অবশেষে ৩ দিনের মধ্যেই কলংকমুক্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, কমপক্ষে ২৫ নেতার পদ শূণ্য করা হচ্ছে

- ৯-Dec-২০১৯ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ
উৎপল দাস
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে গৌরবময় ইতিহাসের উজ্জ্বলতম সাক্ষী। কিন্তু বরাবরই গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয় এই ছাত্রলীগ। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উদ্যোগী হয়েই সংগঠনটির শীর্ষ নেতা বাছাই করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পরই আবারো খবরের শিরোনাম হয়েছে বিতর্কিতদের কারণে। সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে তাদের পদ থেকেও সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দিয়েছেন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা।
শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরই সংগঠন থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার দাবি উঠলে ওই সময় তাৎক্ষণিকভাবে এক বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৯ জন বিতর্কিতদের পদ শূণ্য ঘোষণা করে। কিন্তু তারা সেখানে বিতর্কিতদের নাম প্রকাশ করেনি। এরপর আরো কয়েকজন বিতর্কিতদের নাম উঠে আসে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এদিকে, প্রায় দুই মাস ধরে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত হিসাবে পালন করছেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। তাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হিসাবে সামনে হিসাবে দাঁড়িয়েছিল বর্তমান ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার বিষয়টি। অবশেষে দীর্ঘ সময় ধরে নানা ধরণের যাচাই-বাছাই করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যেই এই কাজটি করবেন জয়-লেখকের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ। এ কথা ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছেন খোদ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।
সোমবার বরিশাল থেকে ফেরার পথে মুঠোফোনে আল নাহিয়ান খান জয় এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশেই আমরা ছাত্রলীগকে কলংকমুক্ত করার কাজটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এগিয়ে নিয়ে এসেছি। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন সংগঠন সেভাবেই চলছে। মূলত বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার পরই শুরু হবে কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতাদের দায়িত্ব বন্টন। এমনকি বিতর্কিতদের শূণ্যপদে যোগ্য, মেধাবি ও ত্যাগীদের স্থান দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কতজন বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতার পদ শূণ্য হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে আল নাহিয়ান খান জয় ভোরের পাতাকে সুস্পষ্টভাবে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জনের নাম রয়েছে। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের ৪ নেতার সঙ্গেও এ তালিকা নিয়ে চূড়ান্তভাবে আলোচনা শেষ হয়েছে। ফলে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে কলংকমুক্ত করা হবে।
এদিকে, ভোরের পাতা ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে সেই ২৫-৩০ জনের একটি তালিকা সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। সেখানে ৯ জন সহ-সভাপতি, ১ জন সাংগঠনিক সম্পাদক, ২ জন সম্পাদক, ১১ জন উপ সম্পাদক, ৫ জন সহ-সম্পাদক এবং ২ জন সদস্য রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে ৩০ জনের মধ্যে, সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল শোভন-রাব্বানীর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া উপ-সম্পাদক রুশি চৌধুরীও বিয়ে করার আগেই শোভন-রাব্বানীর কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ রোকেয়া হলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপ সম্পাদক বিএম লিপিও সাম্প্রতিক সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেছেন। যদিও তিনি জয়-লেখকের কাছে কোনো পদত্যাগ পত্র জমা দেননি।