মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশনের মাত্রা ক্ষতিকর নয়, দাবি বিটিআরসির

- ১৭-ফেব্রুয়ারী-২০২০ ০১:২৪ অপরাহ্ন
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
দেশের মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণের (রেডিয়েশন) মাত্রায় মানবশরীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিক্ষর কিছু পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দেশের মোবাইল টাওয়ারের নির্গত বিকিরণ আন্তর্জাতিক ও বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের অনেক নিচে রয়েছে বলে ভাষ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ শীর্ষক এক আলোচনায় বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হাসান একথা জানান।
গতবছরের ২৫ এপ্রিল একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ মোবাইল টাওয়ারের নিঃসৃত বিকিরণ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা করতে বলেছিল। চার মাসের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে বিটিআরসিকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় তার থেকে কী পরিমাণ বিকিরণ শরীর গ্রহণ করছে (স্পেসিফিক অ্যাবসরপশন রেট বা এসএআর মান) তা নির্ণয় করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিল হাইকোর্ট।
আমিনুল হাসান বলেন, ‘উচ্চ আদালত আমাদেরকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। আমরা খুব দ্রুতই আদালতের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের অনেকগুলো স্থানে মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন জরিপ সম্পন্ন করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফল অত্যন্ত সন্তোষজনক পাওয়া গেছে, যা আমরা নিয়মিতভাবে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। ভবিষ্যতে আরও উন্নত সেবা পেতে চাইলে আরও বেশি মোবাইলসাইট স্থাপনের বিকল্প নেই। টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি আছে, তবে এটা ভিত্তিহীন।’
বিটিআরসির মহাপরিচালক (স্পেকটাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল আলম জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিটিআরসি যে জরিপ চালিয়েছে সেখানে টাওয়ারের রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক ও বিটিআরসির বেঁধে দেয়া মানদণ্ডের অনেক নিচে আছে। তাই এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
আয়োনাইজিং এবং নন-আয়োনাইজিং দুই প্রকারের রেডিয়েশনের বিষয় তুলে ধরে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের উপপরিচালক ড. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যেমন পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্স-রে। এগুলো শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের শক্তি খুব কম, ফলে এতে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।’
জরিপে দেশের মোবাইল টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘জরিপ করতে গিয়ে আমরা কয়েকটি টাওয়ারের ওপরে পাখির বাসা দেখেছি। পাখিরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছে এবং বংশ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। অনেক ভবনের ছাদে বাগান করা হয়েছে এবং তাতে খুব ভালো সবজির ফলন হচ্ছে। আমরা আশা করি এই টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হবে।’
মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের শিক্ষক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘জরিপ অব্যাহত রাখা এবং জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর করতে বিটিআরসিকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এসময় তিনি চিকিৎসকের মধ্যে কারো কারো রেডিয়েশন নিয়ে মনগড়া বক্তব্যের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক নয়। বরং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এক্স-রে বা অন্যান্য পরীক্ষায় যে রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় সেটা ক্ষতিকর। আর এ বিষয়ে তাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার।’
মোবাইল নেটওয়ার্কে ফাইভ-জি এলে অনেক বেশি মোবাইল সাইটের প্রয়োজন হবে উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, ‘সামনে যখন ফাইভ-জি আসবে তখন আমাদের অনেক বেশি সাইটের প্রয়োজন হবে। তাই শুধু শুধু আতংকিত হয়ে প্রযুক্তিকে রুদ্ধ করার কোনো যুক্তি নেই। তাহলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব।’
বিটিআরসির উদ্যোগে ও এমটবের আয়োজনে আলোচনা সভায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও মোবাইল শিল্প খাতের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।