সবার চেষ্টাতেই ভোট গ্রহণযোগ্য হতে পারে

  • ১৪-জানুয়ারী-২০২০ ০৩:৫৮ অপরাহ্ন
Ads

:: ড. কাজী এরতেজা হাসান ::

ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নানা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন। আশা করা যায় এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, নির্বাচন কেউ যাতে বিতর্কিত করতে না পারে সরকার এ ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বরাবরই প্রতিটি নির্বাচন, সে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে পৌরনির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের পক্ষে নিজের শক্ত অবস্থান তুলে ধরছেন। স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্যে তিনি তার গোটা রাজনৈতিক জীবনে লড়াই চালিয়ে এসেছেন। দেশের গণতন্ত্রকে শক্তভিত্তি দিতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীরভাবেই উপলব্ধি করে থাকেন। এবং নির্বাচন কমিশন বিতর্কের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিক, সেটাও তিনি প্রত্যাশা করেন। আমরা বিগত দিনগুলোতে দেখেছি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে প্রতিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে অবাধ ও নিরপেক্ষ হিসেবে। কোথাও সামান্য গোলযোগ হলেও নির্বাচনকে ভ-ুল করতে পারেনি। শেখ হাসিনার সরকার জনগণের রায়েই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আর তাই বিশ্বের বুকে জ্বলজ্বলে প্রমাণ তুলে ধরতে চেয়েছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের নজির। এতে সফলকামও হয়েছে। 

আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকার একাই তার সৎ মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরলে হবে না। বিরোধী পক্ষকেও এ ক্ষেত্রে সৎ মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরতে হবে। লক্ষ্যযোগ্য হলো, বিএনপির এক মেয়র প্রার্থী নির্বাচন প্রচারণা চালানোর সময় তার কর্মীবাহিনী বিপক্ষের মেয়র প্রার্থী তথা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে। মনে হচ্ছে, এখুনি ভোটের মাঠ জোরজবরদস্তি করে দখলে রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী। এতে যে হিতে বিপরীত হতে পারে তা বোধকরি বিএনপির মেয়র প্রার্থীর জানা নেই। বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন আগেভাগে ভোটের মাঠ ছেড়ে না যান। ভোটাররাই হচ্ছেন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আসল নিয়ামক। তারাই নির্ধারণ করবেন কে জিতবেন, আর কে পরাজিত হবেন। ফলে এখুনি অতি-উগ্র মনোভাব না দেখিয়ে বিপক্ষের প্রার্থীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন না করে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করতে হবে। এতে ভালো ফল দিলেও দিতে পারে। বিএনপির সমস্যা হলো- একটি অবাধ ও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনকেও বিতর্কের জালে মুড়ে দিতে চায়। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো নিয়ে তাদের এমনি মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। তারা নির্বাচনে জিতলে কোনো জালভোট পড়েনি বলে উচ্চকণ্ঠ, কিন্তু হেরে গেলেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্কমূলক কথা। এই ধরনের অবস্থান থেকে বিএনপিকে এখনি বের হয়ে আসাটা উচিত বলে আমরা মনে করি। 

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত সোমবার গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। কমিশনের দায়িত্ব অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে হারলে সরকারের পরাজয় হবে না।’ এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান। পরিশেষে আমাদের বলার হলো, এক পক্ষের চেষ্টায় নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ হবে না।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি পক্ষের উচিত হবে ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে নির্বাচন করা। ভালো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার ভূমিকা রাখতে হবে। আর একটি কথা, নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনই সর্বেসর্বা। তারাই সব। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অনুরোধ করব-সব মহলকে নিয়েই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টায় যেন কোনো কমতি না থাকে। তারা ইতোমধ্যে নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা দেখিয়েছেন। তাদের বুদ্ধিদীপ্ত কর্মকা-েই প্রহসনমূলক কোনো নির্বাচন না হয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে। আশা করি, তার ধারাবাহিকতা থাকবে আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও।

Ads
Ads