ব্যর্থতার বৃত্তের ছাত্রলীগ, জয়-লেখকের ওপর নাখোশ শেখ হাসিনা!

- ৫-মার্চ-২০২০ ১২:৪৯ অপরাহ্ন
:: উৎপল দাস ::
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবেগ অনুভুতি একটু বেশিই। সেই কারণে গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু গত দুই মাসে সাংগঠনিকভাবে তেমন কিছুই করে দেখাতে না পারায় জয় ও লেখকের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের ওপর যথেষ্টই নাখোশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবন ও আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড সূত্র ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ছাত্রলীগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্বপ্ন দেখেন তার ছিঁটেফোঁটাও বাস্তবায়ন করতে পারেননি আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। প্রতি তিন মাস পর পর আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে নিয়মিত যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়, সেখানেও ছাত্রলীগের বিষয়ে ইতিবাচক কিছু উল্লেখ নেই।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইউনিটে শোভন রাব্বানীর সময় সম্মেলন হওয়ার পরও এখনো সেগুলোতে অদৃশ্য কারণে কমিটি দিতে না পারার ব্যর্থতার দায়ভারও আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্যকেই নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজের কমিটি করতে না পারায় জয় লেখকর ওপর বেজায় নাখোশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, ছাত্রলীগ থেকে বিতর্কিত যাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদের ছাড়াও অন্যান্য বিতর্কিত, বিবাহিত এবং বয়সোত্তীর্ণদের কেন রাখা হয়েছে সে বিষয়েও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জয় ও লেখক।
সর্বশেষ নোয়াখালী ও খুলনায় ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহত হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। এটিও প্রতিবেদনে এসেছে।
গত ২ মাসে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য ওরিয়েন্টেশন লিডারশীপ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটিও তেমনভাবে সফল হয়নি।
সর্বোপরি, ছাত্রলীগে একক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার যে অপচেষ্টা আগের কমিটিতেও ছিল, সে পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। কেননা তারা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার পরও কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা ভিত্তিক দায়িত্ব আজও বুঝিয়ে দিতে পারেননি। এ কারণে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারাই জয় লেখকের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
এদিকে, ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াস খ্যাত ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা।
এছাড়া, সারাদেশে ছাত্রলীগের বিভিন্ন জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও জানা গেছে। দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পাবার ২ মাসের মধ্যে মাত্র চাঁদপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ১০ থেকে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি ভাঙার মনোভাবই দেখা যাচ্ছে না জয় লেখকের মধ্যে।
এদিকে, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির ওপর বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আবারও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সাবেক এক নেতা। এই নেতার শ্যালিকার সঙ্গে বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের বিশেষ সম্পর্ক থাকায়, পুরো ছাত্রলীগের ওপরই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গণভবনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করে জানিয়েছে, গত দুই মাসে আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪ জন আওয়ামী লীগের নেতা নালিশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এসব অভিযোগ পেয়ে যথেষ্টই নাখোশ হয়েছেন তিনি।