যে প্রক্রিয়ায় হচ্ছে জবি-ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি: পদ পেতে মরিয়া বিতর্কিতরা

- ১০-Nov-২০১৯ ০৯:০২ পূর্বাহ্ণ
উৎপল দাস
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইউনিট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজ। গত ২০ এবং ২৪ জুলাই যথাক্রমে জবি এবং ইডেনের ছাত্রলীগের সম্মেলন হলেও এখনো কমিটি দেয়া হয়নি। এই সময়ের মধ্যেই ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পান সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তাদের সময়ে সম্মেলন হলেও শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হেভিওয়েট দুটি ইউনিটের কমিটি তারা করে যেতে পারেননি। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও পারেননি কমিটি দিতে। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করতে শুরু করেছে।
এদিকে, ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভোরের পাতার এ প্রতিবেদককে বলেন, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দিতে চাই। আর সেই প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যেই বেশ দূর এগিয়েছে। পক্রিয়াটি কি এমন প্রশ্নের জবাবে আল নাহিয়ান জয় বলেন, আমরা সরাসরি নিজেরা জবি এবং ইডেনের কমিটি অনুমোদন করতে চাই না। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা ক্লিন ইমেজের, মেধাবি এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠাবো। তারপর তিনি যে নামগুলো দিবেন, তারাই নেতা হবেন। তবে সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।
এদিকে, রাজধানী ঢাকায় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইউনিট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের কমিটির শীর্ষ পদের জন্য এখনো বিতর্কিতরা দৌঁড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন বলে সংগঠনের একটি নির্ভরযোগ্য নিশ্চিত করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতে জায়গা পেতে যেসব বিতর্কিতরা এখনো সক্রিয় রয়েছেন তাদের মধ্যে জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম টিটন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলার তিন নাম্বার আসামি। জবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এফ এম শরীফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত তিনি। গত কমিটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশীও ছিলেন এই নেতা। কিন্তু সহ-সভাপতি হওয়ায় স্বেচ্ছায় পদ থেকে অব্যাহতি নেন। জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল আমীন শেখ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক হারুন-অর-রশিদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তারা দুজনই আবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলমের অনুসারী।
জবি ছাত্রলীগের সাবেক এই সহ-সভাপতি শীর্ষ পদ বাগে আনতে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের কাছে নিয়মিত ধরণা দিচ্ছেন। জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম ফরাজি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। এ নেতার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল ইসলাম রবি সিআইডির প্রশ্ন ফাঁস তালিকার আসামি।
জবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিসাদ তরিকুল-রাসেল কমিটির গঠনের ১৫ দিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিতে চাঁদাবাজির ও মারামারির অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। তরিকুল-রাসেল কমিটি ভাঙার পরেও টিএসসি, ফটোকপির দোকান, লেগুনা স্টান্ড থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।
এছাড়া আলোচিত জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আখতার হোসাইন ও আসাদুজ্জামান আসাদ শীর্ষপদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এছাড়া জবি ছাত্রলীগের নোয়াখালী অঞ্চলের দুই সন্তান জবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক আজীজ ও শান্ত নাজমুল বাবু বিশেষ সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় রয়েছেন।
এদিকে, ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীর সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন। এরমধ্যে ১২-১৩ জন রয়েছেন চরম বিতর্কিত। এই বিতর্কিতরাই জোর লবিংয়ে এগিয়ে রয়েছেন। পদ চলে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও ভারপ্রাপ্ত আল নাহিয়ান খান জয়-লেখক ভট্টচার্যকে ভিঙিয়ে তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে নানামুখী তদবিরে ব্যস্ত। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য যারা আলোচনায় আছেন, তারা হলেন-বীথি আকতার, পাপিয়া রায়, পাপিয়া প্রিয়া, ইসরাত জাহান ইতি, নাজমা আকতার, সুমনা মলি্লক পপি, সানজিদা জাহান, কামরুন্নাহার, বিপাসা রনি, বস্নাফিউননাহার লাবণ্য, জান্নাত আরা জান্নাত, রোকসানা আকতার, সুখী, সোনালী, সাবিকুন্নাহার তামান্না, তামান্না জেসমিন রিভা, জেবুন্নাহার শিলা, মাহমুদা সুমি, বেনজির সেবাসহ অনেকেই। তাদের প্রত্যকের বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তবুও তারা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাজ করার চেয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের খুশি করতেই ব্যস্ত। এছাড়া সিট বাণিজ্য, কথিত সাপ্লাই বাণিজ্য থেকে শুরু করে জামায়াত-বিএনপি পরিবারের সদস্য, বিবাহিতারাও রয়েছেন।
এদিকে, ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য বলেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগে কোনো অপরাধে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হলে বিতর্কিত কাউকেই নেতা বানানোর সুযোগ নেই। এমনকি তাদের কারো নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার উপায় নেই। সময় নিয়ে হলেও ক্নিন ইমেজের নেতৃত্ব বের করে আনাই আমাদের দায়িত্ব।