যে কারণে ভাঙনের মুখে কর্নেল অলির এলডিপি!

  • ১৬-Nov-২০১৯ ০৪:৫১ অপরাহ্ন
Ads

ভোরের পাতা ডেস্ক
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ভাঙনের মুখে পড়েছে। কর্নেল অলির স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক আচরণ ও সম্মেলন ছাড়া ত্যাগীদের বাইরে রেখে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ নেতা এলডিপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম নতুন দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন। তার সঙ্গে একজোট হয়েছেন বিভিন্ন সময় এলডিপি ছেড়ে যাওয়া ও বর্তমানে নিষ্ক্রিয় থাকা বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। কর্নেল অলিকে বাদ দিয়ে এলডিপি নিয়েই তারা এগিয়ে যেতে চান।

এ উদ্দেশ্যে এলডিপি’র ক্ষুব্ধ নেতারা রোববার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠকে বসবেন বলে জানা গেছে। এ বৈঠক থেকেই আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত ও নতুন ঘোষণা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৯ জুন ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট এলডিপির নতুন নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি-মহাসচিব পদে যথাক্রমে কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ও ড. রেদোয়ান আহমেদ বহাল থাকলেও বাদ পড়েন দলটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। নতুন কমিটিতে সেলিমের ‘সম্মানজনক’ পদ না থাকায় তার অনুসারীরা ভীষণ রকম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কর্নেল অলির বিরুদ্ধের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে সেলিমের সঙ্গে একজোট হয়েছেন এলডিপির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল করিম আব্বাসী, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গণি। তাদের পাশাপাশি এলডিপির আরও বেশ কজন নেতা শাহাদাৎ হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বৈঠকে বসবেন রোববার। এ বৈঠক থেকে কর্নেল অলি আহমেদকে অব্যহতি দিয়ে এলডিপি পুনর্গঠন করার মত সিদ্ধান্ত বা অন্য কোনো সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈঠকের অন‌্যতম উদ্যোক্তা শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, গত তিন মাস আগে থেকে কর্নেল অলির সঙ্গে রাজনৈতিক দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মুলত জাতীয়তাবাদী ঘরানার। আর তিনি জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী দলের বিপক্ষে কথা বলছেন। বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এগুলো আমি মানতে পারি নি। আমি এর প্রতিবাদ করেছি। তার সাথে আর রাজনীতি করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরে কর্নেল অলি একক সিদ্ধান্তে মুক্তি মঞ্চ গঠন করেন। কিন্ত মুক্তি মঞ্চের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে পরিস্কার না। আমরা ভেবেছিলাম, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য তিনি এই মুক্তি মঞ্চ করেছেন। কিন্তু পরে দেখলাম, সেখান থেকে বিএনপির বিরুদ্ধেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আবার তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জামায়াতের পক্ষ নিচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য আমাদের কাছে ভালো বলে মনে হচ্ছে না। যে কারণে তাকে ছাড়া কিছু করার চিন্তা করছি।

এ বিষয়ে জানতে কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়েই এলডিপির কমিটি গঠন করা হয়েছে। পদবঞ্চিতদের কাছে এ কমিটি গ্রহণযোগ্য না হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এলডিপি মহাসচিব ড. রোদোয়ান আহমেদ বলেন, এলডিপি থেকে বাদ পড়ার পর কে কোন দল করবে, এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে এলডিপি চিন্তিত নয়। এলডিপির প্রেসিডেন্ট মহাসচিবসহ প্রেসিডিয়াম সদস্যরা মিটিং করেই নিষ্ক্রিয়দের কমিটিতে না রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অযোগ্য, নিষ্ক্রিয়রা এলডিপি থেকে বাদ পড়বে, এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এলডিপি থেকে সাবেক তিনজন সংসদ সদস্য মনোনয়ন না পেয়ে হতাশা থেকে দলত্যাগ করেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সবাইকে নমিনেশন দেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ এরা দীর্ঘ ১২ বছরেও তাদের এলাকায় কোনো ওয়ার্ড এমনকি ইউনিয়ন কমিটিও করতে পারেনি।

এলডিপি মহাসচিব আরও বলেন,আমার প্রসঙ্গে কিছু সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, সুযোগ পেলে আমি বিএনপিতে যোগ দেব। যা মনগড়া বক্তব্য। এর কোনো ভিত্তি নেই।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল অলি আহমেদ ও বিএনপির অপর ২৪ মন্ত্রী-এমপি একত্রিত হয়ে দলটি গঠন করেন। তবে ২০০৭ সালে আদর্শগত কারণে বিকল্প ধারা এলডিপি থেকে বের হয়ে যায়। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এলডিপি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে অবস্থান করে। কিন্তু ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে এলডিপি মহাজোট থেকে বের হয়ে আসে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করে। দলের সভাপতি অলি চট্টগ্রাম-১৩ আসনে জয়লাভ করেন। ২০১২ সালে এলডিপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেয়। এই জোট ২০ দলীয় জোটে বর্ধিত হওয়ার পর কর্নেল অলি বেশ কিছুদিন এর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের ভরাডুবির পর গত জুনের শেষ দিকে তিনি গঠন করেন 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চ' নামে নতুন আরেকটি জোট।

Ads
Ads