রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস, সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ!

  • ২৭-ফেব্রুয়ারী-২০২০ ০১:৪২ অপরাহ্ন
Ads

উৎপল দাস 

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সম্মেলনকে ঘিরে বর্তমান নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। গণভবন এবং রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভোরের পাতার সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সর্বেোচ্চ ফোরামের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষপদের  একটিতে নতুন মুখ আসতে পারে। এ বিষয়ে কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সিটি মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের ওপরই আস্থা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কাউকে বেছে নেয়ার আভাস দিয়েছেন। 

সূত্র ভোরের পাতাকে আরো জানিয়েছে, বর্তমানে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি জামায়াতের সঙ্গে গোপন সখ্যতার একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে জমা পড়েছে। উল্লেখ্য, ডাবলু সরকার দুই বছর আগে রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমির এবং শতাধিক নাশকতা মামলার আসামি আতাউর রহমানের মৃত্যুর পর নামাজে জানাজায় তার পক্ষে গুণকর্তীন করেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। সেই ভিডিও ক্লিপটিও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের সাথে জমা দেয়া হয়েছে। 

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ডাবলু সরকারের পিতা আব্দুর রশিদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। রাজশাহীর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আব্দুর রশিদকে কুখ্যাত রাজাকার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। শুধু ডাবলু সরকারই নয়, তার পরিবারের সবার বিরুদ্ধেই রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক বনে যাওয়ার। 

ডাবলু সরকার ২০১৪ সালে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পরই বিস্তার ঘটে তার পরিবারের সদস্যদের রমরমা অপরাধ বাণিজ্যের। দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজিতেও তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো রাজশাহী। এখন তারা শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক!
এমনিক ডাবলু সরকারের বাহিনীর দখল ও অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও।  রাজশাহী আওয়ামী লীগের ‘বিশিষ্ট কর্মী’ শাহজাহান মামা তার পৈত্রিক ভিটা রক্ষা করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে নালিশ দিয়ে। 

এই আওয়ামী লীগ নেতার দখল থেকে রক্ষা পেত সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে আবেদন পাঠিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। বাড়ির পেছনের ছোট একটু জমি কিনে রাজশাহীর পূঁথিঘর লাইব্রেরীর মালিক শক্তিভূতির বাড়ী নামমাত্র মূল্যে ভাগ্নে মীর ইশতিয়াক আহমেদ লেমনের   স্ত্রী ফারজানা ইয়াসমিন ও আরিফুল ইসলাম সম্রাটে সাথে  যৌথ মালিকানায় রেজিস্ট্রি করে নেন ডাবলু সরকার।

ডাবলু সরকারের বড় দুই ভাই আব্দুল হামিদ সরকার টেকন ও সাবু সরকার জিয়াউর রহমানের শাসনামলে চোরাচালানে জড়িয়ে যান। চোরাচালান পেশার সমালোচনা করায় হোটেল ব্যবসায়ী গৌতম ঘোষকে (১৮) আলুপট্টি মোড়েই প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই টেকন সাবু শহরের প্রকাশ্য খুনি হিসেবেও পরিচিত বলে স্থানীয়রা জানায়।  

নগরীর কুমারপাড়ায় সখিনা বোডিং এর জায়গা দখল নিতে সাভারের হাসিনা দৌলাকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ডাবলু, টেকন আর সাবু। পরে নামমাত্র মূল্যে তিনি তা তাদের কাছে বিক্রি করেন। সেই জমিতেই হচ্ছে ১৬ তলা উচু সরকার টাওয়ার। শিবু দায়িনি, পরিধেয় টেইলার্সের খোকন, রাজশাহী বেতারের বেহালা বাধক রঘুনাথ দাস, সুগারমিলের এক কর্মচারী, ডাবলু সরকারের পাশের বাড়ীর সংখ্যালঘু মাছচাষী পাঁচন সরকার, আইনজীবী কুনাল সরকার, রঘুনাথ, শান্তি ঘোষ, শম্ভু ও রিতা দাসসহ আরো অনেক পরিবার এই দখলবাজদের হাতে হারিয়েছেন বসত ভিটাসহ বহু সম্পত্তি। 

এ অবস্থায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক ডাকলু সরকার আর থাকছেন না, এটা নিশ্চিতভাবেই তারা ধরে নিয়েছে। 

 

Ads
Ads