ঢাকার ভোটে অবৈধ অস্ত্রের ঝুঁকি, ‘নির্বাচনের দিন সশস্ত্র মহড়ার প্ল্যান বিএনপি-জামায়াতের’

- ২৮-জানুয়ারী-২০২০ ০৭:০৭ অপরাহ্ন
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সচেষ্ট রয়েছে : আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
:: জি এম রফিক ::
দুদিন বাদেই ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন। ইতোমধ্যে সব দলের প্রার্থীরা বেশ জোরেসোরেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টারে-পোস্টারে আর নির্বাচনী গানে ঢাকায় এখন উৎসবের হাওয়া বইছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থী ও তার সর্মথকরা। নির্বাচনী এলাকায় ছোট-বড় মিছিল, মিছিলে শ্লোগান আর ভোটের প্যারোডি কোমলমতিদের মনও ছুঁয়ে গেছে। এরই মধ্যে গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের দিন, আগের ও পরের মোট তিন দিন ঝুঁকি থাকছে অবৈধ অস্ত্রের। এদিকে গত সোমবার জানা গেল, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে ঢাকায় অবৈধ অস্ত্র আনা হচ্ছে। আর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সামনে রেখে বিএনপি বাইরে থেকে ‘অস্ত্রধারী গুণ্ডাদের’ ঢাকায় এনে জড়ো করছে বলে গতকাল মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষে আগামীকাল থেকে ৫ দিন সব ধরনের বৈধ অস্ত্র বহন এবং প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিভিন্নভাবে খবর পাওয়া যাচ্ছে, বহিরাগত অস্ত্রধারীদের ঢাকায় এনে জড়ো করা হচ্ছে। নির্বাচনী কেন্দ্র দখলের জন্য তারা (বিএনপি-জামায়াত) পাঁয়তারা করছে। বাইরের গুণ্ডাদের এনে নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণœ করা, এমনকি নির্বাচনের দিন সশস্ত্র মহড়া দেওয়র বিষয়টি প্লান করে রেখেছে।’ এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির এমন অবস্থানে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তল্লাশি করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চান তাহলে তাদের সে রকম পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কেননা শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কর্তৃত্বপরায়ন অবস্থান থেকে নির্বাচন পরিচালনা করার সব স্বাধীনতা ও সুবিধা দিতে প্রস্তুত।’
নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে দলের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণœ হচ্ছে, এমন খবর কি এখন পর্যন্ত আছে? আমরা অভ্যন্তরীণভাবে বিষয়গুলো দেখছি। এগুলো আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। এটা আপনাদের (সাংবাদিক) বিষয় নয়, এটা আমাদের বিষয়। আমাদের শৃঙ্খলা কমিটি আছে, তারা সেগুলো দেখবে। বিদ্রোহীদের কারণে নির্বাচনী পরিবেশ যখন নষ্ট হচ্ছে না, তখন বিষয়গুলো আমাদের ওপর ছেড়ে দেন।’
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভোরের পাতাকে বলেন ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সচেষ্ট রয়েছে এবং নির্বাচনে কোন রকম ঝুঁকির আশঙ্কার নেই।’ আর ডিসি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস মো. মাসুদুর রহমান পিপিএম ভোরের পাতাকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সকলে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন রকম বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।’
ভোটের দিনসহ আগে-পরে মোট তিনদিন ঝুঁকিতে রয়েছে জানা গেলেও কোন সংস্থা সরাসরি মুখ খুলছে না। তবে গত সোমবার ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য ঢাকায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে। তবে কোন দল বা কারা এটা করছে তা খোলসাভাবে জানা যায়নি। বিশেষ একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে ভীতসন্ত্রস্ত করতেই এটা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ঢাকার দুই করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ৩০ জানুয়ারি ভোর থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের বৈধ অস্ত্রবহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষে জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অধিশাখা-৬ থেকে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) একটি পরিপত্র জারি করা হয়।’ পরিপত্রে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৭(ক)(১) ধারায় দেওয়া ক্ষমতাবলে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধের আদেশ জারি করা হয়। একইসঙ্গে আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়।