ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন: এরপর কি?

- ১৯-Dec-২০১৯ ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ
:: আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে আজকের প্রধান খবর হচ্ছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসিত হওয়ার ঘটনাটি। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও ট্রাম্পের ভবিস্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকের জন্য এসব প্রশ্নোত্তর তুলে ধরা হলো।
সিনেটে ইমপিচমেন্ট শুনানি কবে হবে?
বুধবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দু'টি অভিযোগের ক্ষেত্রেই অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পড়েছে প্রতিনিধি পরিষদে। এবার মার্কিন পার্লামেন্টর উচ্চকক্ষ সিনেটে ট্রাম্পের বিচার হবে। তবে কবে থেকে বিচারকাজ শুরু হবে এখনও তা নিশ্চিত হয়নি। সম্ভবত শীতকালীন ছুটির পর জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেট এই বিচারের ব্যাপারে সাধারণ সম্মতি নেয়া শুরু করবে।
সিনেটের সংখ্যালঘু ডেমোক্রেটিক দলের নেতা চাক শুমার তেমনটাই অনুরোধ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, রিপাবলিকান সিনেট নেতা মিচ ম্যাককনেলও তার এই প্রস্তাবে সায় দেবেন।
মার্কিন নির্বাচনে কী প্রভাব পড়বে?
ট্রাম্পের অভিশংসনের ঘটনাটি ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কিনা এবং ফেললেও কতটা, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এটি আসলে খুবই কঠিন একটি প্রশ্ন। সরাসরি এর উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে নির্বাচনে এর প্রভাব কিছুটা হলেও যে পড়বে তা নিশ্চিত। রিপাবলিকান দলের সাংসদরা বলছেন, এই অভিশংসনের ফলে তারা লাভবান হবেন। তাদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার অর্থায়নের একটা বড় সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে এই প্রক্রিয়া। সমর্থকরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আগের চেয়ে জোরেসোরে সমর্থন জানাচ্ছে বলেও তারা দাবি করেছে।
তবে ডেমোক্র্যাটরা বলছে, এই ইমপিচমেন্ট ট্রাম্পের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করবে, যার ফলে ভোটাররা তাকে ভোট দিতে গিয়ে সঙ্কোচের মধ্যে পড়বে।
তবে জরিপের ফলাফল বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের পক্ষে ও বিপক্ষের মতামত ইমপিচমিন্ট সংক্রান্ত গত কয়েক মাসের নাটকে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
অর্থাৎ অভিশংসন বা ইমপিচমেন্টের বিতর্ক ওঠার আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে যেরকম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেরকম, এখনো লড়াই হবে।
ট্রাম্প ক্ষমতা হারাবেন কি?
ট্রাম্প অভিশংসিত হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিতে পারেন। তখন তিনি আইনগতভাবে ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট বানিয়ে নিজে পদত্যাগ করতে পারেন। মার্কিন সংবিধানে এই প্রক্রিয়াকে যেহেতু নিষিদ্ধ করা হয়নি, কাজেই এটি খুবই সম্ভব।
তবে প্রথমত, মাইক পেন্স ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট বানাতে চাইলে সেই প্রস্তাব নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ এবং উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদিত হতে হবে। ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিনিধি পরিষদে স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে দিতে চাইবে না।
এমন সম্ভাবনাও আছে, ট্রাম্পকে সিনেট তার দায়িত্ব থেকে অপসারণ করার সময়ই এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করবে যার ফলে ভবিষ্যতে তিনি দায়িত্বে আসার সুযোগ হারাবেন। কিন্তু সেনেট যদি তা না করে, তাহলে মাইক পেন্স সহজেই ট্রাম্পকে ভাইস প্রেসিডেন্ট বানাতে পারবেন। তখন ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রেও ট্রাম্পকে বাধা দেয়া সম্ভব হবে না।
এই পুরো প্রক্রিয়ার গুরুত্ব কী?
