন যথেষ্ট পরিপক্ব। মোটকথা কৃষকদের যত ধরনের সুবিধা দেওয়ার কথা, আমরা তা দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন ৮২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। কৃষকের চেষ্টা এবং কৃষি গবেষণার ফলে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। এ অবদান কৃষকের। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কৃষকের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করার চিন্তা করছি। এতে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়বে। অবশ্য আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় এখন পুষ্টির দিকে নজর দিয়েছি। ডিম, মাংস, মিঠা পানির মাছ, তরিতরকারি এবং ধান উৎপাদনে তার সরকারের সাফল্যও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তার সরকারের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ কর্মসূচির উল্লেখ করে যার যার বাড়িকে তার তার খামারে পরিণত করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কেউ বসে থাকবে কেন, সবাই কাজ করবে। যে যেভাবে উৎপাদন করতে চায়, যা উৎপাদন করতে চায়। আমরা সেই সুযোগটা দেবো একটুকরো জমিও অনাবাদি থাকবে না।’

‘অনাচে, কানাচে, ঘরের পাশে, জলা, ডোবা যাই থাকুক এমনকি ছাদের ওপরে পর্যন্ত যেন চাষ হয় এবং ফসল উৎপাদন হয় এবং কৃষকরা ভিটেবাড়িতেও যেন ফসল উৎপাদন করতে পারে সেজন্য আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি’, যোগ করেন তিনি।

এ সময় তার সরকারের পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক করে দেওয়ায় তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী উৎপাদিত পণ্য সমবায়ের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের উদ্যোগের উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজা এবং সহ-সভাপতি শরিফ আশরাফ হোসেন বক্তৃতা করেন।

কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক সমির চন্দ্রের সঞ্চালনায় সর্বভারতীয় কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। আলোচনা পর্বের আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

Ads
Ads