‘হাওর’ ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের তোড়জোড়

- ৪-মার্চ-২০২০ ০১:২৪ অপরাহ্ন
:: ভোরের পাতা ডেস্ক ::
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ‘বলগাজান হাওর’ ভরাট করে সিএনজি ফিলিং স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সরেজমিনে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে এ জলাভূমিতে গত কয়েক দিন ধরে রাতের আঁধারে ট্রাকে করে মাটি এনে ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু অংশ ভরাটও করা হয়েছে। ফলে রাতারাতি জলাশয় ভরাটের এ তৎপরতায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বা সিটি করপোরেশন কর্র্তৃপক্ষ কেউই এ ব্যাপারে কিছু জানে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের পেছনের বিস্তীর্ণ জলাভূমিটি ‘বলগাজান হাওর’ নামে পরিচিত। এটি সিটি করপোরেশনের মোমিনখলা ও ভার্থখলা মৌজায় পড়েছে। এর পূর্ব পাশে হুমায়ুন রশীদ চত্বর ও উত্তরে রেলস্টেশন। আর দক্ষিণে সিলেট শহর বাইপাস সড়ক। সড়কটি সিলেট-ঢাকা হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত। ব্যক্তিমালিকানাধীন এই ভূমিতে দীর্ঘদিন ধরেই পানি জমে আছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নগরীর প্রবেশদ্বারে বাইপাস সড়কের গা-ঘেঁষে গত কয়েক দিন ধরে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে জলাভূমি ভরাট করছেন ব্যবসায়ী মোনায়েম খান বাবুল। তার লোকেরা সন্ধ্যার পরে ট্রাকে করে মাটি এনে ফেলছেন। মাঝেমধ্যে দিনের বেলাও ফেলা হচ্ছে মাটি। এখানে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মিত হলে গোটা নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। এ ছাড়া সেখানে বস্তি ও দোকানঘর নির্মাণ করা হলে এলাকায় মাদকসহ নানা অপরাধপ্রবণতা বাড়বে। পাশাপাশি সিলেটকে পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোনায়েম খান বাবুল বলেন, ‘যে জমি ভরাট করছি তা আমার নিজের জমি। এখানে কোনো হাওর বা জলাশয় নেই। এটি চারাভূমি। দীর্ঘদিন ধরে এটি জলাবদ্ধ থাকায় কোনো কাজে লাগছে না। তাই এখন কাজে লাগানোর জন্য ভরাট করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাটি ভরাট করে এখানে একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন স্থাপন করব। এ ব্যাপারে ২০০৮ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমার ছাড়পত্র নেওয়া আছে।’ এ ছাড়া সেখানে দোকানঘর ও মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি।
স্থাপনা নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়েছেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখনো অনুমতি নেইনি। কারণ পরিকল্পনাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নির্মাণকাজ শুরুর আগে সিটির অনুমতি নেব।’
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসব স্থাপনা ভাঙা পড়তে পারে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোনায়েম খান বাবুল বলেন, ‘পরে কী হবে সেটা নিয়ে এখনই ভাবছি না। যখন যেটা সামনে আসবে তখনই সেটা দেখব।’
জলাশয় ভরাট করে সিএনজি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ইসরাত জাহান পান্না গত সোমবার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি অফিশিয়াল কাজে ঢাকায় আছি। ফেরার পর বিস্তারিত বলতে পারব।’
পরে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পারভেজ আহমদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সিএনজি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের ছাড়পত্র শাখার পরিদর্শক দুদিনের ছুটিতে আছেন। তিনি কর্মস্থলে যোগদানের পর সরেজমিনে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট নগরীকে পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিকল্পিত উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। কেউ অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। এ ব্যাপারে সিটি কর্র্তৃপক্ষ ন্যূনতম ছাড় দেবে না।’