গোপনে কালী ও শিব লিঙ্গের পূজা করতেন পাপিয়া

  • ২৫-ফেব্রুয়ারী-২০২০ ০৪:৩৪ অপরাহ্ন
Ads

:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::

সুন্দরি তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জাল নোট সরবরাহ, অর্থ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ এখন ‘টক অব কান্ট্রি’।

পাপিয়া ও তার স্বামী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমনসহ চারজনকে তিন মামলায় ৫ দিন করে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। অনেক প্রভাবশালীর নাম বলছে পাপিয়া।

প্রশাসনের সুত্র জানিয়েছে, পাপিয়া মুসলিম ধর্মের অনুসারী হলেও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল কালী মন্দিরে। এর বাইরেও তিনি শিব লিঙ্গের পূজা করতেন। গ্রেফতারের পর দেখা যায়, পাপিয়ার এক হাতে কাবার ছবি, অন্য হাতে মন্দিরের ছবি আঁকা রয়েছে।

এছাড়াও তার সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাদেরও নাম বলছেন। ফলে কারা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, কারা বিভিন্ন কমিটিতে বড় পদ পাইয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছেন এবং কারা পাপিয়ার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন এর সব তথ্য এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এই এলিট ফোর্সের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাপিয়ার মোবাইল ফোন অশ্লীল ভিডিওতে ঠাসা। এসব ভিডিওতে উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে বিভিন্ন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী ছাড়াও আমলা ও বেশকিছু রাজনৈতিক নেতার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি রয়েছে। এরইমধ্যে কিছু ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক তোলপাড়।

জিজ্ঞাসাবাদে রাজনীতিতে উত্থানের নিয়ামক হিসেবে দুজন প্রভাবশালী নেত্রীর নাম বলেছেন পাপিয়া। পরবর্তীতে তারাও নিয়মিতভাবে পাপিয়ার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। তাদের একজন তার ব্যবসায়িক পার্টনারও। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের জন্য সুন্দরী তরুণী সরবরাহ করতে পাপিয়ার সহায়তা চাইতেন অনেকে। সেখানেই ওই প্রভাবশালীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ধারণ করে রাখতেন তিনি। পরবর্তীতে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করতেন তিনি। 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাপিয়ার উত্থানের পিছনে কাদের ভূমিকা ছিল- কারা পাপিয়া গংদের কাছ থেকে নিয়মিত সুবিধা নিতেন তাদের প্রত্যেকের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকটি তথ্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। সে যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে। 

উল্লেখ্য, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় দেশত্যাগের সময় শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিমানবন্দর থেকে তিন সহযোগীসহ নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের এই সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন থেকে চার নারীকে আটক করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কাজ করিয়ে আসছিলেন পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন।

অসহায় সুন্দরী নারীদেরকে নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা করতেন শামীমা নুর পাপিয়া। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। রাজধানীর গুলশানের অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে সবসময় বুকড করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন শামিমা নূর পাপিয়া। যিনি হোটেলটির বারে বিলবাবদ প্রতিদিন পরিশোধ করতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি ভাড়া নিতেন পাপিয়া। গত তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯ তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায় ৩ মাসে হোটেল বিল প্রায় ৩ কোটি টাকা।

তার সাথে গ্রেফতার হওয়া তিন সহযোগী হলো- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮) ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত পিএস শেখ তায়্যিবা (২২) ও সাবিক্ষর খন্দকার (২৯)। 

তাকে নিয়ে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ও নরসিংদীর বাসায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। ফার্মগেট এলাকায় ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডে রওশন’স ডমিরো রিলিভো নামক বিলাসবহুল ভবনে  তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করে র‌্যাব সদস্যরা।

এছাড়াও প্রাথমিক তদন্তে ফার্মগেটে পাপিয়ার ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

Ads
Ads