ছাত্রলীগে সিন্ডিকেট ভাঙেনি

- ২-Aug-২০১৮ ০৬:০০ অপরাহ্ন
ভোরের পাতা ডেস্ক
ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটিতে দীর্ঘদিনের পরিচিত সিন্ডিকেট পুরোপুরি না ভাঙলেও সিন্ডিকেটের ‘আইসবার্গের ডগা’ ভেঙেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সমুদ্রের পানিতে ভেসে বেড়ানো বিশাল বরফখ-কে আইসবার্গ বলা হয়। আইসবার্গের সাধারণত দশভাগ থাকে পানির নিচে আর একভাগ থাকে পানির ওপরে। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ যে সিন্ডিকেটের হাতে ছিল সেটাকে একটা আইসবার্গের সঙ্গে তুলনা করা হলে এবারের কমিটির মধ্য দিয়ে আইসবার্গের ডগা বা চূড়া ভেঙেছে। এমনটাই মত ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতার।
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সংগঠনটির তিন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাবি ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি সঞ্জিতচন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। ঢাকা মহানগর উত্তরে মো. ইব্রাহিম সভাপতি এবং সাইদুর রহমান হৃদয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আর দক্ষিণে মেহেদী হাসানকে সভাপতি এবং জোবায়ের আহমেদকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয় ঢাবি কমিটিকে। এবার কেন্দ্রীয় ও ঢাবি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চারজনের মধ্যে দুজন সরাসরি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ওই সিন্ডিকেটের অনুসারী। বাকি দুজনের একজন শুরুতে সিন্ডিকেটের চরম অনুসারী হলেও এখন দৃশ্যমান দূরত্ব বজায় রাখেন সিন্ডিকেটের সঙ্গে। আর চতুর্থজন সিন্ডিকেটের বাইরের। ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ চার নেতার একজনকে সংগঠনের কেউই তেমন একটা চেনেন না। বাকি তিনজন সরাসরি সিন্ডিকেটের অনুসারী। সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্যদের হাত ধরেই ছাত্রলীগের পদ-পদবির রাজনীতিতে যাত্রা শুরু হয় তাদের।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে নতুন কমিটি করার দায়িত্ব দেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এবারই প্রথম গত দেড় যুগের ‘নির্বাচনের’ বদলে ভিন্নভাবে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষিত হলো। এর আগের কমিটিগুলোতে ছাত্রলীগের আইসবার্গের মতো সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিজেদের পছন্দের একাধিক ডামি প্যানেল তৈরি করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতেন। ফলে দিন শেষে তাদের অনুসারীরাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হতেন। কিন্তু এবারের সম্মেলনে ‘ইলেকশন’ না ‘সিলেকশন’-এর মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হবে এ বিরোধের জেরে কমিটি গঠনের এখতিয়ার চলে আসে শেখ হাসিনার হাতে। প্রধানমন্ত্রী টানা আড়াই মাস যাচাই-বাছাই শেষে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ পদাধিকারী এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা বলেন, সম্মেলনের পর পর কমিটি ঘোষণা করতে না পারার মধ্য দিয়েই তো সিন্ডিকেটের পতন শুরু হয়েছে। আড়াই মাস পর যারা কমিটিতে এসেছেন তারা এখন আর কোনো ভাইয়ের লোক না, সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। তিনি আরও বলেন, এই কমিটির কাছে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। এরা টিকে থাক, তাতেই খুশি আমরা। কারণ তারা সংকট উত্তরণকালীন একটা সময়ে এসে দায়িত্ব পেয়েছে। এবারের কমিটিতে হয়তো শীর্ষ চারজনের একজন এসেছে সিন্ডিকেটের বাইরের। কিন্তু পরবর্তী কমিটিতে আরও বেশি পদ সিন্ডিকেটের বাইরে থেকে আসবে বলেই মনে করছি।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা বলেন, কী করব! রন্ধ্রে রন্ধ্রে সিন্ডিকেট। টানা ১৭-১৮ বছরের একটা কাঠামো চাইলেই তো আর রাতারাতি ভাঙা সম্ভব নয়। তবে আশার বাণী এটাই, এবারের কমিটির মধ্য দিয়ে সিন্ডিকেটের পতন এবং আবারও শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের যাত্রা শুরু হয়েছে। আগামীতে এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত এবং তাদের সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের ফাইল দলের তিনজন নারী নেত্রীকে গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। কমিটিতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন নেতার নাম শীর্ষপদে আলোচনায় থাকলেও শেষ মুহূর্তে তিনি বাদ পড়েন। আরও যেসব প্রার্থীর নাম আলোচনায় ছিল তাদেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হয় শীর্ষ দুই পদে নতুন নেতা নির্বাচন ছাড়াই। গত মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) রাতে সংগঠনটির কমিটির অনুমোদন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সূত্র: আমাদের সময়