রেললাইনের ধারে জন্ম নেয়া শিশুটির প্রাণ বাঁচালেন মহৎ এই পুলিশ কর্মকর্তা

- ৩১-জানুয়ারী-২০২০ ০৪:৫০ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম অফিস
রেললাইনের পাশে জন্ম হয় ফুটফুটে এক শিশুর। নবজাতকটি তখনো জড়িয়ে আছে মায়ের নাড়ির সঙ্গে। সদ্যোজাত শিশুটির আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল কুকুরের দল। নবজাতকের কান্নায় লোকজন জড়ো হলেও তাকে কেউ উদ্ধার করেনি। খবর পেয়ে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন। এক নারীর সহায়তায় কাটা হয় নবজাতকের নাড়ি। এরপর দ্রুত মা ও নবজাতককে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচান তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট রেলওয়ে ডক ইয়ার্ড এলাকায়। প্রচুর রক্তক্ষরণের পর মাকে রক্ত দিলেন এক পুলিশ সদস্য। শিশুটিও প্রাণে বেঁচেছে। বর্তমানে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মা ও নবজাতক।
এসআই আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা টহল ডিউটিতে ছিলাম। হঠাৎ একটা ছেলে এসে বলল, স্যার দেওয়ানহাট রেলওয়ে ডকের পাশে একটা বাচ্চা পড়ে আছে। আমরা দ্রুত গিয়ে দেখতে পাই, রেললাইনের পাশে একটা বাচ্চা নিচু স্বরে কাঁদছে। সারা শরীরে রক্তমাখা ছিল। দূরে একটা মহিলা শুয়ে আছে। তার কাছে গেলাম, দেখলাম মানসিক সমস্যা আছে। নাম বলল-রীনা, বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। রেললাইনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আরেক মহিলা, উনাকে ডাকলাম। উনি কাপড় সংগ্রহ করে শিশুটিকে পেঁচিয়ে নিলেন। রক্তাক্ত মহিলাটিকে এবং তার ছেলেকে আমাদের গাড়িতে তুলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।’
প্রসূতি এখন চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ৫০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছেন। শিশুটিকে একই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতলের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক বলেন, শিশুটির চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে।
আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিউদ্দিন আজিজী শুক্রবার বিকেলে বলেন, মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছে। সময়মতো হাসপাতালে আনা না হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী দুর্বল থাকায় তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন চিকিৎসকের বরাতে জানান, সম্ভাব্য ভোর ৫টার দিকে শিশুটির জন্ম হয়েছে। শীতের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে থাকায় তার বুকে ঠাণ্ডা লেগেছে। এজন্য তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় মায়ের শরীর খুবই দুর্বল ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে ডবলমুরিং থানার এএসআই মেহেদি তাকে রক্ত দিয়েছেন। এছাড়া ওষুধ-ইনজেকশসহ আনুষাঙ্গিক খরচও ডবলমুরিং থানা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলেছেন, শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে। মাকে আবারও রক্ত দেওয়া হবে। তাদের বাঁচানোর জন্য আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে সবই করব। হাসপাতালে যদি পাঁচ-ছয় দিন রাখতে হয় সেই খরচও আমরা বহন করব।’
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন বলেন, ‘শিশুটি সুস্থ হওয়ার পর আমরা আদালতের শরণাপন্ন হব। এর আগ পর্যন্ত যত সাপোর্ট দরকার, সব আমরা দিচ্ছি। যেহেতু মা মানসিকভাবে সুস্থ নন, বাবা কে সেটা জানি না, আমরা আদালতের কাছে এই ব্যাপারে পরামর্শ চাইব যে, বাচ্চাটার অভিভাবকত্ব কে নেবে? আদালত যে সিদ্ধান্ত দেন, সেই অনুযায়ী কাজ করব।’
এসআই আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যখন বাচ্চাটিকে উদ্ধারের জন্য যাই, পাঁচ-ছয়টা কুকুর আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। কিছু সময় পেলে হয়ত শিশুটি কুকুরের খাবারে পরিণত হত। কারণ, এলাকাটা অনেকটা নির্জন। এত ফুটফুটে একটা বাচ্চা, আল্লাহর রহমতে তার প্রাণ যখন বাঁচাতে পেরেছি, আদালত যদি সিদ্ধান্ত দেন, আমি নিজেই নিয়ে যাব। আমার এক ছেলে, এক মেয়ে, তাদের সঙ্গে বড় হবে। ইতোমধ্যে ২০-৩০ জন নেবার জন্য থানায় এবং হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন। আমরা বলেছি, আদালতে যেতে।’
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং অঞ্চল) সীমা চাকমা বলেন, শিশুটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে হওয়ায় কোথাও বেশি ক্ষণ থাকতে চান না। কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। ফুটপাতে থাকলে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এ কারণে আপাতত বেশ কিছুদিন হাসপাতালে রাখা হবে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান। জন্মদাত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সামনে তার সদ্যোজাত সন্তান নিয়ে টানাটানি করছিল কুকুর। পুলিশ কুকুরের কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার প্রাণ বাঁচিয়েছিল।