ভোটাভুটি পিছিয়ে দেওয়ায় অভিনন্দন নির্বাচন কমিশনকে

- ১৯-জানুয়ারী-২০২০ ০৪:৫৮ অপরাহ্ন
:: ড. কাজী এরতেজা হাসান ::
নির্বাচন কমিশন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ জানুয়ারির পরিবর্তে ১ ফেব্রুয়ারি পুনঃনির্ধারণ করেছে। গত শনিবারই জরুরি বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সিদ্ধান্তের জন্যে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ।
৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করায় নানা মহল থেকে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশ করা হয়। এর কারণও হলো- ৩০ জানুয়ারি হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা। এদিনে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে স্বাভাবিকভাবেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার উৎসাহে ভাটা পড়বে। এদিনে পূজা সংক্রান্ত নানা ব্যস্ততা থাকবে তাদের। সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি বলে আমরা মনে করি। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কর্তাব্যক্তিদের আগেই ভাবা উচিত ছিল। পূজার দিনে ভোটাভুটি হলে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটাও তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল বলেও আমরা মনে করি। ইতোমধ্যে এ নিয়ে যে নানা কথা উঠেছে, সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে, তাতে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তির গায়ে কিছুটা হলেও আঁচড় লেগেছে। অবশ্য সেই আঁচড় মুছে ফেলতে নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন পিছিয়ে দিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। যারা ৩০ জানুয়ারি ভোটের দিন থাকায় ক্ষোভে ফুসছিলেন তারা এখন শান্ত হয়েছেন। তারাও এখন ভোটের দিন পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাতে পারেন।
অবশ্য ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের দিন ঠিক করার প্রসঙ্গে সিইসি কে এম নূরুল হুদা শনিবার বলেছেন, ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ তারিখ পূজার ঐচ্ছিক ছুটি ছিল। সেখানে ৩০ তারিখ পূজার দিন নেই, সে প্রেক্ষাপটে আমরা ভোটের দিন ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিলাম।’
সিইসি’র বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে অনুভূত হয় যে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার কোনো চিন্তা নির্বাচন কমিশনের ছিল না। কিন্তু এ দেশের কিছু মানুষ ৩০ জানুয়ারির ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে ঘোলা জলে মাছ শিকারে নেমে পড়েন। তারা নির্বাচন কমিশনকে কঠোর ভাষায় সমালোচনায় লিপ্ত হন। এমনকি সরকারকে জড়িয়ে নানা কথা বলার চেষ্টা করেন। ভোট পেছানোর দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং অনশনসহ আদালতে রিটও হয়। আমরা আশা করবো সামান্য ঘটনা থেকেই যারা গঠনমূলক সমালোচনা না করে উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনায় নিজেদের শক্তি ক্ষয় করেন। তারা সঠিক করেন না। উল্লেখ যে, ৩০ জানুয়ারি ছিল এসএসসি পরীক্ষা। এ পরীক্ষা পিছিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে।
এবার আমার বলতে চাই, নির্বাচন কমিশনের এখন উচিত হবে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে মন দেওয়া। কোনো ধরনের গোলযোগ যাতে না হয় তার দিকে কঠোর নজর রাখা। এই নির্বাচন তাদের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে আমরা মনে করি। এই মনে করার হেতু হলো- বিএনপি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জট পাকাতে শুরু করেছে। তারা যে কোনো উপায়ে জয়যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে অসম্ভব কিছু একটা করে বসতে পারে। তারা যাতে সেটি ঘটাতে না পারে তার দিকেই নির্বাচন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে মনোযোগ দিতে হবে। কমিশনকে আরও মনে রাখতে হবে যে বিএনপি নামক দলটি বরাবরই জবরদস্তি করে তাদেরকে বিতর্কে জড়িয়ে নানা প্রপাকা- চালিয়ে আসছে। অবাধ, সুষ্ঠু-নির্বাচন সম্পন্ন করার নজির স্থাপন করলেও সেটা মনপুত হয়নি দলটির। কারণ বর্তমানে জনবিচ্ছিন্ন দলটি একাত্তরের ঘাতক জামায়াত-শিবিরের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে এবং পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা করে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা খ্ইুয়েছে। জনমানুষের কাছে গিয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষা দিতে তারা বড্ড ভয় পায়। ফলে এ যাবত আওয়ামী লীগের প্রতিটি জয়কেও তারা সুনজরে দেখেনি। ভোট-ডাকাতির তথাকথিত অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে বিতর্কে ঠেলে দিয়েছে। অথচ এদেশের মানুষ জানে আওয়ামী লীগ প্রতিটি নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়েই জয়লাভ করেছে। মানুষ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বহু আগেই। জনগণ আর কোনোভাবে কোনো নির্বাচনে এই দলটিকে জয়ীরূপে দেখতে চায় না। এটা যে বিএনপি জানে না তাও অবশ্য নয়।
ভালোভাবেই জানে। ফলে ড. কামাল হোসেন, আব্দুর রব, মান্নার মতো ডেড হর্সে সওয়ার হয়ে তারা দেশের মানুষের চিত্তবিনোদনের খোরাক যোগাচ্ছে। জনগণকে বোকা বানাতে চাইছে। দলটির কতটা পচন ধরেছে বা অস্তিত্ববিলুপ্ত হয়েছে তা কামাল হোসেনের সামনে দলটির জাতীয় নেতাদের নতজানু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকাটাই প্রমাণ করে।
পরিশেষে আমরা বলতে চাই- নির্বাচন কমিশন ভোটাভুটি পিছিয়ে দিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সঠিক কাজটিই করেছে। এখন অবাধ-নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করে তারা নজির স্থাপন করবে। কোনোভাবেই কেউ নির্বাচনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে সে দিকে নজর দিতে হবে। গোলযোগসৃষ্টিকারীদের এখনই শায়েস্তা করে নির্বাচনের দিন শান্তপরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনকে পর্যাপ্ত সাহায্য করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।