যুবককে অপহরণের পর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন, ৪ জন আটক

  • ২২-ফেব্রুয়ারী-২০২০ ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ
Ads

:: নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ::

নরসিংদিতে যুবক রাসেল হাসানকে অপহরণের পর দশ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত এক নারীসহ অপহরণকারি চক্রের চারজনকে আটক করেছে র‌্যাব। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নরসিংদি জেলা সদর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হচ্ছে- রাসেল হাসানের স্ত্রী মারিয়া আক্তার মন্টি, মন্টির সাবেক স্বামী অভিত মিয়া, মন্টির বাবা বাদল মিয়া ও বড় ভাই পাপ্পু মিয়া। এরা প্রত্যেকেই নরসিংদি সদর এলাকার বাসিন্দা। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব-১১ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ সিনিয়র সহকারি পরিচালক আলেপ উদ্দিন জানান,  আটককৃতরা সংঘবদ্ধ অপহরণকারি চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন এলাকার বিত্তবান ব্যক্তিদের কৌশলে অপহরণের পর শারীরিক নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ বাবদ মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে। রাসেলের স্ত্রী সুন্দরি নারী মন্টি ইতিপর্বে আরো চার পাঁচটি বিয়ে করে ওই স্বামীদেরও একইভাবে নির্যাতন ও জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে র‌্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। রাসলের সাথে পারিরারিক বিরোধের জের ধরেই স্ত্রী মন্টি, শ্বশুর ও স্ত্রীর বড় ভাইয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ আদায় করতে রাসেলকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। মূলত সৌদি প্রবাসী রাসেলের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই মন্টি তাকে বিয়ে করে। 

সংবাদ সম্মেলনে আলেপ উদ্দিন আরো জানান, একই উদ্দেশ্যে গত ২৮ ডিসেম্বর ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণকারি চক্রের সাত আটজন ব্যক্তি রাসেলকে নরসিংদি আদালতের সামনে থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে রাসেলকে তারা অচেতন করে একটি ফ্ল্যাট বাসায় নিয়ে আটককৃতরাসহ অপহরণকারি সদস্যরা দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে শারীরিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে রাসেলের পরিবারের সাথে দুই লাখ টাকা দফরফা হলে বিকাশের মাধ্যমে ষাট হাজার টাকা আদায় করে অপহরণকারিরা। অবশিষ্ট টাকা আদায় করতে পরদিন ২৯ ডিসেম্বর তারা রাসেলকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে বের হয়। মাঝপথে রাসেল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বললে তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। এসময় রাসেল ডাকাত বলে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অপহরণকারিরা তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে অপহরণকারিরা রাসেলকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করে এবং মামলা না করতে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। কিছুদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে রাসেল নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে গিয়ে অপহরনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব চারজনকে আটক করে।

নির্যাতিত রাসেল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, তােেক নির্যাতনের লোমহর্ষক ভিডিও ধারণ করে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে টাকা আদায় করে নেয় অপহরণকারী চক্র। এই ভিডিওচিত্র দেখে তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। রাসেল গণমাধ্যমের কাছে তাকে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অপহরণকারি চক্রের সদস্যদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন সরকারের কাছে। 

রাসেল আরো জানান, ২০১৮ সালে নরসিংদি জেলা সদরের সাটিরপাড়া এলাকায় চাচাতো ভাইয়ের টেইলারের দোকান থেকে সুন্দরি তরুণি মারিয়া আক্তার মন্টির সাথে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ছয় মাস পর সৌদি আরবের ভিসা পেয়ে সেখানে যাবার আঠারো দিন আগে আদালতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। পরে রাসেল সৌদি আরবে চলে গেলে মন্টির ভাইকে বিদেশে পাঠানো বাবদ তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মন্টির পরিবার। দুই বছর পর দেশে ফিরে এলে পুনরায় টাকা দাবি করে নানাভাবে মানসিক চাপসহ মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়েও তাকে হয়রানি করে মন্টি ও তার পরিবার। স্ত্রী মন্টির দায়ের করা ধর্ষণের মামরায় তেরোদিন কারাবাস যাপন করে জামিনে বের হয়ে এলে মামলা মীমাংসার কথা বলে মন্টির বড় ভাই পাপ্পু মিয়া গত ২৮ ডিসেম্বর তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে শারীরিক নির্যাতন চালায়। 

এদিকে আটককৃতদের বিরুদ্ধে নরসিংদি থানায় মামলার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে র‌্যাবের কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন জানান,  এই অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সদস্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

Ads
Ads