ডেমোক্রাটদের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসিত হওয়ার প্রায় কোনোরকম সম্ভাবনা না থাকলেও তারা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টকে তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী করার উদ্দেশ্য থেকে। ক্ষমতার অপব্যবহার করার দায়ে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এই পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা না করলে হয়তো তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনকে ঘিরে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতেন যা ডেমোক্রাটদের আরো ক্ষতিগ্রস্ত করতো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বিবেচনা করলেও, দলের সমর্থকদের আনুগত্য ধরে রাখতে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া পরিচালনা করা প্রয়োজন ছিল ডেমোক্রাটদের।
সিনেটে ট্রাম্পের বিচার শুরু হবে কবে?
প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটির পর এবার মার্কিন সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। তবে এর মেয়াদ এবং সময় নির্ভর করছে সিনেটের ওপর। সিনেট কোনো এক সময় এই বিচার সংক্রান্ত সাধারণ নিয়ম এবং অন্যান্য মাপকাঠি ঠিক করবে। তবে বিচার এড়ানোর কোনো সুযোগ নাই।
একটি বিষয়ে কিছুটা অস্পষ্ট আইনি বিতর্ক রয়েছে যে নিম্নকক্ষের ভোটের পরই সেনেটের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, নাকি নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিকভাবে ইমপিচমেন্টের কাগজপত্র সিনেটে 'পেশ' করতে হয়।
এটি এই জন্য জরুরি, কারণ এমন একটা ধারণা রয়েছে যে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি যতক্ষণ না পর্যন্ত নিশ্চিত হচ্ছেন যে সেনেট নিরপেক্ষ বিচার আয়োজন করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ইমপিচমেন্টের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে পারেন।
ইমপিচমেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের কী পরিমাণ খরচ হচ্ছে?
যদি সুনির্দিষ্টভাবে খরচের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়, তাহলে এটি বলা কঠিন। এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক রবার্ট মুলারের রাশিয়া সম্পর্কে অনধিকার চর্চার অভিযোগের তদন্তে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার খরচ হয়েছিল। তবে এই প্রক্রিয়া না চালিয়ে কী কী করা যেতো, সেটি আসলে রাজনৈতিক বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল।
নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ডেমোক্রেটরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, ভোটের পদ্ধতির সংস্কার, সর্বনিম্ন মজুরি বাড়ানো, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার আইন পুনর্নবায়নের মত শত শত আইন প্রণয়ন করেছে - কিন্তু এগুলোর মধ্যে খুব কমই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে অনুমোদিত হয়েছে।
সিনিটে প্রেসিডেন্টের বিচার করেন কে?
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সাংবিধানিকভাবে সিনেটের ইমিপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন। বিচারের গঠনতন্ত্র নির্ধারিত হয় বিচার শুরু হওয়ার আগে সেনেটরদের ভোটে।
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রধান বিচারপতির দেয়া রায় ১০০ জনের সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থাৎ বলা যায়, রিপাবলিকানরা যদি একমত হন তাহলে যে কোনো সময় বিচারের রায় এবং বিচার প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে পারবে।
সেনেটেররা কিভাবে ভোট দেন?
প্রশ্ন উঠেছে, সিনেট সদস্যরা কি রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনা করে ভোট দেন, নাকি স্বাধীন বিচারক হিসেবে ভোট দেন? নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক সেনেটরকে নিজের বিবেকের দ্বারা চালিত হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তিনি কোন পক্ষে ভোট দেবেন। এরই মধ্যে কয়েকজন রিপাবলিকান ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা প্রেসিডেন্টকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যই ভোট দেবেন।
আবার অনেক ডেমোক্রেট দলীয় সদস্য মনে করেন যে এখন পর্যন্ত পাওয়া সব প্রমাণ সাপেক্ষে প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্ব থেকে অপসারিত হতে পারেন। তবে এ ধরনের সদস্যদের সংখ্যা হাতে গোণা। তাই সিনেটে সংখ্রাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান সদস্যরা ট্রাম্পের পক্ষেই ভোট দেবেন। ফলে তার ক্ষমতা ছাড়ার তেমন কোনো সম্ভবনা নেই বললেই চলে। আর এই অভিশংসনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলে সেটা সময়ই বলে দেবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা