২০১৯ সালে খ্যাতিমান যাদের হারালাম!

- ২-জানুয়ারী-২০২০ ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
২০১৯ সাল বিদায় নিচ্ছে আজ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সবাই। পুরানো বছরের সবকিছু ভুলে যেতে চায় সবাই। কিন্তু কিছু স্মৃতি থাকে যা কখনো ভুলে থাকা সম্ভব নয়। জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়ে যায় সেসব স্মৃতি। ফেলে আসা স্মৃতি আমাদের নাড়া দেয়। ২০১৯ সালে শোবিজ অঙ্গন হারিয়েছে অনেক খ্যাতিমানদের। সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তারা। আর এই ব্যক্তিদের নিয়ে নাগরিক বার্তার আজকের আয়োজন।
এইচ এম এরশাদ: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৯ বছর। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রধানের ঘটনাবহুল জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
এরশাদ রক্তের ক্যান্সার মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন; শেষ দিকে তার ফুসফুসে দেখা দিয়েছিলো সংক্রমণ, কিডনিও কাজ করছিলো না।
তিনি বাংলাদেশের সেনা প্রধান এবং রাষ্ট্রপতি ছিলেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা থাকা অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বয়স এবং অসুস্থতার কারণে ভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে যান। এরশাদ তার জীবদ্দশায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কখনো পরাজয় বরণ করেননি। জন্মস্থান রংপুরে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিলো এবং তার কারণেই ওই অঞ্চলে জাতীয় পার্টি এখনো ভালো অবস্থানে আছে।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ: এ বছর ২০ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ওই দিন রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।
বাংলাদেশের ব্র্যাক আজ সারা বিশ্বে পরিচিত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত এনজিও। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের তৃণমূলের মানুষের সেবা করতে গিয়ে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন ফজলে হাসান আবেদ। মাত্র এক লাখ কর্মী নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর ১১টি দেশের ১২০ মিলিয়ন মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে চলেছে ব্র্যাক। বেসরকারি উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া ফজলে হাসান আবেদ সমাজকর্মের জন্য স্যার উপাধি পাওয়া ছাড়াও বিশ্বের বহু সম্মানিত পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানিত করেছেন।
৮৩ বছর বয়সে চলতি বছর স্যার ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির ইমেরিটাস চেয়ার নির্বাচিত করা হয়। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তাঁর প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।
মঈন উদ্দিন খান বাদল: মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
বাদল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম -৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও তার ভূমিকা ছিল।
সাদেক হোসেন খোকা: অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। খোকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় ৯ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
শাহনাজ রহমতউল্লাহ: দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ ৬৭ বছর বয়সে গত ২৪ মার্চ না ফেরার দেশে চলে যান। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী শাহনাজ রহমতউল্লাহ ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে, এবার বল’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ প্রভৃতি অসংখ্য গান গেয়ে মানুষের মন জয় করেছেন।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল: চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘এই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’-সহ অসংখ্য গানে তার দেয়া সুর দেশের মানুষের বুকে চিরদিন বাজবে। রাষ্ট্রপতির পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালে কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
সুবীর নন্দী: একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী গত ৭ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
চার দশকে ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় দুই হাজার ছবিতে গান করেন। সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের পর তিনিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছবিতে গান গাওয়ার রেকর্ড করেন। এছাড়া ১৯৯৪ সালে সুবীর নন্দী হাউজ অব কমন্সে গান গেয়েছিলেন। তিনি পাঁচবার প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে সুবীর নন্দী বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন।
বাসুদেব ঘোষ: বছরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ হারায় আরেক জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষকে। ২৯ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে মারা যান তিনি।
১৯৯৫ সাল থেকে সুরকার বাসুদেব ঘোষ তার কাজ শুরু করেন। তাঁর সুরে অন্যতম গানের মধ্যে রয়েছে ‘তোমার ওই মনটাকে একটা ধুলোমাখা পথ করে দাও’, ‘তুমি হারিয়ে যাওয়ার সময় আমায় সঙ্গে নিও’, ‘আমি খুঁজে বেড়াই আমার মা’, ‘এই করে কেটে গেল ১২টি বছর’, ‘দেহ মাদল’ প্রভৃতি। তার নিজের গাওয়া ‘বাজারে বাংলার ঢোল’ বেশ সাড়া ফেলেছিল সংগীতাঙ্গনে।
২০১১ সাল থেকে তিনি অনেকটা নিভৃতে নিজ উদ্যোগে কাজ করছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দেশাত্মবোধক গানের অ্যালবাম নিয়ে। এক হাজারটি দেশের গান নিয়ে সাজানো এই অ্যালবামে নাম রেখেছিলেন ‘সূর্যালোকে শাণিত প্রাণের গান’। যাতে এর মধ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন শতাধিক শিল্পী। গান রেকর্ড করেছেন প্রায় ২৫০টি।
টেলি সামাদ: বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ ৬ এপ্রিল মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। ১৯৭৩ সালে "কার বউ" দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। চার দশকে ৬০০ বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা। আমজাদ হোসেন পরিচালিত "নয়নমনি" চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।
কবি আল মাহমুদ: মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ সকলের কাছে পরিচিত কবি আল মাহমুদ নামে। বাংলাদেশের একজন প্রধানতম কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোট গল্প লেখক। উনিশ শতকে আল মাহমুদ সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি হিসেবে আবির্ভূত হন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং কবি জসিম উদ্দিন পুরস্কারে ভূষিত হন। দেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে মারা যান।
রিজিয়া রহমান: চলতি বছরের ১৬ আগস্ট মারা যান রিজিয়া রহমান। স্বাধীনতা উত্তর কালের বাংলাদেশের একজন নারী ঔপন্যাসিক ছিলেন। তার প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ অগ্নি স্বাক্ষরা। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- ঘর ভাঙা ঘর, উত্তর পুরুষ, রক্তের অক্ষর, বং থেকে বাংলা। উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
মমতাজউদদীন আহমেদ: একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমেদ গত ২ জুন মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
১৯৩৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী মমতাজউদদীন ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষা সৈনিক। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
কালিদাস কর্মকার: একুশে পদক বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী কালিদাস কর্মকার গত ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গ্যালারি কসমসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন কালিদাস কর্মকার। চারুকলায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কালিদাস কর্মকার ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক ও ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তার বিচিত্র সব শিল্পকর্ম দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।
কালা আজিজ: কালা আজিজ খ্যাত বাংলা চলচ্চিত্রের সুপরিচিত মুখ অভিনেতা ডায়াবেটিস ও কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের কিছু অংশে পচন ধরে ২৩ নভেম্বর ঢাকার কাওলা এলাকায় নিজের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। কয়েক’শ বাংলা চলচ্চিত্রে ভিলেনের সহযোগী হিসেবে অভিনয় করেছেন আজিজ। কয়েক দশক ধরে তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্র অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে ডিপজল, মিশা সওদাগর, মিজু আহমেদের সঙ্গে বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি।
মাহফুজুর রহমান খান: চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান ৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ৭০ বছর বয়সে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপূর্বে অসুস্থতার ফলে তাকে ২৫ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পেশাদার চিত্রগ্রাহক হিসেবে মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, হুমায়ুন আহমেদ, শিবলি সাদিকদের মত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সব চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক ছিলেন। তার চিত্রগ্রহনে ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমার জন্মভূমি, অভিযান, মহানায়ক, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, ঢাকা ৮৬, অন্তরে অন্তরে, পোকা মাকড়ের ঘর বসতি, আনন্দ অশ্রু, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নন্দিত নরকে, হাজার বছর ধরে, বৃত্তের বাইরে, ঘেটুপুত্র কমলা।
হুমায়ূন সাধু: ২৯ সেপ্টেম্বর হুমায়ুন সাধু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন এবং পরবর্তীতে ২০ অক্টোবর রাতে আবারো তিনি একই রোগে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার মেটাল রহিম মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত ধরে শোবিজে হুমায়ূন সাধুর পথচলা শুরু। অভিনয় দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন, নাটক নির্মাণ করেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
শাহাদত হোসেন সুজন: ১৫ ডিসেম্বর সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর দুপুর পৌনে তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। টিভি ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেনের সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সুজন। সুজন সিসিমপুরে পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন।
পৃথ্বী রাজ: গত ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও জিলাপিতে কাজ করার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তরুণ শিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক পৃথ্বী রাজ।
আহমেদ কায়সার: ২ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর চরখালী গ্রামের নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করেন আহমেদ কায়সার। মৃত্যুকালে এই গীতিকারের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এতো কথা বলে’ জনপ্রিয় এই গানের গীতিকার তিনি।
আনিসুর রহমান আনিস: আনিসুর রহমান আনিস ২৮ এপ্রিল ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাজধানীর টিকাটুলির বাসায় তিনি মারা যান। ১৯৬০ সালে ‘বিষকন্যা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আনিস অভিনীত প্রথম ছবি জিল্লুর রহমান পরিচালিত ‘এই তো জীবন’। তারপর থেকে তিনি অভিনয় করেই গেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি অভিনয় করছেন। ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে গোলাম হোসেন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি মঞ্চে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। আড়াই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
সাইফুল আজম কাশেম: ১১ মার্চ সোমবার সকালে তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান নির্মাতা সাইফুল আজম কাশেম। সাইফুল আজম কাশেম একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। তার পরিচালিত বেশকিছু দর্শকপ্রিয় ছবি হলো- ‘অন্তরালে’, ‘বৌরাণী’, ‘সানাই’, ‘ধনদৌলত’, ‘দুনিয়াদারী’, ‘হালচাল’, ‘ভরসা’, ‘সোহাগ’, ‘ঘরসংসার’, ‘স্বামীর আদেশ’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’।
হাসিবুল ইসলাম মিজান: ১৮ এপ্রিল ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন হাসিবুল ইসলাম মিজান। শাকিব খান, শাবনূর অভিনীত সাড়া জাগানো ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ ছবির পরিচালক তিনি। এরপর এই নির্মাতা কপাল, জন্ম, হৃদয়ে আছো তুমি ছবিগুলো নির্মাণ করেন।
খালিদ হোসেন: নজরুলসংগীতের বরেণ্য শিল্পী, গবেষক, স্বরলিপিকার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতগুরু খালিদ হোসেন ২২ মে ২০১৯, বুধবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। খালিদ হোসেনের গাওয়া নজরুলসংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আরো আছে একটি আধুনিক গানের অ্যালবাম ও ইসলামি গানের ১২টি অ্যালবাম।
নাজমুল হুদা মিন্টু: চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজমুল হুদা মিন্টুও গত ২ জুন মারা গেছেন। ‘সূর্য ওঠার আগে’, ‘চৌধুরী বাড়ী’, ‘ডাক পিয়ন’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘দিনের পর দিন’, ‘সংঘর্ষ’, ‘মধুমালতি’, ‘ঘরে বাইরে’সহ বেশ কিছু সিনেমা নির্মাণ করেন তিনি।
খলিলুর রহমান বাবর: চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক খলিলুর রহমান বাবর মারা যান ২৬ আগস্ট। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ‘বাংলার মুখ’, ‘রংবাজ’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মাঝে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।